খোলা হাওয়া আয়োজিত বিকশিত ভারত ইস্টার্ন ইন্ডিয়া অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ সঙ্গে স্বপন দাশগুপ্ত ও অশোক লাহিড়ী, তথাগত রায়। ছবি: সায়ন্তন ঘোষ
স্টাফ রিপোর্টার: কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বকেয়া টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সুর চড়িয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই টাকা দ্রুত মেটানোর দাবিতে দলের পক্ষ থেকে ব্রিগেডে জনসভার ডাকও দেওয়া হয়েছে ১০ মার্চ। লোকসভা ভোটের আগে এনিয়ে তৈরি হওয়া অস্বস্তি কাটাতে ফের ২৫ লক্ষ ভুয়ো জব কার্ড ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির যুক্তি খাড়া করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। মঙ্গলবার কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘২৫ লক্ষ ভুয়ো নামে জব কার্ড বানানো হয়েছে। ২৫ লক্ষ ভুয়ো জব কার্ড! এই টাকা কীভাবে দেব? এটা কার টাকা? আমার বাবার পয়সা নাকি? না! এটা করদাতাদের টাকা ভাই! ২৫ লক্ষ ভুয়ো জব কার্ডের জন্য আমি করদাতাদের টাকা কীভাবে দেব?’’
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই কথার জবাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘এতো মানুষের প্রাপ্য টাকা। কেন্দ্র দিচ্ছিল না। মানুষকে বঞ্চনা করছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলন করছেন। রাজ্য সরকার তাদের সেই টাকা ফেরাচ্ছে। কেন্দ্রের দেওয়ার কথা। সেই কর্তব্য তারা পালন না করা সত্ত্বেও নিজের মমতা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অভাব ঢেকে দিলেন।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘বিকশিত ভারত’ ভাবনা নিয়ে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে ‘খোলা হাওয়া’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন নির্মলা সীতারামণ। সেখানে রাজ্য সরকারে বিরুদ্ধে একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা, মিড ডে মিলের মতো একাধিক প্রকল্পে দুর্নীতির পুরনো অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের যৌথ কমিটির তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে রাজ্য ২০২২ সালে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে ১৫ কোটি ভুয়ো মিড মিলের বিল জমা দেওয়া হয়েছে। টাকার অঙ্কে ১০০ কোটি টাকা। মাত্র চার মাসে এই দুর্নীতি হয়েছে।
১০০ দিন প্রকল্পের টাকা বন্ধ নিয়ে সীতারামণ বলেন, ‘‘ভেবে দেখুন, ২৫ লক্ষ ভুয়ো নামে জব কার্ড বানানো হয়েছে। রাজ্য সরকারের কাজ ছিল যেসব জায়গায় ভুয়ো কার্ডের জন্য টাকা চলে গিয়েছে, সেই টাকা ফিরিয়ে আনা এবং সঠিক মানুষকে টাকা দেওয়া। কিন্তু টাকা ফেরানো নাকি অসম্ভব!’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ ভুয়ো জব কার্ডধারীদের কাছ থেকে টাকা না ফিরিয়ে রাজকোষ থেকে নতুন করে প্রাপকদরে টাকা দেওয়া হচ্ছে। একই কাজে দুবার সাধারণ মানুষের করের টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে। করদাতাদের সঙ্গে দ্বিতীয়বার ধোঁকা দেওয়া।’’ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অভিযোগ করেন, যে সব কাজ মনরেগার আওতায় হওয়ার কথা নয়, সেই সব কাজও করানো হচ্ছে। বেসরকারি ক্ষেত্রে কাজের জন্য সরকারি ফান্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। চা বাগানে মনরেগার কাজ হচ্ছে। কিন্তু একশো দিনের কাজের প্রকল্প বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য নয়।
এদিনের বক্তব্য রাখেন উদ্যোক্তা ‘খোলা হাওয়া’-র সভাপতি প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, অর্থনীতিবিদ ও বিধায়ক অশোক লাহিড়ী, বিজেপি নেতা তথাগত রায়। এই অনুষ্ঠানের প্রেক্ষিত প্রসঙ্গে স্বপনবাবু বলেন, ‘‘আজ দেশেবাসীর মধ্যে একটা উচ্চ আশার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ হতে চেলেছে আমাদের দেশ। কিন্তু সেই উত্তেজনা বাংলায় বসে বোঝা সম্ভব নয়। এখানে আমরা আতঙ্কে থাকি, কখন তোলাবাজি হবে। মোদিজির ‘বিকশিত ভারত’ ভাবনার সঠিক ‘এসেন্স’-টা নির্মলাজি দিতে পারবেন।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.