অর্ণব দাস, বারাকপুর: প্রথম বিচ্ছেদের রেশ কাটতে না কাটতেই দুর্নীতি মামলায় তাপস মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ গোপাল দলপতির জীবনে হৈমন্তীর প্রবেশ। এই লাস্যময়ীকে ঘিরেই কি গোপালের সঙ্গে তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর বিচ্ছেদ? এখন এই প্রশ্নই ঘুরছে দমদমের সুভাষনগরের বাসিন্দাদের মুখে-মুখে। যদিও, গোপাল দলপতির প্রথম পক্ষের স্ত্রীর পরিবারের দাবি, বিয়ের পর তাঁদের মেয়ে সাংসারিক সুখ পাননি। গোপাল হয়তো মেয়েকে মারধর করতেন না। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মেয়ে যে সুখেও ছিলেন না, তা তাঁরা বুঝতে পারতেন। এভাবে বছর দু’য়েক কেটেছিল। তাই গোপালকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে মেয়েকে তাঁরা সরিয়ে নিয়ে আসেন। মেয়েও তাতে রাজি হন। দু’পক্ষের সম্মতি নিয়েই দু’জনের ডিভোর্স হয়।
দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে গেলেই সুভাষনগর। সেখানকারই বাসিন্দা মানবাধিকার কর্মী। এখন তাঁর বয়স প্রায় ৭০ বছর। তাঁর মেয়ের সঙ্গেই বিয়ে হয়েছিল গোপাল দলপতির। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পোস্ট অফিস রোডে বছর পনেরো আগে কোচিং সেন্টার চালাতেন গোপাল। পঞ্চম থেকে সপ্তম সমস্ত বিষয় এবং অষ্টম থেকে দশম পর্যন্ত অঙ্ক ও বিজ্ঞান পড়াতেন তিনি। তবে অঙ্কের শিক্ষক হিসেবেই এলাকায় বেশ নাম ডাক হয়েছিল গোপাল স্যারের। তাঁর কাছে পড়ে অনেক ছাত্রই অঙ্কে একশোয় একশো পেয়েছিল। তাই রমরমিয়ে চলত তাঁর কোচিং সেন্টার। প্রতি ব্যাচে থাকত ছাত্রছাত্রীদের ভিড়। গোপালের প্রাক্তন শ্বশুরবাড়ির লোকেদের মতে, তাঁদের মেয়ে যখন ছোট, তখন থেকেই গোপালের যাতায়াত ছিল বাড়িতে। প্রথমদিকে মেয়ে গোপালকে ‘কাকু’ই বলত। মেয়ে যখন ক্লাস নাইনে পড়ে, তখন পরিবারের লোকেরা গোপাল স্যারের কাছে অঙ্ক ও বিজ্ঞান পড়তে পাঠান মেয়েকে।
কিন্তু পড়তে পড়তেই কিশোরী ছাত্রীর সঙ্গে গোপাল স্যারের প্রেমপর্ব শুরু হয়। গোপালের প্রাক্তন শ্বশুর জানান, ছাত্রী অবস্থায় মেয়ের আচরণ পালটে যাচ্ছিল। গোপালকে তিনি স্নেহ করতেন। ভাইয়ের চোখে দেখতেন। গোপালও তাঁকে ‘দাদা’ বলতেন। কিন্তু কখন যে সুযোগ পেয়ে মেয়ের মগজধোলাই করেছেন গোপাল, তা জানতে পারেননি পরিবারের কেউই। মেয়ের বয়স যখন ১৮ পার হল, তখন বুঝতে পারলেন যে, গোপাল ছাত্রীকেই পাত্রী করেছেন। কিন্তু ওই তরুণীর মা বা বাবা কেউই গোপালকে জামাই হিসাবে মেনে নিতে পারেননি। এর মধ্যেই ওই দম্পতি বুঝতে পারেন যে, গোপালের সঙ্গে সুখে সংসার করতে পারছেন না মেয়ে। গোপালের সঙ্গে মেয়ের সাংসারিক কলহ লেগেই থাকত। তাই শেষ পর্যন্ত আর বিয়ে টেঁকেনি। বছর দু’য়েক সংসারের পর দু’জনের ডিভোর্স হয়। অবশ্য ওই স্বেচ্ছাসেবী ফের তাঁর মেয়ের বিয়ে দেন। মেয়ে এখন অন্তঃসত্ত্বা।
ওই বিয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় গোপালের। গোপাল দাবি করেছেন, হৈমন্তী তাঁর সহকর্মী ছিলেন। ২০০৯ সালে সেই সূত্রেই প্রেম। আর তার পর বিয়ে। যদিও সুভাষনগর এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করার সময় থেকেই কি গোপালের জীবনে এসেছিলেন হৈমন্তী? আর সেই কারণেই কি অশান্তি হয় দম্পতির মধ্যে? না কি গোপাল যে কোচিং সেন্টারের আড়ালে চিট ফান্ডের কারবার শুরু করেছিলেন, তা জানতে পেরেছিলেন স্ত্রী? গোপালকে ভাল পথে ফিরিয়ে আনতে গিয়েই কি বুমেরাং হয়? সেই প্রশ্ন করছেন প্রতিবেশীরা। তবে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে বছর ১২ আগে ডিভোর্স হয় গোপালের।
তাঁর প্রাক্তন শ্বশুর জানান, গোপাল যে চিট ফান্ডের কারবার করতে বা প্রতারণার জালে জড়িয়ে পড়তে পারেন, তা বিশ্বাস হয়নি তাঁর পরিবারের কারও। যদিও মেয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর যখন গোপালের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়, তখন গোপাল চিট ফান্ড মামলায় দিল্লি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারির জেরে মাস দু’য়েক তিহার জেলে কাটিয়ে এসেছেন। তাই গোপাল দলপতিকে এখন আর বিশ্বাস করে না ওই স্বেচ্ছাসেবী কর্মীর পরিবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.