অর্ণব আইচ: কাপড়ে শুক্রের চিহ্ন থেকে মিলবে ধর্ষণের প্রমাণ। কিন্তু জানা যাবে কীভাবে? কোনও ঘটনাস্থলে রয়েছে লাল দাগ। কিন্তু তা রক্ত না পানের পিক? যে বস্তুটি উদ্ধার হয়েছে, তার মধ্যে কী ধরনের বিস্ফোরক রয়েছে? এত প্রশ্নের উত্তর এবার মিলবে নিমেষেই। উত্তর পেতে পুলিশকে আর বেশিদূর যেতে হবে না। লালবাজারের মধ্যেই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর পুলিশের হাতে রেজাল্ট তুলে দেবেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। সেই প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের সাহায্যের জন্য তাঁদের আরও ৬ জন সহকারী নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লালবাজারের কর্তারা। তাঁরা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের টেকনিক্যাল সহকারী হিসাবেই কাজ করবেন। লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, মূলত চুক্তির ভিত্তিতেই তাঁদের নিয়োগ করা হবে। ‘ওয়াক ইন ইন্টারভিউ’-এর মাধ্যমে বাছাই করা হবে তাঁদের। এখন শহরের মধ্যে যে কোনও খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যু, অগ্নিকাণ্ড, এমনকী, পথ দুর্ঘটনা ঘটলেও সেখানে তাড়াতাড়ি হাজির হন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। তার জন্য লালবাজারেই তৈরি হয়েছে ফরেনসিকের মোবাইল ইউনিট। এবার লালবাজারের মধ্যেই তৈরি হয়েছে ফরেনসিক পরীক্ষাগার। সেখানে বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষার কাজও শুরু হয়েছে। তাই ফরেনসিকের কাজের চাপও বেড়ে চলেছে। সেই কারণেই নতুন এই সহকারীদের নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লালবাজারের কর্তারা।
[OMG! জামা পালটাতে গিয়ে বাথরুম থেকে পালাল অপহৃত ছাত্রী, তারপর…]
পুলিশ ও ফরেনসিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও ঘটনার পর ফরেনসিক পরীক্ষা আবশ্যিক। কিন্তু বেলগাছিয়ার ফরেনসিক পরীক্ষাগারে যথেষ্ট চাপ থাকার কারণেই রেজাল্ট পেতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। কিন্তু তাতে ব্যাহত হয় তদন্ত। সেই কারণে এবার প্রায় কোটি টাকা দিয়ে পরীক্ষাগারে বেশ কিছু নতুন যন্ত্র ও কিট নিয়ে আসা হয়েছে। যে কোনও ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত অথবা নির্যাতিতার কাপড়ে শুক্রের চিহ্ন থাকলে ধর্ষণ প্রমাণ করা পুলিশের পক্ষে সহজ হয়। বিশেষ কিটের সাহায্যে প্রমাণিত করতে হয় যে, সেই বস্তুটি শুক্র। সেই শুক্র পরীক্ষার কিট এবার নিয়ে আসা হয়েছে লালবাজারের পরীক্ষাগারে। নিয়ে আসা হয়েছে রক্ত পরীক্ষার কিটও। কোনও ঘটনাস্থলে গিয়ে অনেক সময় লাল রঙের কিছু পড়ে থাকতে দেখে ধন্দে পড়ে পুলিশ। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় থাকে না, বস্তুটি রক্ত না কি গুটখা অথবা পানের পিক। বিশেষ করে দুর্ঘটনাস্থল বা খুনের ঘটনাস্থলে অনেক সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এবার থেকে রক্ত পরীক্ষার কিটের সাহায্যে হাতেনাতেই প্রমাণ করা সম্ভব হবে লাল বস্তুটি আসলে কী।
একইসঙ্গে নিয়ে আসা হয়েছে মাদক ও বিস্ফোরক পরীক্ষার কিট। এর ফলে কোনও অভিযুক্তর জামার পকেটে সামান্য মাদকের চিহ্ন থাকলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা ধরে ফেলা সম্ভব হবে। লালবাজার থেকেই তাঁরা পেয়ে যাবেন সেই পরীক্ষার রেজাল্ট। আবার বিস্ফোরক সন্দেহে কোনও বস্তু উদ্ধার করার পর সহজে লালবাজারেই তা পরীক্ষা করা যাবে। বস্তুটি আদৌ বিস্ফোরক কি না, অথবা বিস্ফোরক হলেও তা কী ধরনের, সেই রিপোর্টও লালবাজারে বসে পেয়ে যাবেন পুলিশ আধিকারিকরা। এ ছাড়াও লালবাজারের পরীক্ষাগারে আনা হয়েছে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ। কোনও ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া অতি সূক্ষ্ম চুল বা সুতোও এই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে কয়েক হাজার গুণ বড় করে দেখা যাবে। প্রয়োজনে রক্তের কোষের নমুনাও পরীক্ষা করা যাবে সহজে। ফরেনসিক ফটোগ্রাফির জন্যও নিয়ে আসা হয়েছে অত্যাধুনিক ক্যামেরা। তাড়াতাড়ি ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পেলে প্রত্যেকটি মামলার তদন্তও ত্বরান্বিত হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[পার্ক স্ট্রিটের ‘দ্য ৪২’ বিল্ডিংয়ে ভয়াবহ আগুন, ছড়াল আতঙ্ক]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.