দীপঙ্কর মণ্ডল: সংঘাতের রাস্তা খোলাই ছিল। বিক্ষোভ, স্লোগানের নামে উগ্রতাই প্রকাশ পাচ্ছিল বেশি। যাতে মেজাজ হারিয়ে ফেলাই স্বাভাবিক। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ুয়া ও শিক্ষাকর্মীদের তুমুল বিরোধিতার মুখে পড়ে যেভাবে শান্ত হয়ে পরিস্থিতি সামলালেন আচার্য জগদীপ ধনকড়, তা ‘গান্ধীগিরি’ সঙ্গেই তুলনীয়। সামনে, পিছনে, ডানদিক, বাঁদিকে বিক্ষোভরত জনতাকে ঠান্ডা করে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে সমাধানের পথ খুলে দিলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান।
আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বৈঠকে যোগ দিতে যাদবপুরে যান আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। গেটের মুখেই তাঁর গাড়ি আটকে বিক্ষোভে নামেন এসএফআই প্রভাবিত পড়ুয়ারা। কালো পতাকা দেখিয়ে, ‘গো ব্যাক’ স্লোগান তোলা হয়। প্রবল বিক্ষোভের জেরে গাড়িতেই প্রায় ঘণ্টাখানেক বসে থাকেন তিনি। তারপর বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে ভিতরে ঢোকেন আচার্য। কিন্তু বৈঠক যে ঘরে চলছিল, সেখানে না গিয়ে ভুল করে শিক্ষাকর্মীদের একটি ঘরে ঢুকে যান ধনকড়। সেই ঘরের বাইরে তৃণমূল সমর্থিত শিক্ষা সমিতির সদস্যরা অবস্থান বিক্ষোভ করেন। হইহট্টগোলও বেঁধে যায়। এখানেও প্রায় ঘণ্টাখানেক আটকে থাকেন আচার্য। তবে সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
এরপর নিরাপত্তারক্ষীরা বিক্ষোভ হঠিয়ে দিলে, ধনকড় অরবিন্দ ভবনের সামনে আসেন। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বারবার বলেন, আলোচনার জন্য তিনি প্রস্তুত। শান্ত হয়ে তাঁরা যেন তাঁদের প্রশ্ন করেন। তিনি সবরকম উত্তর দিতে প্রস্তুত। তা সত্বেও পডুয়ারা শান্ত না হলে বারবার করে ধনকড় আবেদন জানান। এমন এক উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে স্মিতমুখে যেভাবে তিনি সবটা সামলানোর চেষ্টা করছিলেন, তা শিক্ষণীয়।
কিছুক্ষণ পর রাজ্যপালের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পড়ুয়ারা তাঁকে প্রশ্ন করতে শুরু করেন। হায়দরাবাদ, উন্নাওয়ের ধর্ষণকাণ্ড থেকে NRC, CAA প্রসঙ্গ – সবই ছিল সেই প্রশ্নমালায়। প্রথমটি নিয়ে রাজ্যপাল উত্তর দেন যে তিনি অন্য রাজ্যের ব্যাপারে কিছু বলবেন না। আর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে পড়ুয়াদের যুক্তিপূর্ণ মতামত শুনতে তিনি আগ্রহী বলে জানান। যুক্তি তাঁর খাঁটি মনে হলে, তাঁর মতো করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। এই ইস্যুতে আলোচনায় পড়ুয়াদের জন্য সর্বদাই রাজভবনের দ্বার খোলা বলেও আশ্বাস দিয়েছেন ধনকড়।
এরপর তিনি কোনও বৈঠকে যোগ না দিয়েই যাদবপুর থেকে বেরিয়ে যান। যাওয়ার সময়ে সন্ধেবেলা রাজভবনে কোর্ট বৈঠক করার কথা বলেন উপাচার্যকে। সন্ধ্যায় উপাচার্য-সহ এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্যরা সেখানে বৈঠকে যোগ দেন। তাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় যে মঙ্গলবার সমাবর্তন স্থগিত থাকছে।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.