স্টাফ রিপোর্টার: স্মৃতি সতত সুখের! এই প্রবাদ সব সময় কি সবার ক্ষেত্রে খাটে? অন্তত ইরা বসুকে (Ira Basu) দেখে তো তা মনে হয় না! প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কে ইরা বসু? তাঁকে নিয়ে কেন এই আলোচনা? ইরাদেবী খড়দহের একটি নামী উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের বিজ্ঞানের প্রাক্তন শিক্ষিকা। বাংলা তো বটেই, ঝরঝরে ইংরেজিতেও কথা বলেন। স্কুলে দরকারে দুটি ভাষাতেই পড়াতেন। এ হেন মানুষটি এখন মানসিক স্থিতি খুইয়ে পথবাসী। ঠিকানা, উত্তর শহরতলির বরানগরের ফুটপাথ। ঘটনা হল, ইরাদেবীর আরও একটি পরিচয় আছে। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadeb Bhattacharjee) সহধর্মিনী মীরা ভট্টাচার্যের বোন। মানে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শ্যালিকা।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইরাদেবীকে নিয়ে আলোচনা দানা বেঁধেছে। শিক্ষিকার চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ঠিক কী হয়েছিল, সত্তর ছুঁইছুঁই বৃদ্ধা স্পষ্ট মনেও করতে পারেন না। কীভাবে সুখী জীবন থেকে ফুটপাথে ঠাঁই হল, সে বৃত্তান্তও বিস্মৃত হয়েছেন। মানসিক ভারসাম্য খানিকটা টলে গেলেও আত্মসম্মানজ্ঞান কিন্তু টনটনে। কারও থেকে চেয়ে খান না, রীতিমতো পয়সা দিয়ে খাবার কেনেন। ডানলপ বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি এটিএম। সেখানেই ছোট্ট প্লাস্টিকের ছাউনির নিচে ইরা বসুর আস্তানা। সেখানেই দিন কেটে রাত আসে। প্রাক্তন শিক্ষিকার জীবনে এতটুকু আশার আলোরেখা দেখা যায় না।
কিন্তু আগে এমন ছিলেন না। খড়দহের বাসিন্দা, প্রিয়নাথ হাই স্কুলের (Priyonath High School) সঙ্গে যুক্ত এক সিপিএম কর্মীর কথায়, “বুদ্ধবাবু এখানে সরকারি বা পার্টির মিটিংয়ে এলে ইরা বসু আসতেন। আমরা দেখেছি, ভাষণ শেষ করে ফেরার সময় উনি ইরাদেবীর সঙ্গে কথা বলছেন।” শ্যালিকার এই অবস্থা উনি জানেন? বৃহস্পতিবার বেশ কয়েক বার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে টেলিফোন করার পর মিলল একটাই উত্তর, “এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য নেই।” প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যের (Tanmoy Bhattacharya) মন্তব্য, “পারিবারিক অশান্তির জন্য ওঁর মানসিক ভারসাম্য কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে পথে পথে ঘুরছেন। এর আগেও তো ইরা বসুর সম্পর্কে লেখা হয়েছে।” সিপিএম নেতার পর্যবেক্ষণ, “সম্ভবত পেনশনের জন্য সঠিকভাবে কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি। তাই এমন অবস্থা। তবে পেনশন নিয়মিত পান বলেই শুনেছি।” এ-ও বলেছেন, “বুদ্ধবাবু পার্টির নেতা। তাঁর খবর রাখা নিয়ম। কিন্তু ইরা বসু তো পার্টির সদস্য নন!”
গতকাল সকালে বৃদ্ধাকে ডানলপ এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। মাথার উস্কোখুস্কো চুল কাঁধ পর্যন্ত ছাঁটা। এদিন বিকেলে বরানগর থানা থেকে পুলিশ আসে। সঙ্গে স্থানীয় সিপিএম নেতা কর্মীরা। অনেক অনুরোধ উপরোধের পর তাঁকে কলকাতার একটি মানসিক হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। যাওয়ার আগে পইপই করে পাখি পড়ানোর মতো করে পুলিশ ও সিপিএম কর্মীদের উনি বলেছেন, “মানুষটা (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য) অসুস্থ। ওঁকে বিরক্ত করবেন না। উনি যেন এ সব জানতে না পারেন।”
জানা গিয়েছে, শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে ইরাদেবীর কাছে তার প্রাক্তন স্কুলের থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা এসে তাকে অনুরোধ করেছিলেন এলাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি ইরা দেবী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.