স্টাফ রিপোর্টার: “মমতাজিকে যখন ১৯৯০ সালের ১৬ আগস্ট সিপিএম মারল, তখন কেন্দ্রে বামেদের সমর্থনেই ভি পি সিংয়ের সরকার। আমি সেই সরকারের অংশীদার ছিলাম। তখনই আমার খুব খারাপ লেগেছিল, কেন এভাবে একজনকে মারা হবে। আমি তখন সিপিএমের (CPIM) বারণ সত্ত্বেও একা ওঁকে দেখতে এসেছিলাম। ওঁর মধ্যে একজন লড়াকু নেত্রীকে তখনই দেখেছিলাম আমি। সিপিএম চায়নি আমি কলকাতা যাই। কিন্তু আমি বলেছিলাম, আমার সহকর্মী, একজন মহিলাকে মারা হয়েছে, যাঁকে আগে সংসদে দেখেছিলাম। তিনি গুরুতরভাবে জখম। আমি যাবই। কেউ বাধা দিতে পারেনি। আমি এসেছিলাম কলকাতায় ওঁকে দেখতে।” সম্প্রতি রাজভবনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে স্মারকলিপি দিতে যাওয়া তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের কাছে দু’দিনই তৃণমূল নেত্রীর প্রশংসা করেছিলেন সদ্যপ্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
আটজন করে সদস্যের দল দু’দিন গিয়েছিল। এর মধ্যে চারজন দু’দিনই যান, ব্রাত্য বসু, শশী পাঁজা, তাপস রায়, কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে দুপক্ষের টানাপোড়েন হয়, ধনকড়কে বিজেপির প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেন তৃণমূল (TMC) নেতারা, বৈঠকের পরে টুইটযুদ্ধও হয়। কিন্তু জানা গিয়েছে, ধনকড় তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানগত বাধ্যবাধকতার ফাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর ঢালাও প্রশংসা করেন। তিনি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথার সময় বলেন, “মমতাজির (Mamata Banerjee) দুটো সত্তা। যখন ব্যক্তিগত স্তরে কথা বলি তখন কী চমৎকার আন্তরিক, সব খোঁজখবর নেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন। এই মানসিকতার তুলনা হয় না। কিন্তু যখন তিনি প্রকাশ্য রাজনীতি বা প্রশাসনে থাকেন, তখন আমার কথা শোনেন না। উলটে আমার সমালোচনা করেন। আমার খুব ইচ্ছে একদিন ওঁকে নেমতন্ন করে খাওয়াই অথবা উনি আমাকে নেমতন্ন করে খাওয়ান। আমি পারস্পরিক সহযোগিতা চাই।”
সূত্রের খবর, আদি বিজেপি বলতে যা বোঝায়, তা ধনকড় নন। তিনি কংগ্রেস সাংসদ ছিলেন। পরে ভি পি সিংয়ের দিকে যান। তার পর চন্দ্রশেখরের মন্ত্রিসভায় রাষ্ট্রমন্ত্রী হন। অনেক পরে বিজেপি। তৃণমূল প্রতিনিধিদলকে তিনি গল্প করে বলেন, “আমার সঙ্গে তো প্রধানমন্ত্রীর আলাপ রাজ্যপাল হওয়ার পর। মোদিজি (Narendra Modi) বা অমিতজি (Amit Shah), কারও সঙ্গেই আগে সেভাবে আলাপ ছিল না।” ব্রাত্য বসুর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দু’দিনই জগদীপ ধনকড়ের একাধিক বিষয়ে মতপার্থক্য হয়। কিন্তু তার মধ্যেও তিনি সমানে বোঝাতে চেয়েছেন যে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সেতুবন্ধন করে চলতে চান। তার পর বিজেপির (BJP) কাণ্ডকারখানার ইস্যুতে দু’দিনই আলোচনার তাল কেটে যায়। ব্রাত্যরা বলেন, “আপনি ব্যক্তিগতভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে পছন্দ করেন, অথচ বিজেপি আপনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে, এটা কী করে চলতে পারে?”
কথাপ্রসঙ্গে একবার কুণাল ঘোষকে রাজ্যপাল জিজ্ঞেস করেন, “তুমি রাজ্যসভায় কতদিন ছিলে?” কুণাল বলেন, “২০১২ থেকে ২০১৮ পুরো একটি মেয়াদ।” রাজ্যপাল বলেন, “দারুণ। উচ্চকক্ষ ব্যাপারটাই আলাদা। আমি এখনও পর্যন্ত রাজ্যসভায় যাইনি।” ক’দিন আগের এই ‘এখনও পর্যন্ত’ শব্দটিকে অতীত করে দিয়ে এবার যে উচ্চকক্ষেরই চেয়ারম্যান হওয়ার পথে পা বাড়িয়ে রেখেছেন জগদীপ ধনকড়, সেটা বোঝা গেল এখন, উপরাষ্ট্রপতি পদে বিজেপির প্রার্থী ঘোষণার পর। সংশ্লিষ্টমহলে চর্চা চলছে তখন থেকেই কি ধনকড় পরবর্তী পদক্ষেপ অনুমান করে তৃণমূল (TMC) নেতাদের কাছে নেত্রীর ঢালাও প্রশংসা করেছিলেন? যাই হোক, উপরাষ্ট্রপতি পদে ধনকড় না মার্গারেট আলভা, কাকে সমর্থন, অথবা বিকল্প কোনও রণকৌশল, এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তৃণমূল নেবে ২১ জুলাই বিকেলে। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় সাংসদদের বৈঠকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে দলের পরবর্তী পদক্ষেপ জানাবেন। ধনকড় এখন দেখাতে মরিয়া যে তিনি তৃণমূলনেত্রীর শুভানুধ্যায়ী। অন্যদিকে মার্গারেট আলভার সঙ্গেও নেত্রীর সম্পর্ক মধুর। তৃণমূলনেত্রী আসলে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবেন এই বিষয়ে। জল্পনা তুঙ্গে উঠলেও তৃণমূলের মুখে আপাতত কুলুপ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.