অর্ণব আইচ: আমির খানের জালিয়াতের জাল কতদূর ছড়ানো? তদন্ত নেমে চক্ষু চড়কগাছ কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) গোয়েন্দাদের। আমির খান গ্রেপ্তার হওয়ার পরও শহরের বুকে চলছে জালিয়াতির কল সেন্টার। অফিস বাইরে থেকে বন্ধ মনে হলেও দুবাই থেকে রিমোটের মাধ্যমে চলছিল সমস্ত কাজকর্ম। শুধু কলকাতা বা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত নয়, বিশ্বের একাধিক জায়গায় জালিয়াতি চালাচ্ছে আমিরের সঙ্গী দুবাইয়ের বাসিন্দা শুভজিৎ শ্রীমণি। আর এই জালিয়াত চক্রের কাছে অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিয়ে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়েছে শহরের একাধিক বাসিন্দা।
গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ীর নিসার খানের বাড়ি থেকে ১৭ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় কলকাতা পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তে নেমে তারা ২৫০টি অ্যাকাউন্টের হদিশ পায়। এর মধ্যে ২৭টি সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্টের খোঁজ মেলে। যেখানে বেশি পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ। সেখানেই রয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এরপরই ব্য়াংক অ্যাকাউন্টের মালিক বেহালার বাসিন্দা সুমা নস্করকে ডেকে পাঠানো হয়। জেরার মুখে তিনি জানান, চাকরি দেওয়ার নাম করে তাঁকে ডেকেছিল আমির ও তাঁর সহযোগীরা। চাকরি না দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত নেয় তারা। বদলে মাসে মাসে সামান্য কিছু টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তারা। এরপর সুমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু তাঁর গতিবিধি, কললিস্ট খতিয়ে দেখে ফের সন্দেহ হয় লালবাজারের গোয়েন্দাদের। দেখা যায়, ফোনে সুমা আমির খানের একাধিক সহযোগীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এরপর তাঁকে তুলে এনে টানা জেরা শুরু করে কলকাতা পুলিশ। তাতেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে হাতানোর টাকার বড় অংশ আসত সুমার কাছে। সেখান থেকে সেই টাকা আবার ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিট কয়েনের অ্যাপে বিনিয়োগ হত। বদলে এক-দেড় শতাংশ কমিশন পেতেন সুমা। যার অর্থ মাসে মাসে অন্তত ৩০-৫০ লক্ষ টাকা হাতে আসত তার। সুমাকে জেরা করে সমিত মণ্ডল নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জানা যায়, আমিরের একাধিক অফিস রয়েছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। তাঁকে জেরা করে সল্টলেকের অফিসের খোঁজ পায় পুলিশ। সেখানে হানা দিতেই চক্ষু ছানাবড়া দুঁদে পুলিশকর্তাদের। দেখা যায়, বাইরে থেকে অফিস বন্ধ। কোনও কর্মী নেই। কিন্তু ভিতরে চলছে কল সেন্টার।
নিজে থেকে চালু-বন্ধ হচ্ছে সমস্ত মেশিন, সার্ভার। স্বয়ংস্ক্রিয়ভাবে কাজ হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ রিমোটের মাধ্যমে আরব থেকে সমস্তটা পরিচালনা করা হচ্ছে। উঠে আসে আমিরের সঙ্গী শুভজিৎ শ্রীমণির নাম। সূত্রের খবর, তাঁর খোঁজ পেতে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হতে পারে কলকাতা পুলিশ।
সল্টলেক যে অফিস থেকে বিপুল পরিমান সিমবক্স, ব্যাংক কিটস পাওয়া যায় সেই অফিস এই অভিযুক্তের। পুলিশ সূত্রে জানা দিয়েছে, শুভজিৎ-আমিররা শুধু গেমিং অ্যাপের মাধ্যমেই জালিয়াতি করেছে এমনটা নয়, ই ওয়ালেটস, পণ্য বিক্রির নামেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে তারা। আর এসব কাজের জন্য ফরেন সার্ভার ব্যবহার করত তারা। ব্যবহার হত সিমবক্স। শুভজিতের সল্টলেকের অফিস থেকে ২ হাজারের বেশি সিমকার্ড উদ্ধার হয়েছে। উল্লেখ্য, বুধবার দুপুরে শুভজিৎ শ্রীমণির বিকে পাল অ্যাভিনিউর বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.