অর্ণব আইচ: ভিতরে ভিতরে নেশায় বুঁদ। কিন্তু বাইরে থেকে তা বোঝার উপায় নেই। কারণ, মুখ থেকে গন্ধ বের হচ্ছে না যে। বিদেশি মাদক থেকে বিপদের শঙ্কা করছে ট্রাফিক পুলিশও। কারণ, এক্সট্যাসি বা ইয়াবার মতো মাদকে আসক্ত যুবক বা তরুণদের হাতেও উঠে আসছে স্টিয়ারিং।
বুধবার রাতেই তিলজলা রোডের একটি স্নুকার ক্লাব থেকে উদ্ধার হয়েছে বিদেশি মাদক এমডিএমএ বা এক্সট্যাসি। এই মাদক পাচারের অভিযোগে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই কলেজ ছাত্র। গোয়েন্দারা জেনেছেন, রাতের কলকাতায় রেভ পার্টিতে এই বিদেশি মাদকের চাহিদা রয়েছে। এই মাদকগুলির দাম এতটাই বেশি যে, উচ্চবিত্তরা ছাড়া রেভ পার্টিতে এসে এই মাদক নেওয়া প্রায় অসম্ভব। যে যুবক বা তরুণরা এই রেভ পার্টিতে এসে মাদকাসক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই গাড়ি বা বাইক চালান।
ট্রাফিক পুলিশের এক আধিকারিকের মতে, মদ্যপান করে গাড়ি চালানো যতটা বিপজ্জনক, গাঁজা বা চরসের মতো ‘শুকনো নেশা’ করে অথবা কোকেন, এক্সট্যাসি, ইয়াবার মতো মাদক খেয়ে গাড়ি চালানো তার চেয়ে কম বিপজ্জনক নয়। আবার বিদেশি মাদক নিলে ‘হ্যালুসিনেশন’ তৈরি হয়। সেই ক্ষেত্রে ‘রঙিন স্বপ্ন’ দেখতে দেখতে গাড়ির স্টিয়ারিং বা বাইকের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিলে তার ফল হতে পারে মারাত্মক। যদিও হেরোইন বা ব্রাউন সুগারের মতো মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো খুব সহজ নয় বলেই অভিমত পুলিশকর্তাদের।
সাধারণত প্রত্যেক রাতেই পার্ক স্ট্রিট (Park Street) থেকে শুরু করে বাইপাস ও কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মদ্যপ গাড়ি ও বাইক চালক ধরতে অভিযান চালানো হয়। ব্রেথ অ্যানালাইজার যন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয় চালকদের। প্রায় প্রত্যেকদিনই ২২ থেকে ২৫ জন মদ্যপ গাড়ি ও বাইক চালকের লাইসেন্স তিন মাসের জন্য সাসপেন্ডও করা হচ্ছে। শুধু মদ্যপান করলেই ফুঁ দিলে ব্রেথ অ্যানালাইজারে ধরা পড়ে। আর সেই কারণে অনেক গাড়ির আরোহী বা মালিকই এখন মদ্যপানের পর অন্য চালকের সাহায্যে গাড়ি চালাচ্ছেন। অথচ গাঁজা বা বিদেশি মাদক নেওয়ার পর গাড়ি চালালে ব্রেথ অ্যানালাইজারে ধরা পড়া প্রায় অসম্ভব।
লেক টাউন ও নিউ টাউনের দুই যুবক তথা কলেজছাত্র মাদকসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশ জেনেছে, তারাও বাইক ও গাড়ি করেই যাতায়াত করত। এমডিএমএ অথবা এক্সট্যাসির মতো বিদেশি মাদক নেওয়ার পরও গাড়ি ও বাইক চালাত তারা। তাই এবার থেকে এই ব্যাপারে আরও সতর্ক হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। ই এম বাইপাস, প্রত্যেকটি বাইপাস কানেক্টর ও বিভিন্ন রাস্তায় নাকা চেকিংয়ে গাড়ি চালকদের পরীক্ষার সময় ব্রেথ অ্যানালাইজারে কিছু ধরা না পড়লেও ট্রাফিক গার্ডের আধিকারিকরা চালকদের আচরণের উপর নজর রাখছেন। বিশেষ করে তরুণ ও যুবকদের উপরই থাকছে পুলিশের নজর। যদি পুলিশের মনে হয় যে, কোনও চালক অস্বাভাবিক আচরণ করছেন, তখনই তাঁকে আটক করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে। সন্দেহ হলে হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.