বিশেষ সংবাদদাতা: প্রথম রাত প্রেসিডেন্সি জেলে নিজের সেলে কমোডে বসেই ঝিমিয়ে কাটালেন প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে, একটু দূরে আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে অপেক্ষাকৃত খোলামেলা সেলে মেঝেতে কম্বল মাথায় দিয়ে শুলেও ভাল ঘুম হল না অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের। রক্ষীদের দাবি, মাঝে মাঝেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন, আর এপাশ-ওপাশ করছিলেন অর্পিতা।
আদালতের নির্দেশে ইডি হেফাজত শেষে প্রেসিডেন্সি জেলের ‘পয়লা বাইশ’ ওয়ার্ডের ২ নম্বর সেলে ঠাঁই হয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। সাধারণ বন্দিদের মতো তাঁর জন্যও চারটি কম্বল বরাদ্দ হয়েছে। মেঝেতে বসে-শুয়ে কাটানোর চেষ্টা করেন প্রথম রাতে। কিন্তু শারীরিক স্থূলতার কারণে প্রথমবার বসার পর তাঁর উঠতে প্রচুর কষ্ট হয়। এরপর আর মেঝেতে বসার বা শোওয়ার চেষ্টা করেননি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জেল সূত্রে খবর, মাঝ রাতের পর থেকে সেলের ভিতরে সামান্য উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা কমোডের উপরে বসেই কাটিয়ে দিয়েছেন। ওখানে বসেই একটুখানি ঝিমিয়ে নিয়েছেন বলেও রক্ষীরা রিপোর্ট দিয়েছে।
শনিবার সকাল হতেই রক্ষী মারফৎ জেল হাসপাতালের চিকিৎসককে সেলে আসতে বলেন পার্থ। ডাক্তার প্রণব কুমার ঘোষ প্রাক্তন মন্ত্রীকে পরীক্ষা করে দেখেন, শারীরিক অন্যান্য প্যারামিটার ঠিক আছে। আর তখনই নিজের স্থূলতার কথা উল্লেখ করে চিকিৎসককে কাতরভাবে পার্থ জানান, ‘মেঝেতে বসলে উঠতে পারছি না। তাই আমায় হয় একটা চেয়ার অথবা খাট দেওয়া হোক।’ এরপরই মানবিক কারণে জেলের তরফে সংশোধনাগারের বিধি মেনে চিকিৎসকের সুপারিশ কারা দপ্তরের হেড অফিস জেশপ বিল্ডিংয়ে পাঠানো হয়। জেল কোডের সমস্ত দিক খতিয়ে সন্ধেয় জেশপ বিল্ডিং থেকে পার্থর জন্য খাট বরাদ্দ করা হয়।
প্রেসিডেন্সির যে ওয়ার্ডে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী রয়েছেন তার প্রতিবেশী আফতাব আনসারি বা ছত্রধর মাহাতোরা থাকলেও এদিন কারও সঙ্গেই দেখা হয়নি। কারণ, যে সময়ে অন্যদের সেলের তালা খোলা হয়েছিল তখন পার্থর সেল বন্ধ ছিল। আবার যে সময়ে অন্যরা ভিতরে ছিলেন তখন পার্থকে বাইরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বস্তুত, সেই কারণে প্রথমদিন অন্য বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিবের। তবে একবার বেলার দিকে সেল থেকে বেরিয়ে জেল অফিসে এসেছিলেন তিনি। সেখানে জেল কোড মেনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা একজন মহিলা আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠক করেন পার্থ।
বৈঠক শেষে আবার নির্দিষ্ট রক্ষীর সঙ্গেই নিজের সেলে ফিরে যান। দুপুরের দিকে জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে প্রেসিডেন্সির বিভিন্ন ওয়ার্ডে রুটিন পরিদর্শনে এসেছিলেন ডিআইজি (কারা) অরিন্দম সরকার। জেলের বিভিন্ন সেলে সিসি ক্যামেরা থাকলেও সরাসরি ২ নম্বর সেলের দিকে তাক করে কোনও ক্যামেরা নেই। কিন্তু প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে এদিন সন্ধ্যায় জেশপ বিল্ডিং থেকে নির্দেশ এসেছে, রবিবারেই পার্থর সেলের সামনে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে দিতে হবে।
রুটিন ব্রেকফাস্টে চা-পাউরুটি খেয়েছেন পার্থ। দুপুরে ভাত-ডাল ও সবজি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত জেলকর্মীদের পার্থ জানিয়ে দেন, দুপুরে আমি ভাত খাই না। এরপর সকালের চা-পাউরুটি ফের চেয়ে পাঠান তিনি। অভুক্ত না রেখে সঙ্গে সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে ফের ব্রেকফাস্টের খাবার দেওয়া হয়। সন্ধেয় চা-বিস্কুট খেয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, অর্পিতা সারাদিন চা-বিস্কুট ছাড়া আর কিছু কার্যত না খেয়েই কাটাচ্ছেন। মিনারেল ওয়াটার অর্পিতার জন্য এলেও জেলের নিয়মিত খাবার মুখে উঠছে না অভিনেত্রীর।
রক্ষীরা জেশপ বিল্ডিংয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন, খুবই মনখারাপ করে বসে থাকছে অর্পিতা। মাঝেমধ্যেই কান্নাকাটি করছে। অবশ্য কোর্টেই ইডি অর্পিতার প্রাণহানির আশঙ্কা করায় জেলের ভিতরেও তাঁর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে, পার্থর আইনজীবীরা এদিন বৈঠকে বসে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে কথা হয়, আগামী ১৮ আগস্ট ইডি কোর্টেই জামিনের আবেদন করা হবে, নাকি হাই কোর্টে আপিল করা হবে। সূত্রের খবর, এদিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর পরিজনের সঙ্গে কথা বলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন আইনজীবীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.