ফাইল চিত্র।
অর্ণব আইচ: মাসের পর মাস ধরে জাতিদাঙ্গায় উত্তপ্ত মণিপুর। এখনও ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে। মেতেই-কুকি গোষ্ঠী সংঘর্ষে জেরবার উত্তরপূর্বের রাজ্যটির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে দেশ। এতদিনেও মণিপুরে (Manipur) সংঘর্ষ থামছে না কেন? মায়ানমারের গৃহযুদ্ধের আগুনেই কি উত্তপ্ত মণিপুর? কী বলছেন সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের জিওসি-ইন-সি লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাণাপ্রতাপ কলিতা।
গত ৩ মে মণিপুরে শুরু হয় মেতেই-কুকি জাতিদাঙ্গা। সরকারি পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, প্রায় শ-দুয়েক মানুষের মৃত্যু হয়েছে গত ৭ মাস ধরে চলা অশন্তির জেরে। এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। নিখোঁজ ৩২ জন। প্রায় লাখ খানেক মানুষ ঘরছাড়া। দুষ্কৃতীরা পাঁচ হাজার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ৩৮৬টি ধর্মীয়স্থানে হামলা হয়েছে বলে খবর। অশান্তি আগের তুলনায় কমলেও বর্ষশেষেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারেনি উত্তপূর্বের রাজ্য। নতুন বছরেও কি অন্ধকার কেটে নতুন সূর্য উঠবে না মণিপুরে?
বুধবার ফোর্ট উইলিয়ামে মণিপুরের পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দেন সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের জিওসি-ইন-সি লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাণাপ্রতাপ কলিতা। তিনি জানান, প্রথমত মণিপুরে অশান্তির শিকড় রয়েছে আসলে মায়ানমারে। কীভাবে? সেনাকর্তার বক্তব্য, মায়ানমার গৃহযদ্ধের প্রভাব পড়ছে মিজোরাম এবং মণিপুর দুই রাজ্যেই। সংঘর্ষ না থামার দ্বিতীয় কারণ, মেতেই ও কুকি দুই গোষ্ঠীর কাছে রয়েছে প্রচুর হাতিয়ার। তৃতীয়ত, প্রতিবেশী ‘শত্রু’ রাষ্ট্র চিনের চোখ রাঙানি। অরুণাচল, সিকিমে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে দ্রুত পরিকাঠামো তৈরি করছে লালফৌজ। সেনাকর্তা বলেন, “তবে ভারতও প্রস্তুত। আমরা যে কোনও পরিস্থিতি মোকবিলায় তৈরি। ইম্ফল উপত্যকায় আফস্পা না থাকলেও সেখানে নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে কাজ করছে সেনা। যাতে করে আমজনতার সুরক্ষা অক্ষুণ্ণ রেখেও কাজ করতে পারে সেনা।”
চিনের লাল ফৌজের হাত থেকে ‘শিলিগুড়ি করিডর’ বা ‘চিকেন নেক’কে সুরক্ষিত রাখতে চিন ও ভারত সীমান্তে পরিকাঠামো বৃদ্ধির উপরই গুরুত্ব দিচ্ছে সেনাবাহিনী। রাস্তা ও হেলিপ্যাড তৈরি করে চিনের সেনা পিএলএ বা লালফৌজের মোকাবিলা করছে সেনা।
উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডর বা ‘চিকেন নেক’-এর উপর নজর রয়েছে চিনের লাল সেনার। কারণ, এই ‘করিডর’টি দখল করতে পারলেই দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে উত্তরবঙ্গের একটি অংশ ও সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত। তাই এই শিলিগুড়ি করিডরের রক্ষায় প্রস্তুত সেনা। বুধবার ফোর্ট উইলিয়ামে সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কম্যান্ডের জিওসি-ইন-সি লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাণাপ্রতাপ কলিতা জানান, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তে ‘ফরওয়ার্ডিং এরিয়া’য় সবরকম যোগাযোগ ব্যবস্থার উপরই জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে রাস্তা। কারণ, পাহাড়ের এক উপত্যকা থেকে অন্য উপত্যকায় যাতায়াতের জন্য রাস্তাই মূল ভরসা।
উল্লেখ্য, বর্ষার সময় অনেক রাস্তাই নষ্ট হয়ে যায়। কয়েক মাস আগে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে রাস্তা ধুয়ে মুছে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল উত্তর সিকিমের একটি অংশে। জিওসি-ইন-সি জানান, এর জন্য বেশ কিছু বিকল্প রাস্তা তৈরি হয়েছে ও হচ্ছে। তার ফলে যোগাযোগের ব্যবস্থা আরও সুবিধাজনক হবে। এছাড়াও টেলিসংযোগের ব্যবস্থাও আরও উন্নত করা হচ্ছে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় খুব তাড়াতাড়ি যাতায়াতের জন্য শুধু রাস্তার উপর ভরসা না করে আরও বেশি সংখ্যক হেলিপ্যাড তৈরি করা হচ্ছে। কিছু বিমানবন্দর বা এয়ারস্ট্রিপ তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়াও সেনার বাসস্থানেরও আরও উন্নতিসাধন করা হচ্ছে। যাতে অল্প সময়ের মধ্যেই বাহিনী যে কোনও জায়গায় পৌঁছতে পারে। সীমান্তের ওপারে চিন রাস্তা ও হেলিপ্যাড তৈরি করেছে। তারাও নিজেদের মতো তাদের সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে। ভারতীয় সেনাও চিনের মোকাবিলায় সীমান্তবর্তী এলাকায় পর্যাপ্ত ও প্রয়োজন অনুযায়ী সেনা মোতায়েন ও অস্ত্র তৈরি রাখছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.