ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: গর্জন হয়েছিল অনেক, তবে বর্ষালেন না একেবারেই। বিধানসভা বাজেট অধিবেশনের সূচনা ভাষণে রাজ্য সরকারের তৈরি করে দেওয়া বক্তব্যই হুবহু পড়ে গেলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। নিজের মতামত তো দূর অস্ত, এতটুকুও সংযোজন বা বিয়োজন করলেন না। যা জল ঢেলে দিল গত দু’দিনের যাবতীয় গুঞ্জন, ফিসফাসে। রাজ্য-রাজ্যপালের মধ্যে ফের যে সংঘাতের আঁচ করা হচ্ছিল, তার বিন্দুমাত্র পূর্বাভাসও তৈরি হল না। ভাষণ শেষে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হেসে কথা বললেন। তবে প্রথা ভেঙে স্পিকারের ঘরে ঢুকে গেলেন ধনকড়। সেখানে তাঁর উপস্থিতিতে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবকে ডেকে পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত দু’দিন ধরে তিনি বারবারই নানাভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, তার প্রতিফলন দেখা যেতে পারে বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে। রাজ্যের লিখে দেওয়া ভাষণ না পড়ে তিনি তাতে নিজের মতামত দেবেন, তাঁর মতো করে সংযোজন-বিয়োজন করবেন, এই ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন বারবার। প্রোটোকল ভেঙে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান ঠিক কী করেন, সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই। বিধানসভার অন্দরেই রাজ্য সরকার এবং রাজ্যপাল যুযুধান হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে নির্দিষ্ট সময়ে সেসব কিছুই হল না। দেখা গেল, বাজেটের উদ্বোধনী ভাষণ দিতে গিয়ে রাজ্যের লিখে দেওয়া বক্তব্যই পড়েছেন ধনকড়। মাঝে অবশ্য নজিরবিহীনভাবে রাজ্যের ৩ প্রিন্সিপল অ্যাকাউন্ট্যান্টকে ডেকে পাঠান তিনি।
ভাষণ শেষে পোডিয়াম থেকে নেমে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় মিনিটখানেক ধরে কথা বলেন রাজ্যপাল। তারপর বিরোধী দলের বিধায়কদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন। শেষে শাসকদলের সঙ্গে কথাবার্তার পর প্রোটোকল ভেঙে ধনকড় ঢুকে পড়েন স্পিকারের ঘরে। সেখানে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁকে দেখে প্রথমে সকলে হতচকিত হলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই তা কাটিয়ে স্বাগত জানান স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালকে সামনে রেখেই মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে স্পিকারের ঘরে ডেকে পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে বিধানসভা ছাড়েন রাজ্যপাল। তাঁকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন অন্যান্য মন্ত্রীরাও। ফেরার পর জগদীপ ধনকড় টুইট করে জানান যে তিনি সংবিধানের প্রথা মেনেই বিধানসভা সূচনা ভাষণ করেছেন।
তবে এতটা সংঘাতের আবহ থাকা সত্ত্বেও বিধানসভায় রাজ্যপালের এই ভূমিকাকে খুব সহজভাবে দেখছেন না বিরোধীরা। তাঁদের পালটা অভিযোগ, মোদি-মমতার সাক্ষাতে কোনওরকম আপোস হয়েছে। তাই রাজ্যপালের ভূমিকাও একেবারে বিপরীত। তবে রাজনৈতিক মহলের অধিকাংশেরই মত, সংঘাত এড়াতেই তাঁর এই পদক্ষেপ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.