রাহুল চক্রবর্তী: রক্তাল্পতা দূরীকরণে রেশনে ভিটামিন, খনিজ পদার্থযুক্ত চাল দেওয়ার প্রস্তাব পাঠিয়ে রাজ্যকে চিঠি দিল কেন্দ্র। এ ব্যাপারে রাজ্যের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। রাজ্যের মতামতের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী নির্দেশ দেবে কেন্দ্র। কেন্দ্রের খাদ্য মন্ত্রক ‘রাইস ফরটিফিকেশন’ বা ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত চাল প্রদানের একটি পাইলট স্কিম নিয়েছে। দেশের প্রতিটি রাজ্যের খাদ্য দপ্তরে এ ব্যাপারে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যে চিঠিতে কেন্দ্র উল্লেখ করেছে, দেশের বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া রয়েছে, তা দূর করতে গণবণ্টন ব্যবস্থায় রেশনে ভিটামিন ও শরীরের পক্ষে উপকারী খনিজ পদার্থযুক্ত চাল প্রদানের উপর জোর দিয়েছে কেন্দ্র। যে সমস্ত জায়গায় অ্যানিমিয়া বা অপুষ্টি রয়েছে, সেখানে ভিটামিন, আয়রনযুক্ত চাল রেশনে গ্রাহকদের দেওয়ার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব রাজ্যকে পাঠিয়েছে কেন্দ্র। মূলত পিছিয়ে পড়া জেলাকেই চিহ্নিত করতে বলেছে দিল্লি। দেশের সব রাজ্যের একটি করে জেলাতে ‘রাইস ফরটিফিকেশন’-এর এই পাইলট স্কিম চালু করে প্রতিক্রিয়া নিতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পাইলট স্কিম থেকে প্রতিক্রিয়া নিয়ে সারা দেশেই তা চালু করা হবে।
[বর্ধমানের নির্যাতিতা বৃদ্ধার সঙ্গে সেলফি আইসিইউতে, সমাজসেবীদের তাণ্ডব]
তবে, কেন্দ্র এই প্রস্তাবে রাজ্যের কাছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন রেখেছে। জানতে চাওয়া হয়েছে– (১) কোন জেলায় এই স্কিম চালু করা যেতে পারে, (২) কত রেশন গ্রাহক সেখানে রয়েছেন ও তাঁদের অবস্থা, (৩) সেখানে আইসিডিএস-মিড ডে মিল ও রেশনে কত চাল প্রয়োজন হয়, (৪) ওই জেলায় কত রাইস মিল রয়েছে ও মিলের বর্তমান অবস্থা, (৫) সংশ্লিষ্ট জেলায় কী পরিমাণ গোডাউন রয়েছে ইত্যাদি বিষয়। রাজ্য চলতি মাসের মধ্যে কেন্দ্রকে ‘রাইস ফরটিফিকেশন’ নিয়ে মতামত জানাবে বলে এক আধিকারিক জানিয়েছেন। মূলত মা ও শিশুদের শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য এই পাইলট স্কিম বলে মনে করছেন খাদ্য দপ্তরের কর্তারা। কেন্দ্রের প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে, এই স্কিমে রাজ্যে একটি ইউনিট থাকবে এবং একজন বিশেষজ্ঞ নিযুক্ত থাকবেন বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য। দিল্লির কাছে মতামত পাঠানোর আগে রাজ্য বিষয়টি নিয়ে অনেকের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে চাইছে। খাদ্য দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, নারী-শিশু ও সমাজকল্যাণ দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে কোন জেলায় অ্যানিমিয়া আক্রান্তের সংখ্যা কত রয়েছে তার ডেটা তৈরি করা হবে।
[খারাপ আবহাওয়ায় ভেস্তে যেতে পারে পুজোর সমস্ত প্ল্যানিং]
এছাড়া রাইস মিলগুলি এই চাল প্রদান করতে পারবে কি না সে বিষয়টাও দেখা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, পুরনো রাইস মিল এ কাজ করতে পারবে না। এই স্কিমে চাল সরবরাহ করতে প্রয়োজন অত্যাধুনিক রাইস মিল। ফলত কেন্দ্রের কাছে মতামত পাঠানোর আগে রাইস মিলের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে চাইছে রাজ্য। অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ওনার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, “কেন্দ্রের প্রস্তাব ভাল। কিন্তু তা তড়িঘড়ি চালু করা যাবে, এমনটা সম্ভব নয়। চালু করার আগে অনেক বিষয়ে আলোচনা জরুরি।” বেঙ্গল রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি আবদুল মালেক বলেন, “আমরা পলিশিং চাল খাই। একমাত্র ঢেঁকিছাঁটা চালেই ফুড ভ্যালু সবথেকে বেশি। ভিটামিন, আয়রনযুক্ত চাল প্রদান করতে গেলে তার খরচও বেশি হবে। তাই আমাদের কাছে কোনও নির্দেশ এলে তারপর সিদ্ধান্ত নেব।” বর্তমানে রেশন দোকানে আয়রন, ফলিক অ্যাসিডযুক্ত লাল আটা দেওয়া হয়। এবার চালের ক্ষেত্রেও কোনও পরিবর্তন আসবে কি না, তা আর কিছুদিন পরই জানা যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.