অর্ণব আইচ: কখনও তিনি রাজার মেজাজে। কখনও তিনি পেল্লায় রথে। সেই রথ টানছে বাঘ বা সিংহ। কোথাও তিনি দশ ফুট। কোথাও তিনি ২২ ফুট। গণপতি বাপ্পার এই মূর্তি দেখতে গেলে যেতে হবে আরব সাগরের পারে। কিন্তু মুম্বইয়ের গণপতি দর্শন থেকে কেনই বা বঞ্চিত হবেন কলকাতাবাসী? উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি বা দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটের পোটোপাড়া থেকে দুর্গাপ্রতিমা, কালীপ্রতিমা পাড়ি দেয় বিদেশে। দেশের অন্যান্য রাজ্যের বহু শহরেও কুমোরটুলির প্রতিমা ছাড়া যেন পুজোই হয় না। এবার পালা মুম্বইয়ের। এই বছরই প্রথম কলকাতায় পুজো নিতে আসছেন মুম্বইয়ের শিল্পীর হাতে মূর্ত সিদ্ধিদাতা। মুম্বই থেকে নিয়ে আসা সেই ১৪ ফুটের গণেশ প্রতিমার পুজো হবে দক্ষিণ কলকাতার এক মণ্ডপে।
[ চেয়ারে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ, শিরদাঁড়ার ক্ষয় রুখতে মেনে চলুন এই উপায় ]
গত কয়েক বছর ধরে কলকাতায় গণেশপুজোর সংখ্যা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। কুমোরটুলি বা পোটোপাড়া থেকে গণেশ প্রতিমা কিনে এনে পুজো করেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু তাতে মন ভরেনি ভবানীপুরের বাসিন্দা গোপী ঠক্করের। রাখাল মুখার্জি রোডের ‘গণপতি ভক্ত মণ্ডল’ ক্লাবটি গত সাত বছর ধরে গণেশ পুজো করে আসছে। এই পুজোয় কোনও চাঁদা তোলা হয় না। ব্যবসায়ী গোপী একাই পুজোর আয়োজন করেন। খোঁজ রাখেন, মুম্বইয়ের কোথায় কী রকম গণেশ পুজো হচ্ছে। আর তাতেই বাড়ে আক্ষেপ। কলকাতায় তৈরি গণেশপ্রতিমা যেন সেগুলির তুলনায় নেহাতই এলেবেলে। মারাঠাভূমির গণেশের সেই ঔজ্জ্বল্য যেন ম্রিয়মান বঙ্গজ সিদ্ধিদাতার অবয়বে। অগত্যা নজর ঘোরাতে হয়েছে।
ভবানীপুরের ক্লাবটির হর্তাকর্তারা ঠিক করেছেন এবার গণেশমূর্তি আনা হবে মুম্বই থেকে। বাজেট বাড়বে। কিন্তু মনের সন্তুষ্টির জন্য সেটুকু মেনে নিতেই হবে। গোপী জানান, মাথায় ভাবনাটি আসার পর থেকেই তাঁরা ‘নেট সার্চ’ করতে শুরু করেন। জানতে পারেন মুম্বইয়ের বিখ্যাত মৃৎশিল্পী ক্রুণাল পাটিলের কথা। গণেশ পুজোর আগে তিন মাস ধরে অন্তত ২০০ প্রতিমা তৈরি করেন তিনি। যোগাযোগ করা হয় ক্রুণালের সঙ্গে। ক্রুণাল মূর্তি বানাতে রাজি হন। মুম্বইয়ে ক্রুণালের দু’টি ওয়ার্কশপ। তার মধ্যে একটিতে গিয়ে ক্রুণালের সঙ্গে দেখা করেন গোপীরা। ক্রুণাল তাঁকে একটি গণেশ প্রতিমার ডিজাইন দেখান। প্রতিমার উচ্চতা ন’ফুট। তার উপর পাঁচ ফুটের চালচিত্র। মোট উচ্চতা ১৪ ফুট।
[ বাসে চোরের উপদ্রব, সচেতনতা বাড়াতে প্রচার পুলিশের ]
আপনি তাহলে এবার কলকাতার জন্য গণপতি বাপ্পার মূর্তি বানাচ্ছেন?
মুম্বই থেকে ক্রুণাল জানান, এই প্রথম মুম্বই থেকে কোনও প্রতিমা যাচ্ছে কলকাতায়। তাঁরা খুব খুশি। তবে কলকাতায় ঠাকুর তৈরির পদ্ধতির সঙ্গে তাঁদের পার্থক্য রয়েছে। তাঁরা বাঁশ ও খড় দিয়ে কাঠামো তৈরি করেন না। মূলত ছাঁচ ব্যবহার করেন। মাটি, ফাইবার, প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে তৈরি হয় প্রতিমা। তাতে যুক্ত করা হয় কাঠের গুঁড়ো। এতে প্রতিমা শক্ত হয়। প্রতিমার পিছনে ও মাথার উপর চালচিত্র জোড়া লোহার কাঠামোর সঙ্গে। এখন ‘ট্রেন্ড’ রাজার মেজাজে বসে থাকা গণেশ। আবার রথের গণেশ টানে বিভিন্ন ধরনের পশু। অনেকের আবার পছন্দ ‘বালগণেশ’ বা কৃষ্ণরূপের গণেশ। মুম্বই থেকে ক্রুণালরা মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গা, হায়দরাবাদ, গুজরাটে গণেশ প্রতিমা পাঠান। এখনও গণেশ পুজোর প্রায় দেড় মাস বাকি। তার অনেক আগেই তৈরি হয়ে যাবে কলকাতার গণেশ প্রতিমা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.