অর্ণব আইচ ও নিরুফা খাতুন: এ যেন আমেরিকা কিংবা ইউরোপের বন্দুকবাজের হামলা। স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে গুলিবর্ষণ আততায়ীর। টানটান উত্তেজনা চারপাশে। আততায়ীকে নিরস্ত্র করতে পুলিশের কালঘাম ছুটছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনার পারদ। শনিবার ভর সন্ধেবেলা কলকাতার একেবারে প্রাণকেন্দ্র পার্ক স্ট্রিটের (Park Street) পরিস্থিতি একেবারে তেমনই। কিড স্ট্রিটে ভারতীয় জাদুঘরের বাইরে, বিধায়কদের আবাসনের বাইরে সিআইএসএফ (CISF)ব্যারাকের গুলিবৃষ্টি, যাকে পুলিশি পরিভাষায় ‘বার্স্ট ফায়ার’ বললেও অত্যুক্তি হয় না। শুধু গুলিচালনাই নয়, আততায়ী সিআইএসএফ জওয়ানকে নিরস্ত্র করতে দু’ ঘণ্টা সময় লাগল পুলিশের। নিজের ব্যারাকে তাণ্ডব দেখিয়ে অবশেষে আত্মসমর্পণ করেছে জওয়ান। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তার হাতে থাকা AK 47 রাইফেলটি।
সন্ধে প্রায় সাড়ে ৬টা। আচমকাই ভারতীয় জাদুঘরের (Indian Museum)পাশে সিআইএসএফ ব্যারাক থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান বাকি জওয়ানরা। দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন। আহতদের উদ্ধার করে এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত্যু হয়েছে সিআইএসএফের এএসআই রঞ্জিত ষড়ঙ্গির। আহত জওয়ানের নাম সুবীর ঘোষ। সামনে থাকা পুলিশের গাড়ির কাচও এলোপাথাড়ি গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায়। প্রায় ২০ রাউন্ড গুলি চলেছে বলে খবর।
আততায়ীকে নিরস্ত্র করতে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে অপারেশন জোরদার করা হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা দল। পৌঁছয় কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল অ্যাকশন ফোর্স এবং সিআইএসএফের স্পেশ্যাল অ্যাকশন ফোর্স (Special Action Force) এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনার (CP) বিনীত গোয়েল। তাঁরা সকলে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ড্রাগন লাইট হাতে নিয়ে ভিতরে ঢোকেন। গোটা এলাকা অন্ধকার করে আততায়ীর খোঁজ শুরু হয়। লক্ষ্য ছিল একটাই, আর একটি গুলিও যেন চালাতে না পারে বন্দুকবাজ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ব্যারাকের ভিতরে ঢুকে পুলিশের স্পেশ্যাল অ্যাকশন ফোর্স ঘোষণা করে, আততায়ী যেন বন্দুক ফেলে আত্মসমর্পণ করে। তাতে পালটা আততায়ী জানায়, পুলিশ যেন অস্ত্র বাইরে রেখে ভিতরে আসে। রীতিমতো স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয় দু’পক্ষের। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পুলিশ ভিতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত বন্দুকবাজকে নিরস্ত্র করে। জানা গিয়েছে, তার নাম অক্ষয় কুমার মিশ্র।
শেষমেশ যখন তাকে পুলিশের গাড়ি করে বের করে লালবাজার (Lalbazar) অর্থাৎ কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেসময় অক্ষয়ের ইস্পাতকঠিন মুখ দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে কয়েক মুহূর্ত আগেও সে এত ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল। কোনও মেজাজ হারিয়ে কিংবা মানসিক সমস্যা থেকে নয়, ঠান্ডা মাথায় এই হামলা চালিয়েছে বলেই মনে হচ্ছিল।
অপারেশন শেষে কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল জানান, সন্ধে সাড়ে ছটা নাগাদ ভারতীয় জাদুঘরে গুলিচালনার খবর পেয়ে তাঁরা চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েই ঘটনাস্থলে যান। এরপর সবরকম নিরাপত্তার সঙ্গে আততায়ীকে নিরস্ত্র করে আটক করা হয়। অন্তত ১৫ রাউন্ড গুলি চলেছে। একজনের মৃত্যু হয়েছে। আরও ২ জন গুরুতর জখম। ডিসি, সেন্ট্রালের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গড়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। কী কারণে অক্ষয় কুমার মিশ্র এমন কাজ করল, তা অজানা। তার মানসিক অবস্থা কেমন, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.