শুভঙ্কর বসু: কে জানত স্কুলের সেই ‘শেয়াল পণ্ডিত’ একদিন বিশ্বের দরবারে বাঙালির নাম উজ্জল করবে? ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সাউথ পয়েন্ট স্কুলে পড়তেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। লম্বা ছিপছিপে চেহারা। চোখে একটা বড়সড় মাপের চশমা। খুব নিরীহ গোবেচারা, দারুণ পড়ুয়া, এমন মোটেই নয়। বরং খেলাধুলা থেকে সিনেমা, সব দিকেই আগ্রহ ছিল। স্কুলের বন্ধুরা তাই নাম দিয়েছিল ‘শেয়াল পণ্ডিত’!
সোমবার অর্থনীতিতে নোবেল প্রাপক হিসাবে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা হতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন স্কুলের সহপাঠীরা। মনে পড়ে গিয়েছে স্কুল জীবনের কথা। ‘শিয়াল পণ্ডিত’ নাম ধরে একবার ডাকলেই সাফল্য মিলত। ব্যস, রে রে করে তেড়ে আসত অভিজিৎ। সেকথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন তাঁর সহপাঠী ও বন্ধু তথ্যচিত্রকার বাপ্পা সেন। “স্কুলে ড্রেস পরে আসাটা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু ও বেশিরভাগ সময় কাটাত একটা পাঞ্জাবি আর প্যান্টে। ঢাকুরিয়া লেক আর গোলপার্কে চলত চুটিয়ে আড্ডা।”- জানান তিনি। শুধু বাপ্পাবাবু নন। অভিজিতের স্কুলের দু’বছরের সিনিয়র রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে মজা করে লিখেছেন– ‘আমার ছাতির মাপ এখন ১১২ ইঞ্চি। স্কুলে এর নাম ছিল শেয়াল পণ্ডিত। তখন থেকেই জানা উচিত ছিল, একদিন নোবেল পাবে। আমি বছর দুয়েকের বড় ছিলাম। স্কুলের সিনিয়র। এক সময় ওকে অনেক র্যাগিং করেছি। আশা করি ভুলে গিয়েছে।’
স্কুল জীবনে অভিজিতের সঙ্গে কাটানো সময় নিয়ে বলতে গিয়ে হেসে উঠলেন তাঁর আরেক সহপাঠী প্রমথেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। “শেয়াল পণ্ডিত নাম ধরে কেউ ডাকলেই বেজায় খেপে যেত। কালপ্রিটকে খুঁজে বার করে লাথি না মারা পর্যন্ত ওর শান্তি হত না।”
নোবেল জয়ের মতো সম্মান তাঁর ঝুলিতে এলেও অভিজিৎ কখনওই নাকি তেমন বই-পোকা ছিলেন না। গান-বাজনা, রকে আড্ডা, সিনেমা দেখা, গল্পের বই পড়া, সবই চলত সমান তালে। বাপ্পাবাবুর কথায়, “স্কুল ছুটির পর যখন ঢাকুরিয়া লেক কিংবা গোলপার্কে আড্ডা চলত, সেখানে শুধু সাউথ পয়েন্ট নয়, নব নালন্দা, লা মার্টিনিয়ার কিংবা ক্যালকাটা বয়েজের ছেলেরাও জুটত। সেখানেও ওর ওই ‘শেয়াল পণ্ডিত’ নামটা ফেমাস ছিল। বললেই খেপে যেত। একবার তো গোটা বিকেল একজনের পিছনে দৌড়ে বেড়িয়েছিল অভিজিৎ। ছেলেটার দোষ, ওকে একবার শেয়াল পণ্ডিত নামে ডেকেই দৌড় মেরেছিল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.