ছবি: প্রতীকী।
সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: শহরের তোলাবাজির জগতের ত্রাস রশিদ আলম ওরফে গব্বর এবং হুগলির অন্ধকার জগতের ডন রমেশ মাহাতো ফের লালবাজারের গোয়েন্দাদের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠল! আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বসে উত্তর কলকাতার এক প্রোমোটারকে তোলা চেয়ে হুমকি ফোনের দায়ে ধৃত গব্বর ও রমেশকে জেরা করে শহর ও শহরতলির তোলাবাজির জগতের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা। তাঁরা জানতে পেরেছেন, জেলে থাকা অবস্থাতেও গব্বর ও রমেশের তহবিলে নিয়মিত টাকা পাঠাত শহরের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও প্রোমোটার। তোলা চেয়ে তাঁদের নিয়মিত হুমকি ফোন করত গব্বর ও রমেশ। এর ফলে এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন, জেলে বসেও গব্বর ও রমেশ শহর ও শহরতলিতে তাদের তোলাবাজির নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। তাদের তহবিলে টাকা পাঠানো ব্যবসায়ী ও প্রোমোটারদের নামের একটি তালিকা তৈরি করে রাখতে চান গোয়েন্দারা৷ পাশাপাশি আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ওই দুই কুখ্যাত তোলাবাজের হাতে মোবাইল ফোন কাদের মাধ্যমে এল তাও তদন্ত করে দেখছেন এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা।
[বঙ্গ বিজেপিকে রথযাত্রার অনুমতি দিল না রাজ্য]
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল (অপরাধ) প্রবীণকুমার ত্রিপাঠী জানান, “জেলের বাইরে থেকে কেউ মোবাইল ফোন গব্বর ও রমেশের কাছে পৌঁছে দিয়েছে? নাকি এর পিছনে রয়েছে জেলেরই কিছু কর্মী? তা তদন্ত করে দেখছি আমরা। জেলে বসে তোলা চাওয়ার কথা জেরায় স্বীকার করছে না গব্বর ও রমেশ। তবে স্বীকার না করলেও তারা যে তোলা চেয়ে উত্তর কলকাতার এক প্রোমোটারকে সত্যিই হুমকি ফোন দিয়েছিল তার যথেষ্ট প্রমাণ আমাদের হাতে আছে।” নয়ের দশকের মাঝামাঝি। পার্ক স্ট্রিটের কুখ্যাত তোলাবাজ আখতার ভাইদের হাত ধরে শহরের অপরাধ জগতে সবেমাত্র পা দিয়েছে তালতলার উমা দাস লেনের গব্বর। এরপর গব্বর নিজেই শহরে একটি আলাদা করে অপরাধের গ্যাং তৈরি করে ফেলে। একের পর এক তোলাবাজি, অপহরণ ও খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে সে। এমনকী, পুলিশকে বোমা মারার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শহরের বিভিন্ন থানায় একাধিক অপরাধমূলক মামলা রয়েছে গব্বরের নামে। লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৩ সালে গব্বরের যাবজ্জীবন সাজা হয়। শহরের ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে ত্রাস হয়ে উঠেছিল গব্বর। সে এখন আলিপুর জেলে বন্দি।
[ক্রাইমের বই পড়ে স্বামীকে খুনের ছক অনিন্দিতার!]
অন্যদিকে, হাওড়া ছাড়াও হুগলিরও অন্ধকার জগতের সম্রাট হয়ে উঠেছিল বালির কুখ্যাত তোলাবাজ রমেশ মাহাতো। বালি থেকে শুরু করে রিষড়া, শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটি, ভদ্রেশ্বর এমনকী ব্যান্ডেল পর্যন্ত ছিল তার তোলাবাজি জগতের সাম্রাজ্য। গব্বরের মতো রমেশও একের পর এক তোলাবাজি, খুন ও অপহরণের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলি শিল্পাঞ্চলে রমেশ কমপক্ষে ২০টি খুনের মামলায় জড়িত। কয়েকবছর আগে রহস্যজনকভাবে খুন হয় রমেশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হুব্বা শ্যামল। সেই খুনের পিছনেও রমেশের যোগ ছিল বলে পুলিশের অনুমান। বহু চেষ্টায় রমেশকে কয়েকবছর আগে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বন্দি ছিল হাওড়া জেলে। কিন্তু সেই জেলে বসেও রমেশ তার তোলাবাজির সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছিল বলে পুলিশ জানতে পারে। এরপরই তাকে হাওড়া জেল থেকে আলিপুর জেলে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আলিপুর জেলে এসেও তোলাবাজির যৌথ সাম্রাজ্য তৈরি করে ফেলে গব্বর ও রমেশ। নিজের বাড়ির কাছেই একটি পুরনো বাড়ি ভেঙে বহুতল নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল বড়তলার দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের প্রোমোটার চেতন সিং। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। সেই ফোনে জানানো হয়, “আমি গব্বর বলছি। গোটা শহরে আমার ছেলেরা ছড়িয়ে রয়েছে। বিল্ডিং করছেন ভাল। তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে এর জন্য আমাদের পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে। আমার ছেলেরা পৌঁছে যাবে আপনার কাছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.