তরুণকান্তি দাস: চায়ের বর্জ্যে কি চুমুক দিচ্ছেন আপনি? সুন্দর প্যাকেটে মোড়া যে চা নিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন, তার সঙ্গেই মিশে রয়েছে সেই বর্জ্য যা আসলে ফেলে দেওয়ার কথা ছিল কারখানা থেকেই। সাম্প্রতিক অভিযানে একাধিক কারখানায় বিষয়টি ধরা পড়ার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টি বোর্ড। নেওয়া হয়েছে কড়া ব্যবস্থা। স্মল টি গ্রোয়ার অ্যাসোসিয়েশনও সংগঠনের সদস্যদের সতর্ক করে দিয়েছে, যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। টি বোর্ড এ নিয়ে আরও কড়া অবস্থান নিতে চলেছে। আগামী বছরের শুরু থেকেই কোনও কারখানায় এই ধরনের অনিয়ম ধরা পড়লে লাইসেন্স বাতিলের পথেই হাঁটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে খবর বোর্ড সূত্রে।
বাগান থেকে তোলার পর তা ঝাড়াই বাছাইয়ের সময় কিছু খারাপ পাতা বের হয়। কারখানায় প্রক্রিয়াকরণের সময় কিছু বর্জ্য বের হওয়াটাই স্বাভাবিক। আবার প্রক্রিয়াকরণের পরও বেশ কিছু পণ্য বাতিল করতে হয় নির্দিষ্ট গুণমান বজায় না রাখতে পারলে। নিয়ম হল, কারখানাগুলিকে মোট উৎপাদনের দুই শতাংশ বাতিল বা বর্জ্য হিসাবে দেখাতেই হবে। খাতায় কলমে তো বটেই, বাস্তবে তার অস্তিত্ব থাকতে হবে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি কারখানা এই নিয়ম মানছে না। অথচ, এই বর্জ্য বা বাতিল চা পাতা ইনস্ট্যান্ট টি-র সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে। বাতিল চায়ের জন্য ক্ষতি কমাতে বোর্ড তা বাইরে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু তা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই করতে হয়। সেই নিয়মকানুন মানার ঘেরাটোপে না থেকে সরাসরি চায়ে তা মিশিয়ে দিচ্ছে অনেকেই। সম্প্রতি একাধিক কারখানায় বিষয়টি ধরা পড়ে সরেজমিন তদন্তে এবং নমুনা সমীক্ষায়। ভারতে তিন লাখ ক্ষুদ্র চা বাগান আছে। অসম ও উত্তরবঙ্গে রয়েছে প্রচুর ক্ষুদ্র চাষি। সেখানে গড়ে উঠছে একের পর এক ছোট কারখানা। এখন এই ধরনের কারখানা গড়তে টি বোর্ড দু’কোটি টাকা পর্যন্ত সহায়তা করছে। কিন্তু কয়েকটি কারখানায় এই ধরনের অনিয়ম উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কাউকে তিন মাস, কাউকে এক মাস সাসপেন্ড করা হয়েছিল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে। এখন চায়ের গুণমানও খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থার (ফ্যাসাই) অধীনে তদারক করা হচ্ছে। তারা এ ক্ষেত্রে অতি কড়া অবস্থান নিয়েছে। একটি টিম গঠন করে মাঝেমধ্যেই কারখানাগুলিতে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা চলছে। শুধু তাই নয়, কারখানার নিজস্ব পরীক্ষাগারে চায়ের রিপোর্ট ছয় মাস অন্তর আপলোড করতে হচ্ছে ওয়েবসাইটে।
তাদের সমীক্ষাতেই দেখা যায়, একাধিক কারখানা বর্জ্য মিশিয়েছে নতুন করে তোলা চা পাতা প্রক্রিয়াকরণের সময়। এখন টি বোর্ড একটি বিশেষ টিম গঠন করেছে। যারা গিয়ে বর্জ্য নষ্ট করে আসছে অনেক ক্ষেত্রে। অথবা তা কোথায়, কীভাবে বিক্রি করা হচ্ছে, তালিকাভুক্ত অনুমোদিত ক্রেতার মাধ্যমে তা বাইরে যাচ্ছে কিনা তাও দেখা হচ্ছে। স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যসোসিয়েশনের কর্তা বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “এই প্রবণতা যদিও কম তবে তা মারাত্মক। আমাদের সংগঠনের সদস্যদের সচেতন করা হয়েছে। কারণ, চটজলদি সামান্য লাভের লোভে সুনাম এবং মানুষের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকি নেওয়ার মানে হয় না। টি বোর্ড বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত কড়া মনোভাব দেখাচ্ছে।” টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জয়দীপ ফুকন বলেছেন, “এখন চায়ের বর্জ্য বা গুণমান বজায় রাখতে না পারার ফলে বাতিল চা বাইরে পাঠানোর অনুমতি রয়েছে বোর্ডের তরফে। তার জন্য বিশেষ গাইডলাইন রয়েছে। সেটা মেনে চললেই হল। তাহলে নিজেদের ক্ষতি হয় না। মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.