ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: মুখে মাস্ক, মাথায় টুপি। শপিংমলের বিপণিতে এসে হাজির হয় বিদেশি ও বিদেশিনী। ক্যাশ গুনতে দেখলেই বলে, “ভারতীয় নোটগুলি একেবারে ডলারের (Dollar) মতো দেখতে। একটু দেখতে পারি?” এভাবেই ক্যাশিয়ারকে অন্যমনস্ক করে দিয়ে নগদ টাকা হাতিয়ে পালাচ্ছে ‘বিদেশি বান্টি বাবলি’। এই বিদেশি যুগলের দাপটে ঘুম ছুটেছে শপিং মলের কর্মীদের। মাথা ঘামাতে হচ্ছে কলকাতা পুলিশকেও (Kolkata Police)।
এর আগে একই ভাবে মাস্ক ও টুপি পড়ে একের পর এক এটিএমে (ATM) হানা দিয়ে টাকা হাতিয়েছে রোমানীয় গ্যাং। তাদের হাত থেকে বাঁচতে এটিএম অনেক আধুনিক করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি মোডাস অপারেন্ডি বদলে এবার কলকাতায় কেপমারি করতে নেমে পড়েছে রোমানীয়রাই? না কি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও দেশের বাসিন্দা?
পুলিশ জানিয়েছে, গত কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতায় তিনটি ঘটনার সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে দুটিই দক্ষিণ কলকাতার শপিংমলে (Shopping malls)। শেষ ঘটনাস্থল – ঘটেছে পূর্ব কলকাতার ফুলবাগান থানা এলাকার একটি শপিংমল। অভিযোগ অনুযায়ী, ফুলবাগানের ওই শপিংমলটি বন্ধ হওয়ার সময় তার একটি দোকানে এসে হাজির হয় এক বিদেশি যুগল। ইংরেজিতে কথা বলছিল তারা। জিজ্ঞাসা করে, তারা এখন জিনিসপত্র কিনতে পারবে কি না। দু’জনকেই বলে দেওয়া হয় যে দোকান বন্ধ হতে চলেছে, এখন কেনাকাটা সম্ভব নয়। তবে কথা বলতে বলতে দোকানের ভিতরে ঢুকে যায় তারা।
সেসময় দু’জন ক্যাশিয়ার নগদ টাকা মেলাচ্ছিলেন। তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বিদেশি যুগল। ক্যাশিয়ারদের হাতে থাকা ৫০০ ও ১০০ টাকার নোটের দিকে তাকিয়ে তারা বলে, এগুলি একেবারে ডলারের মতো দেখতে। এরপর নোটগুলি হাতে নিয়ে দেখতে চায় তারা। কিছু বলার আগেই ওই বিদেশিনী নোটের বান্ডিল তুলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তা দেখতে শুরু করে। ভারতীয় নোটগুলি দেখতে খুব সুন্দর, এমন প্রশস্তিবাক্যে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে। তারপর বান্ডিলটি ফেরৎ দিয়ে দোকান থেকে বিদায় নেয় ওই যুগল। এরপর টাকা গোনা শেষ হওয়ার পর মাথায় বাজ পড়ে দুই ক্যাশিয়ারের। দেখেন, ক্যাশ থেকে উধাও ৪০ হাজার ৫০০ টাকা। তাঁরা বুঝতে পারেন, কথা বলার ফাঁকেই টাকা হাতিয়েছে দুই বিদেশি।
দোকানের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে ফুলবাগান থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। ফুলবাগান থানার আধিকারিকরা খবর নিয়ে জানতে পারেন, কিছুদিন আগেই যাদবপুরের একটি শপিংমলে ভিতরে একই পদ্ধতিতে টাকা হাতিয়েছে বিদেশি ‘বান্টি-বাবলি’। পুলিশের মতে, তাদের মূল টার্গেট শপিংমলের বড় দোকানগুলি। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই দোকান বন্ধ করার সময় তারা এসেছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু দুজনের মুখ ঢাকা ও মাথায় টুপি। তাই তারা যে শুধু বিদেশি, সেটুকুই বোঝা গিয়েছে।
এই বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সিকিউরিটি কন্ট্রোলকেও সতর্ক করা হয়েছে। তারা কলকাতার কোন হোটেল বা গেস্ট হাউসে রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারা অন্য শহর ঘুরে কলকাতা এসেছে, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। পুলিশের ধারণা, অন্য কোন শপিংমলে তারা একইভাবে টাকা হাতাতে পারে। তাই শপিং মলগুলিকে পুলিশ সতর্ক করছে। একইসঙ্গে দেশের অন্য কোনও শহরে এই ‘বান্টি বাবলি’ কেপমারি করেছে কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.