Advertisement
Advertisement

Breaking News

গল্প হলেও সত্যি, ২৪ ঘণ্টায় অপরাধের কিনারা করল কলকাতা পুলিশ

হাসপাতাল থেকে বর্ডার, কয়েক ঘণ্টায় অসাধ্যসাধন।

Forget '007', Kolkata Police is here, sleuths share case story on social media
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:February 10, 2018 1:23 pm
  • Updated:February 10, 2018 1:23 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেওয়ালে একটিমাত্র আঙুলের ছাপ। মেঝেতে পড়ে একটি আধপোড়া সিগারেট। তাই দেখে চলল চুলচেরা বিশ্লেষণ। গোয়েন্দার যুক্তির জালে ধরা পড়ল অপরাধী। রহস্য উপন্যাসে এমনটা আকছারই হয়। বাস্তবের সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে এবার গল্পের গোয়েন্দাকেও হার মানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই অপরাধীকে জালে পুড়ে একটি মুমূর্ষু যুবকের প্রাণ বাঁচালেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। সেই টানটান ঘটনা বলা ভাল কৃতিত্বের কাহিনি নিজেদের ফেসবুক পেজে তুলে ধরল কলকাতা পুলিশ।

তা কী সেই ঘটনা?

Advertisement

ছেলের বয়স সবে কুড়ি ছুঁয়েছে। কিন্তু দুটো কিডনিই অকেজো। অবিলম্বে অন্তত একটার প্রতিস্থাপন দরকার, না হলে প্রাণসংশয় অবশ্যম্ভাবী। ছেলের নাম তারিক হাসান। তাঁর চিকিৎসার জন্যই বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কর্মী পঞ্চাশ বছর বয়সী লুৎফর হাসান মণ্ডলের কলকাতায় আসেন সপ্তাহখানেক আগে। সঙ্গে এসেছিলেন আয়নাল হক সর্দার, সম্পর্কে লুৎফরের শ্যালক। যিনি কিডনি দান করতে রাজি হয়েছেন।

মুকুন্দপুরের কাছে একটি গেস্ট হাউসে উঠেন তিনজন। পিতাপুত্র লুৎফর-তারিক, এবং আয়নাল। আর এন টেগোর হাসপাতালে তারিক ভর্তি হবেন কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার পর, এমনই ঠিক হয়েছিল। তবে সেই ছক অবশ্য ওলটপালট হয়ে যায় পরের দিন সকালে। ওই দিন ঘুম থেকে উঠে লুৎফর আবিষ্কার করলেন, শ্যালক আয়নাল উধাও। খোঁজ মিলছে না সঙ্গে পাসপোর্ট-সহ অন্যান্য জরুরি নথি, এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে আনা ১৩,৫০০ মার্কিন ডলার, ৭০ হাজার ভারতীয় টাকা এবং ৬০ হাজার বাংলাদেশি টাকা।

[ফটোশুটের টোপ দিয়ে অপহরণ, যৌনদাসী হিসেবে নিলামে ব্রিটিশ মডেল]

গুরুতর অসুস্থ ছেলের চিকিৎসার জন্য বিদেশে এসে হঠাৎই পাসপোর্টহীন এবং কপর্দকশূণ্য হয়ে পড়লে যা হয় কার্যত সেই অবস্থায় হয় ওই বাংলাদেশি নাগরিকের। দ্রুত ছোটেন পূর্ব যাদবপুর থানায়। অভিযোগ দায়ের হয়। তড়িঘড়ি গঠিত হয় বিশেষ তদন্তকারী দল।

গেস্ট হাউসের আশেপাশের সিসি টিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। তবে কোনওভাবেই ক্লু মেলেনি। তদন্তকারীদের মাথায় রাখতে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপারটাও। আয়নাল যদি চুরির টাকা নিয়ে বাংলাদেশে চলে যায়, তবে তাকে ধরা অসম্ভব না হলেও পদ্ধতিগত কারণে অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ আর জটিল হয়ে উঠবে। এবং আরও যেটা গুরুত্বপূর্ণ, টাকাটা দ্রুত উদ্ধার করতে না পারলে তারিকের চিকিৎসা নিয়েও দেখা দেবে অনিশ্চয়তা। এমন এক জটিল পরিস্থিতিতে প্রযুক্তির সহায়তা নিলেন গোয়েন্দারা। লুৎফরের মোবাইল ফোনটিও খোয়া গিয়েছিল। সেই ফোন এবং আয়নালের মোবাইল, দুটোতেই শুরু হল আপৎকালীন ভিত্তিতে নজরদারি। মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে হদিশ মিলল সোনারপুর নিবাসী জনৈক মুজিবর মণ্ডলের। ছেচল্লিশ বছরের মুজিবর মূলত দালাল। এপার বাংলা-ওপার বাংলায় পারাপারের ব্যবস্থা করে টাকার বিনিময়ে।

তারপরই গোয়েন্দাদের টিম ছুটল সোনারপুর, জালে উঠল মুজিবর। জেরায় সে জানায়, স্মরজিৎ দাস নামে এক তার সঙ্গী এই ব্যবস্থা করে। সে ওই টাকাপয়সা এবং অন্যান্য সামগ্রী সীমান্তের ওপারে পাঠানোর বন্দোবস্ত করে দেয়। তদন্তকারীরা জানতে পারেন ইতিমধ্যে স্মরজিৎ রওনা দিয়েছে বর্ডারের দিকে। সঙ্গে আয়নাল। কালবিলম্ব না করে তদন্তকারী দল ছোটে পেট্রাপোলে বাংলাদেশ বর্ডারের উদ্দেশ্যে। পুলিশের সঙ্গে ছিল মুজিবর। লক্ষ্য, সীমান্ত পারাপারের আগেই আয়নাল আর স্মরজিৎকে ধরা। কিন্তু সময় ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে অনেকটাই। অফিসাররা দিব্যি আন্দাজ করতে পারেন, তাঁদের পৌঁছানোর আগেই বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়বে আয়নাল।

এখন উপায়? মুজিবরকে দিয়ে ফোন করানো হল আয়নালকে, স্পিকার ‘অন’ করে। কথোপকথন হল মোটামুটি এইরকম।

– কদ্দূর পৌঁছলেন আয়নালভাই?

– এই তো, প্রায় এসে গেছি মুজিবরভাই।

– কোথায় আছেন এখন?

– রামনগর রোডের কাছে। একটা দোকানে চা খাচ্ছি। এখান থেকে বড়জোর দেড়-দুই কিলোমিটার গেলেই সীমান্ত।

ওটুকুই যথেষ্ট ছিল। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে যোগাযোগ হয় বনগাঁ থানায়। বলা হল সব। আয়নালের চেহারার বিবরণ মুজিবরের থেকে জেনে বনগাঁ থানার ওসি-কে জানিয়ে দেওয়া হয়। ওসি দ্রুত ছুটলেন। বর্ডারের থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে বনগাঁ থানার গাড়ি আটকাল আয়নাল-স্মরজিৎকে। উদ্ধার হল সমস্ত নথি এবং টাকা। তারিকের চিকিৎসা থেমে থাকবে না, এটুকু অন্তত নিশ্চিত করা গেল। আপাতত কিডনির অন্য ‘donor’-এর খোঁজ করছেন লুৎফর। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এই অপরাধের যাঁরা কিনারা করলেন তাঁরা হলেন- ইনস্পেকটর মলয় বসু (ওসি, পূর্ব যাদবপুর থানা), ইনস্পেকটর করুণা শঙ্কর সিং (অ্যাডিশনাল ওসি, পূর্ব যাদবপুর থানা),  এসআই পার্থপ্রতিম রাহা, এসআই কাজি রবিউল ইসলাম, এসআই তন্ময় হাজরা এবং এসআই তরুণ বৈরাগী।

প্রায়ই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠে পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে। এমনই পরিস্থিতিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অসাধ্যসাধন। চুরি যাওয়ার অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার। নাটকীয় কায়দায় কলকাতা পুলিশের এই অপারেশন তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। শুধু তাই নয় এক মুমূর্ষু যুবকের প্রাণ বাঁচিয়ে মানবতার নজির গড়লেন তাঁরা।

[মেয়ের সাজে ৪০০০ হাজার সুন্দরীকে প্রতিযোগিতায় হারালেন যুবক]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement