নব্যেন্দু হাজরা: গোলাপি, বেগুনি, কমলা, সবুজ, হলুদ। দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে থরে থরে ফুল সাজানো রয়েছে। কিন্তু কাছে গেলেই বোঝা যাবে, এ আসলে ফুল নয়, ফুলকপি। কলকাতার বাজার ছেয়েছে রঙিন ফুলকপিতে। এতদিন যা শুধু শপিং মলের গন্ডিতেই আটকে ছিল তাই এখন মিলছে খোলা বাজারেও। হাই প্রোটিনের দোহাই দিয়ে সাধারণ ফুলকপির প্রায় সাত-আট গুণ দামে বিকোচ্ছে এই কপি।
ফ্লান্স আর নেদারল্যান্ডসে জনপ্রিয় এই রঙিন কপি এখন শহর-শহরতলির বাজারেও হট কেকের মতো বিকোচ্ছে। সাদা ফুলকপি বাদ দিয়ে এতদিন গেরস্তের পাতে দেখা মিলছিল সবুজ ব্রোকোলি। কিন্তু চাহিদায় এবার ব্রোকোলিকেও যেন পিছনে ফেলে দিচ্ছে এই রেনবো ফুলকপি। বিক্ষিপ্তভাবে দু’এক জায়গায় এর আগে তা কৃষক ফলালেও শহর-শহরতলির বাজারে সেভাবে নজরে আসেনি যেমনটা এবার এসেছে। শীত শেষ হতে চললেও রঙিন কপির বাজার বেশ ভালই।
কৃষকরা বলছেন, বিভিন্ন রংয়ের কপির বিভিন্ন গুণাগুণ। তবে সবেতেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং প্রচুর ক্যারোটিন থাকে। এছাড়া এই কপি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় শরীরে। আর খেতেও বেশ সুস্বাদু। এই স্বাদ এবং দর্শণের গুণেই বাজারে ‘এলিট ক্লাসের’ মধ্যে তা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানুষ এখনও বিভ্রান্ত। কেউ স্বাস্থ্যকর ভেবে বাজারে গিয়ে ব্যাগে ভরছেন। কেউ আবার বলছেন, এতে রং রয়েছে। ফলে খেলে শরীরে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। চিকিৎসকরাও এখনই একে স্বাস্থ্যসম্মত বলতে নারাজ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বিষয়টি সরকারের খাবারের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের যে দপ্তর আছে, তার দেখা উচিত।
কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর, বেঙ্গালুরু থেকে এবছর এসেছে এই রঙিন কপির বীজ। মূলত নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের সীমান্তে এবছর রঙিন ফুলকপির চাষ হয়েছে। চাষ করতে কৃষকদের কপিপিছু খরচ হচ্ছে দশ টাকা মতো। তা হাতঘুরে বাজারে বিকোচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা পিস। দুর্গাপুর এবং উত্তরবঙ্গের দু’একজন কৃষক এই কপির এবার চাষ করেছেন। ব্যবসায়ীদের কথায়, যেমন রঙিন ক্যাপসিকাম বাজারে প্রথম এসেছিল, তাখন অনেকেই তাতে রঙ করা হয়েছে ভেবে কিনতেন না, কিন্তু পরে তাঁরাই সেই ক্যাপসিকাম কিনে খাচ্ছেন খাবারের স্বাদ বাড়াতে। এই ফুলকপির ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। শুরুতে লোকে ভয় পেলেও এখন ভালই কিনছেন। বিভিন্ন তরকারিতে দিচ্ছেন স্বাদ বাড়াতে।
রাজ্য সরকারের কৃষি বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে বলেন, “নতুন এই রঙিন কপির চাহিদা বেশ ভাল। এবছর কম করে ফলন হয়েছে। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের সীমানায় বেশি চাষ হয়েছে। তবে চাষিরা লাভের মুখ দেখেছেন। তাই আগামী বছর আরও ফলন বাড়ানো হবে।” বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “এই ফুলকপিতে রং ব্যবহার হয়েছে কিনা তা সরকারের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্টের ব্যবহার দেখা উচিত। কারণ কোনও রং খাবারে ব্যবহার হলে তা থেকে লিভার ও কিডনির ক্ষতি করে। বিষয়টি সরকারের নজরে আসা উচিত।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.