স্টাফ রিপোর্টার: একটা বাক্যে অক্ষরগুলো সোজাভাবে লিখতে পারছে না। শেষের অংশটা নিচের দিকে ঝুলে পড়ছে। কারও লেখা জড়ানো। শব্দ স্পষ্ট নয়। এমনটা ছিল না আগে। হাতের লেখা বিশারদ তা খতিয়ে দেখেই বুঝতে পারেন, বিপদ শিয়রে। কিম্ভূত হাতের লেখার মালিকরা যে কোনও মুহূর্তে আত্মহত্যা (Suicide) করতে পারে। তড়িঘড়ি শুরু হয় কাউন্সেলিং (Counselling)। এভাবে করোনার দু’বছরে স্রেফ হাতের লেখা দেখে বাঁচানো গিয়েছে ৪৬ জনকে।
কলকাতা ইনস্টিটিউট অফ গ্র্যাফোলজির কর্ণধার মোহন বসু জানিয়েছেন, এই ৪৬ জনের মধ্যে প্রবীণতমর বয়স ৩২। সর্বকনিষ্ঠটি ১৪ বছরের কিশোর। বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে এই তথ্য চমকে দেওয়ার মতো। যে বয়স পড়াশোনা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করার, তখন কেন আত্মহত্যার চিন্তা? মনোবিদরা জানিয়েছেন, অভিভাবকরা অফিস চলে যেতেন। বাচ্চাটি থাকত দাদু-দিদা, কাজের লোকের কাছে। লকডাউনে (Lockdown) সে অভ্যাস ধাক্কা খায়।
ওয়ার্ক ফ্রম হোম। মা-বাবা সারাদিন বাড়িতে। সন্তানের সঙ্গে নানা কারণে খিটমিট-অশান্তি। হস্তরেখা বিশারদ মোহন বসুর কথায়, ‘‘হাতের লেখা দেখে বুঝতে পারি কিশোর কিশোরীদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলি। ওরা জানায়, মা-বাবা ল্যাপটপ কেড়ে নিচ্ছে। মোবাইল কেড়ে নিচ্ছে। তা থেকেই রাগ।’’ সাইকিয়াট্রিস্টদের (Psychiatrist) পর্যালোচনা, এতদিন সন্তান সারাদিন মোবাইলে গেম খেললেও তা দেখার লোক ছিল না। কিন্তু ওয়ার্ক ফ্রম হোমে অভিভাবকের চোখের সামনে তা হতেই অশান্তি শুরু। মোবাইলে আসক্ত হয়ে যাওয়া খুদে মা-বাবার খবরদারি মেনে নিতে পারছে না।
এমতাবস্থায় খেপে গিয়ে এক কিশোরের মুঠোভর প্যারাসিটামল মুখে পুরে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। শঙ্কিত সে কিশোরের মা-বাবা যোগাযোগ করেন কলকাতা ইনস্টিটিউট অফ গ্র্যাফোলজির দপ্তরে। তারপর? হাতের লেখা চেয়ে পাঠায় ওই প্রতিষ্ঠান। যে কোনও মানুষের হাতের লেখা (Handwriting) স্নায়ুনির্ভর। কোনও উদ্বেগে ব্যক্তির হাতের লেখার উপরে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এদের হাতের লেখা দেখে বোঝা যায়, ওই কিশোর-কিশোরীরা আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়েছে। হস্তরেখা বিশারদ মোহন বসুর বক্তব্য, অবসাদগ্রস্ত মানুষের সাইকো মোটর রিটার্ডেশন হয়। সে সোজাভাবে লিখতে পারেন না। অক্ষরগুলো জড়ানো-প্যাঁচানো হয়ে যায়। এসব দেখেই শুরু হয় কাউন্সেলিং। বাঁচানো গিয়েছে ৪৬ জনের জীবন। যার মধ্যে ছিল বছর বত্রিশের এক যুবকও।
শনিবার কলকাতার প্রেস ক্লাবে উপস্থিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তীর্থঙ্কর দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, কষ্ট রয়েছে বড়দের মনেও। দীর্ঘদিন মনের কষ্ট চেপে রাখা ক্যানসারের (Cancer) সমান। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের আফসোস, ‘‘এখন সবাই সবাইকে হোয়াটসঅ্যাপে সুপ্রভাত পাঠাচ্ছে। কিন্তু কাছে গিয়ে একবার বলছে না, ‘কিছু সমস্যা থাকলে বলো’।’’ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে অমল-সুইসাইড প্রিভেনশন অ্যাওয়ারনেস ‘কমপেনডিয়াম’ নামে এক বই প্রকাশিত হল। আয়োজন করা হয়েছিল একটি আলোচনা সভার। যেখানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, মাধবীলতা মিত্র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.