Advertisement
Advertisement
R G Kar Medical College Hospital

ডাক্তারদের আইনি লড়াইয়ে বিদেশি চিকিৎসকদেরও সহযোগিতা, আসছে অর্থ

কেমন সাড়া মিলছে বিদেশ থেকে?

Foreign funds from Doctors in R G Kar Medical College Hospital
Published by: Paramita Paul
  • Posted:October 17, 2024 2:42 pm
  • Updated:October 17, 2024 2:42 pm

ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: কেউ থাকেন ইউরোপ-আমেরিকায়। কেউ আবার এশিয়ার কোনও দেশে। সকলেই পেশায় চিকিৎসক। এমবিবিএস শিক্ষার শিকড় গেঁথে কলকাতায়, নিদেনপক্ষে আর জি কর বা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের ঘটনা ভীষণভাবে ছুঁয়ে গিয়েছে তাঁদেরও। কিন্তু বিদেশ-বিভুঁইয়ে বসে দূরে থাকার যন্ত্রণা সয়েও ওঁরা সকলেই জাস্টিস ফর আর জি কর আন্দোলনে শামিল হতে চান। মানসিকভাবে তো বটেই, আর্থিকভাবেও।

জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে এভাবে অর্থসহায়তার এমন বিপুল আবেদন বিদেশ থেকে এর আগে দেখা যায়নি বলে জানাচ্ছেন কলকাতার চিকিৎসকরা। ছটি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথমঞ্চের কর্তারা আরও জানাচ্ছেন, চলতি আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিতে একপ্রকার মরিয়াই প্রবাসী চিকিৎসকরা। কিন্তু তাঁদের অনুদান গ্রহণ করার উপায় নেই বৈদেশিক মুদ্রা আইনে।

Advertisement

যৌথমঞ্চের তরফে ডা. উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যৌথমঞ্চের কোনও নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। যাঁরা আর্থিক সাহায্য করতে চান তাঁদের আত্মীয় বন্ধুদের মাধ্যমে পাঠাতে পারেন। সরাসরি বিদেশি আর্থিক সাহায্য নেওয়া যায় না। সূত্রের খবর, তহবিল গড়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের অ্যাকাউন্ট। ওরা মূলত আইনি লড়াইয়ের জন্য তহবিল সংগ্রহ করছে। আর শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের তরফে ধরনা মঞ্চের দৈনন্দিন খরচ জোগার করা হচ্ছে। মেডিক্যালে মঞ্চ, মাইক আর খাবার ও জল নিয়ে রোজ গড়ে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।” তিনি জানান, এই খরচ লাগাতার হয়ে চলেছে। যার সাহায্যে শুধু এখানকার বা ভিন রাজ্যের চিকিৎসকরাই নয়, এগিয়ে এসেছেন ইউরোপ-আমেরিকার প্রবাসী বাঙালি চিকিৎসকরাও।

কিন্তু বিদেশি অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ গ্রহণের সমস্যা রয়েছে। পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় প্রাক্তন চেয়ারপার্সন সোনু জৈন জানাচ্ছেন, বিদেশি অ্যাকাউন্ট থেকে এখানকার অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন হলে তা ধরা পড়ে না কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের স্ক্যানারে। তাই ফরেন কারেন্সি রেগুলেশন অ্যাক্ট মেনে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একটি ফর্ম পূরণ করতে হয়। তাতে অনুমোদন এলে, তার পর আর বিদেশি অর্থ গ্রহণে সমস্যা নেই। ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম সূত্রে খবর, তারা সংস্থার চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের সঙ্গে পরামর্শ করে ওই ফর্ম পূরণ করছেন, যাতে আগামী মঙ্গলবার থেকে বিদেশি অ্যাকাউন্টের অনুদান গ্রহণে কোনও সমস্যা আর না থাকে।

চিকিৎসক সংগঠনগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে, আন্দোলন চালাতে বিভিন্ন কর্মসূচির পিছনে জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে। একটা মিছিল আয়োজনে খরচ ন্যূনতম ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা। দিনভর আর জি কর, কলকাতা মেডিক্যালের ধরনা মঞ্চ ভরিয়ে রাখতে ইলেকট্রিক, মাইক, খাবার, জল ইত্যাদি মিলিয়ে খরচ অন্তত ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সুপ্রিম কোর্টে চলা আরজি কর নিয়ে মামলায় একটা শুনানি মানেই আইনজীবীদের ফি বাদে শুধুমাত্র যাতায়াত ও থাকা-খাওয়া বাবদ খরচ কমপক্ষে লাখ দেড়েক টাকা।

এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে যে বিপুল খরচ হচ্ছে, তার দায়ভার ছটি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের পাশাপাশি বইছে মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার, সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের মতো বেশ কিছু চিকিৎসক সংগঠন। সকলে মিলে দুহাত তুলে অর্থ সহায়তা করছে এই আন্দোলন সফল করতে। এবং সংগঠনের কর্তারা খুশি যে, সেই তালিকায় এখন দেখা যাচ্ছে, জাস্টিস ফর আরজি কর আন্দোলনে উত্তাল হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাও। সেখানে থাকা হাজারো প্রবাসী ও অভিবাসী বাঙালি এবং অবাঙালি ভারতীয়দের বিপুল আর্থিক সমর্থন পাচ্ছে এই আন্দোলন।

ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি কৌশিক চাকী জানাচ্ছেন, যতদিন না বিদেশি অনুদান গ্রহণের অনুদান মিলছে, ততদিন প্রবাসে থাকা ওই চিকিৎসকরা তাঁদের ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেই অর্থসহায়তা পাঠাচ্ছেন। কিন্তু ২৫-৩০ বছর ইউরোপ-আমেরিকায় থাকা অনেক চিকিৎসকেরই এখন আর এ দেশে অ্যাকাউন্ট নেই। তাঁদের জন্য এবং বিদেশি চিকিৎসক সংগঠনের জন্যই বিদেশি মুদ্রা গ্রহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি এখন জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।

কেমন সাড়া মিলছে বিদেশ থেকে?

১৯৯৬-তে বিলেতে যাওয়া ইউকে-র লিঙ্কন শহরের ফরেন্সিক সাইকিয়াট্রির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঞ্জজন্য ঘটক বলছেন, “গত সপ্তাহে ন্যাশনাল মেডিক্যালের বিলেত প্রবসী প্রাক্তনীদের রি-ইউনিয়ন ছিল। সেখানেও পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল আর জি করের আলোচনা। উপস্থিত শতাধিক চিকিৎসক মানসিকভাবে এবং আর্থিকভাবে এই আন্দোলন সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাঙালি-সহ গোটা ইউ-কের অন্তত ৭০০ ভারতীয় ডাক্তার অর্থসহায়তায় রাজি।’ বস্টন প্রবাসী বাঙালি চিকিৎসক অভিজিৎ ব্রহ্মচারী জানাচ্ছেন, কলকাতার চিকিৎসকদের মতো একই রকম ভাবে এই ঘটনা নাড়া দিয়েছে ইউএসএ-তে প্রবাসী চিকিৎসকদের। বিবিসি-র মতো প্রথম সারির টিভি চ্যানেল ও পোর্টাল এবং ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, ল্যান্সেটের মতো বিজ্ঞান পত্রিকাও এই ঘটনা রিপোর্ট করেছে। ফলে আবেগের নিরিখে অভিবাসী চিকিৎসকদের মনেও একই রকম ছাপ ফেলেছে এই ঘটনা। ।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement