ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী! সার্জারির ডিগ্রি নেই। তা সত্ত্বেও নিজেকে সার্জন পরিচয় দিয়ে অন্তঃসত্ত্বার অস্ত্রোপচার করলেন চিকিৎসক! সদ্যোজাত ভূমিষ্ঠ হলেও শেষরক্ষা হল না। কোমায় চলে গেলেন সদ্য মা হওয়া তরুণী। আপাতত এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন সুলতানা খাতুন (৩০)। খোদ কলকাতার বুকে এ ঘটনায় হতবাক রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন।
ওই নার্সিংহোম এবং তার চিকিৎসক মালিকের বিরুদ্ধে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন সরফরাজ খান। সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন। যা দিতে হবে ১০টি কিস্তিতে।
ঘটনা মাস তিনেক আগের। আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাসিন্দা সন্তানসম্ভবা সুলতানা খাতুন ভরতি হন রিপন স্ট্রিটের একটি নার্সিংহোমে। ওই হেরিটেজ নার্সিংহোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালান এক মহিলা চিকিৎসক। এমবিবিএস ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। কিন্তু অস্ত্রোপচার করতে গেলে যে ডিগ্রি থাকা প্রয়োজন সেই এমএস বা মাস্টারস ইন সার্জারি (masters in surgery) ডিগ্রি নেই। সন্তানসম্ভবা সুলতানার সিজার সার্জারির প্রয়োজন ছিল। নার্সিংহোমের মালিক চিকিৎসক নিজে সেই অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচারের পর সন্তান ভূমিষ্ঠ হলেও ব্যাপক রক্তক্ষরণ শুরু হয় সুলতানা খাতুনের। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ব্রড স্ট্রিটের একটি নার্সিংহোমে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে গিয়েও লাভ হয়নি। ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর। বাধ্য হয়ে সুলতানাকে সল্টলেক আমরি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হয়। সেখানে চিকিৎসার বিল দাঁড়ায় ২০ লক্ষের কাছাকাছি। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে বিপুল এই বিল মেটানো সম্ভব ছিল না। কোনরওরকমে বাড়ি বিক্রি করে ১০ লক্ষ টাকা মেটায় পরিবার।
অভিযোগকারী সরফরাজ খাতুন জানিয়েছেন, “ওই মহিলার অস্ত্রোপচারের ডিগ্রি ছিল না। ভুল অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে আমার স্ত্রীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন উনি। অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে যে বিপুল বিল হয়েছে তা মেটানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।” সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী ওই মহিলা চিকিৎসক তথা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মহিলার শুধুমাত্র এমবিবিএস ডিগ্রি ছিল। অথচ তিনি রোগীর পরিবারের কাছে নিজেকে স্ত্রীরোগ বিভাগের বিশেষ চিকিৎসক বলে পরিচয় দিতেন। এটা ঠিক নয়। সুলতানার পরিবারের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালের বিপুল বিল মেটানো সম্ভব নয়। তাই আপাতত এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এসএসকেএম সূত্রে খবর, আপাতত কোমায় রয়েছেন ওই মহিলা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.