Advertisement
Advertisement

Breaking News

Haridevpur

বাড়ির বাইরে ওঁৎ পেতে সাদা পোশাকের পুলিশ! গাড়ি থেকে নামতেই গ্রেপ্তার হরিদেবপুরের যুবককে, কেন?

গ্রেপ্তারির কারণ জানতে ফ্ল্যাশব্যাকে কয়েক বছর পিছিয়ে যেতে হয়।

Haridevpur man arrested for duping wife

প্রতীকী ছবি।

Published by: Paramita Paul
  • Posted:October 12, 2024 4:47 pm
  • Updated:October 12, 2024 4:48 pm  

অর্ণব আইচ: দক্ষিণ কলকাতার প্রাসাদপম বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দুধ সাদা গাড়ি। চারপাশে পুরসভার কাজ চলছে। পুজোয় বেড়াতে বেরনো গুটি কয়েক লোকজন এলোমেলো ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চারচাকা থেকে নেমে আশেপাশের এই দৃশ্যে একবার চোখ বুলিয়ে বাড়ির গেটের ভিতর ঢুকতে যাচ্ছিলেন এক যুবক, আচমকাই পিছন থেকে ডাক, ‘ভিকি’। পিছন ঘুরে তাকাতেই খেলা সাঙ্গ। ওই যুবককে গ্রেপ্তার করল হরিদেবপুর থানার পুলিশ। কিন্তু কেন? তা জানতে হলে ফ্ল্যাশব্যাকে কয়েক বছর পিছিয়ে যেতে হয়। জেনে নিতে হয় কলকাতা পুলিশের ধৈর্য ও নিখুঁত পরিকল্পনার কথা।

দক্ষিণ কলকাতার প্রাসাদপম বাড়ির মালিক স্বামীনাথ জসওয়াল। বাইপাসের কাছে আসবাবপত্রের বিশাল ব্যবসা। দুই ছেলে। ছোট ছেলে ভিকি জসওয়াল পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। দুবাইয়ে চাকরি করতেন। মাঝেমধ্যে কলকাতায় বাড়িতে আসত। এর মাঝেই শিলিগুড়ির মেয়ে জ্যোতি গুপ্তাকে বিয়ে করে ভিকি। প্রথমদিকে সম্পর্কটা ভালোই চলছিল। সময় যত গড়ায় দাম্পত্যে তিক্ততা বাড়ে। দুজনের সন্তানও জন্মায়। কিন্তু ভিকি একের পর এক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন জ্যোতি। শিলিগুড়ির আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ ও খরপোষের মামলা দায়ের করেন। কিন্তু সে মামলায় একবারও আদালতে হাজিরা দেননি ভিকি। যার ফলে কলকাতা হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চে মামলা ঠোকেন জ্যোতি। সেই সূত্র ধরে নভেম্বর মাসে গ্রেপ্তারির পরোয়ানা জারি করে আদালত। কিন্তু ভিকি তো পাঁকাল মাছ! যতবার তাঁকে ধরার চেষ্টা করেছে পুলিশ ততবারই তাদের নাগাল এড়িয়েছে সে। বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করতে আসার ঠিক আগের মুহূর্তে সাদা গাড়ি চেপে পালায় সে। প্রথমে ভুটান সীমান্তে জয়গাঁ তার পর উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকায় গাঢাকা দিয়েছিল ভিকি। সেখান থেকে অসম হয়ে সিঙ্গাপুর, পরে দুবাই পালায় সে।

Advertisement

এদিকে পলাতক ভিকির খোঁজে হরিদেবপুরে বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। দরজা খুলতে আরও চমক অপেক্ষা করেছিল তাদের জন্য। দরজা খোলেন সিঁদুর পরা এক মহিলা, জানান, তিনি ভিকির স্ত্রী। অভিযুক্তর বাবা স্বামীনাথ জানান, রেজিস্ট্রি করেনি তবে হিন্দু রীতি মেনে সিঁদুর পরিয়ে উত্তরপ্রদেশের মেয়েটিকে বিয়ে করেছে তাঁর ছেলে। এর পরই ওই বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। দেখে, বাড়ির আনাচে-কানাচে রয়েছে ৫০টি সিসিটিভি। বাড়ির বাইরের সমস্ত গতিবিধি ট্র্যাক হয় সেখানে। এর পরই রাজ্যজুড়ে নিজেদের ‘খোচর’ অর্থাৎ সোর্স ‘অ্যাক্টিভেট’ করে দেয় কলকাতা পুলিশ। কিন্তু আশার আলো দেখাতে পারেনি কেউ। হাল প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। এমন সময় মহানবমীর দিন আশার ক্ষীণ আলো দেখতে প্রায় তাঁরা। খবর আসে, নবরাত্রিতে নতুন বউয়ের সঙ্গে দেখা করতে কলকাতায় আসছে ভিকি।

এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করেননি তদন্তকারী। জয়দেব বৈরাগীর তত্ত্বাবধানে হরিদেবপুর থানার ওসি সুভাষ অধিকারীর নেতৃত্বে ৮-১০ জনের টিম তৈরি হয়ে যায়। কালীতলার প্রাসাদের মতো বাড়ির বাইরে শুরু হয় নজরদারি। কেউ পুরসভার কর্মী সেজে সিমেন্টের বিশার পাইপের মধ্যে আশ্রয় নেয় কেউ। তো কেউ আবার পুরসভার নিরাপত্তাকর্মী সেজে পাহারা দিতে শুরু করে। আর কয়েকজন নতুন পোশাকে ঠাকুর দর্শনে অজুহাতে বাড়ির চারপাশে চক্কর কাটতে শুরু করে। এর পরই আশে মাহেন্দ্রক্ষণ!

ঘড়ির কাটায় শুক্রবার বেলা ১২টা। বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় দুধ সাদা গাড়ি। সেখান থেকে ভিকি নামতেই গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। দ্রুতই আদালতে তোলা হবে অভিযুক্ত ভিকিকে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement