ছবি: প্রতীকী
অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: হাওড়ার কুখ্যাত ডন রামুয়া খুনের দু’দিনের মাথায় খুন হল তার প্রাক্তন শাগরেদ মানোয়ার আলি ওরফে গুড্ডু। বুধবার ভোর ৫টা নাগাদ হাওড়ার সন্ধ্যা বাজারের জিটি রোডের উপর একটি ট্রলি ভ্যানে গলার নলি কাটা অবস্থায় উদ্ধার হয় গুড্ডুর দেহ। খুনের স্টাইল দেখে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, রামুয়ার গ্যাং-ই এই খুন করেছে। কারণ, খোদ রামুয়া এবং তার দলবল এভাবেই গলার নলি কেটে, মুন্ডু আলাদা করে, হাত পা টুকরো টুকরো করে নৃশংসভাবে খুন করত। রামুয়া জেলে যাওয়ার পর দল বদলে আরেক মাফিয়া ডন রমেশ মাহাতোর দলে যোগ দিয়েছিল গুড্ডু।
প্রাথমিক তদন্তে শিবপুর থানার পুলিশ জানতে পেরেছে, মঙ্গলবার রাতে শিবপুরের একটি গোপন ডেরায় ‘রামুয়া নিকেশ’ হওয়ার জন্য পিকনিকের মধ্য দিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতেছিল নিহত মাফিয়া ডনের বিরোধীগোষ্ঠী। সেখানেই ওই উৎসবে যোগ দিয়েছিল রামুয়ার প্রাক্তন সঙ্গী মানোয়ার ওরফে গুড্ডু। দীর্ঘদিন হাওড়ার বাইরে থাকা গুড্ডু ওদিনই বাড়ি ফিরেছিল। সন্ধ্যায় রামুয়ার বিরোধী হুগলির মাফিয়া ডন রমেশ মাহাতোর লোকজনের সঙ্গে ফূর্তি করতে গিয়েছিল। কিন্তু তারপর আজ সকালে তার নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলের কাছে থাকা একটি সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে নিহতের মোবাইলের কল লিস্টও। গুড্ডুর নৃশংসভাবে খুনের পর হাওড়া ও হুগলির অন্ধকার জগতে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কারণ, অনেকেই মনে করছিল, রামুয়া হত্যার পর তার টিম আর সক্রিয় থাকছে না। কিন্তু গুড্ডুকে নৃশংসভাবে ডনের পুরনো স্টাইলে ‘নিকেশ’ করার পদ্ধতি জানিয়ে দিল রামুয়া চলে গেলেওতার সঙ্গীরা এখনও সমান মাত্রায় সক্রিয় রয়েছে। পুলিশ অবশ্য সকাল থেকেই হাওড়ার পাশাপাশি লাগোয়া জেলায় হত্যাকারীদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে।
[নাবালিকা পরিচারিকাকে মারধর, আটক জয়েন্ট বিডিও-র স্ত্রী]
এক সময় রামুয়ার শাগরেদ হিসাবেই পরিচিতি ছিল গুড্ডুর। কিন্তু রামুয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় পরবর্তীতে সে গোষ্ঠী বদল করে নাম লেখায় রামুয়ার বিরোধী-গোষ্ঠী রমেশ মাহাতোর দলে। এরপর দীর্ঘদিনই সে এলাকাছাড়া ছিল। এর পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লিকপুরে স্ত্রীর কাছে সে থাকত। যদিও রামুয়ার বাড়ির অদূরে জেলিয়াপাড়ায় তার এক সময়ের আস্তানা ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবারই এলাকায় ফিরেছিল পুরোনো বাড়িতে। কিন্তু বুধবার সকালেই তার নলি কাটা অবস্থায় দেহ মেলে। রামুয়া খুনের দু’দিনের মধে্য হঠাৎ এলাকায় কেন ফিরল গুড্ডু? মূলত এই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। বাঘ নেই বন উজাড়, এই ভেবেই কি এলাকায় ফের ফিরেছিল গুড্ডু, নাকি রামুয়ার অবর্তমানে এলাকায় নতুন করে দখলের মোটিভ ছিল, সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে রামুয়া খুনের সঙ্গে যে এই খুনের নিবিড় যোগসূত্র আছে, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ অনুমান, রামুয়ার বিরোধী-গোষ্ঠী হওয়ার সুবাদেই খুন হতে হয়েছে গুড্ডুকে। পাশাপাশি রামুয়া খুনে গুড্ডুর হাত থাকার বিষয়টিকেও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। এক্ষেত্রে আরও স্পষ্ট হচ্ছে গ্যাং-ওয়ারের বিষয়টি। আর পুলিশরে এই অনুমানকে আরও জোরদার করছে গুড্ডু ওরফে মানোয়ার আলিকে খুন করার ধরন।
[রথযাত্রার বিকল্প বিজেপির, রাজ্যে তিনদিনে ৫টি জনসভা করবেন অমিত শাহ]
প্রসঙ্গত হাওড়ার দাগি দুষ্কৃতী রামমূর্তি দেওয়ার ওরফে রামুয়া ত্রাস সৃষ্টি করেছিল তার খুনের ধরন নিয়ে। কারণ দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটেই মানুষ খুন করত রামুয়া। এক্ষেত্রে গলার নলি কেটেই খুন করা হয়েছে গুড্ডুকে। খুনের মোডাস-অপারেন্ডিতে গুড্ডু খুনের সঙ্গে রামুয়া খুনের যোগ থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, তোলাবাজির প্রতিবাদ করায় ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট যুবকের মাথা কেটে ফুটবল খেলে এলাকার রীতিমতো ত্রাস হয়ে উঠেছিল রামমূর্তি দিওয়ার ওরফে রামুয়া। খুন করে দেহ লোপাট ছিল তার বাঁ হাতের খেলা। পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সেই বীভৎসতার প্রায় সব মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলেছিল রামুয়া। দমদম এবং আলিপুর মিলিয়ে ২০ বছর জেলে কাটলেও শোধরায়নি সে। জেলারকে বন্দুক ঠেকিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছে একাধিকবার। সামান্য কাগজকুড়ানি থেকে হাওড়ার ত্রাস হয়ে ওঠা রামুয়ার প্রাক্তন শাগরেদ মানোয়ার আলির খুনের কিনারা করতে আপাতত সিসিটিভিই ভরসা পুলিশের। কারণ ঘটনাস্থলের পাশের একটি দোকানের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুরো ঘটনাটির কিনারা সম্ভব বলে মনে করছে পুলিশ। স্থানীয় ওই ব্যবসায়ী তাঁর দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের কাছে জমা দিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন এদিন।
[সোদপুরে শুটআউট, ফিল্মি কায়দায় ফ্ল্যাটে ঢুকে গ্যাংস্টারকে গুলি করে খুন]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.