নব্যেন্দু হাজরা: অবশেষে সাময়িক স্বস্তি। বউবাজারের (Bowbazar) মেট্রোর সুড়ঙ্গে মাটি থেকে জল বেরনো বন্ধ। শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ জল বেরনো বন্ধ হয়। চলছে কেমিক্যাল গ্রাউটিংয়ের কাজ। আগামী ২৪ ঘণ্টা বিপর্যস্ত এলাকায় পর্যবেক্ষণ জারি থাকবে বলেই মেট্রো সূত্রে খবর। এদিকে, শনিবার বেলা বারোটায় মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে বৈঠকে বসবে কেএমআরসিএল। সম্ভবত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ চালানোর পরামর্শ দিতে পারেন মেয়র। ওই বৈঠকে মেট্রো কর্তৃপক্ষ কী জানায়, সেদিকেই এখন নজর সকলের।
মিনিটে ২০০ লিটার। দুই সুড়ঙ্গের মাঝে ক্রস প্যাসেজ খুঁড়তেই হড়কা বানের বেগে বেরোতে শুরু করে জল। সেই জলের প্রবল চাপে সরে মাটি। আর তাতেই ফাটল ধরে একের পর এক বাড়িতে। শুক্রবার ভোররাতে বউবাজারের মদন দত্ত লেনের ১০টি বাড়িতে ফাটল স্বাভাবিকভাবেই প্রকল্পের সুরক্ষাবিধি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। কারণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যে এলাকায় দুই সুড়ঙ্গের মাঝে ক্রস প্যাসেজ তৈরি হচ্ছিল, সেই এলাকা তো বটেই, তার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকেও শুক্রবার স্রোতের মতো জল বেরোতে শুরু করে। জল গিয়ে সুড়ঙ্গের দু’দিকে ধাক্কা মারে। সেই ধাক্কাতেই ক্রমশ মাটি আলগা হয়ে যায়। আর মাটি আলগা হতেই ফাটল ধরে বাড়ির ছাদে এবং তলায়।
কেএমআরসিএলের (KMRCL) কর্তাদের কথায়, যে গতিতে জল বেরচ্ছিল, তা সামাল দেওয়া যায়নি গ্রাউটিং করে। এটা নতুন জায়গায় বিপত্তি। আগের দুই বিপর্যয় যেখানে ঘটেছিল, তার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। মিনিটে ২০০লিটার করে জল বেরোচ্ছিল সুড়ঙ্গে খোঁড়া ক্রস প্যাসেজের গর্ত থেকে। টানেলের মাঝে ছিল সাড়ে পাঁচ মিটার দূরত্ব। সেই অংশ দিয়েই স্রোতের মতো জল বেরোয়। যা কোনও কেমিক্যাল দিয়ে গ্রাউটিং আটকানো যায়নি। শুক্রবার রাত পর্যন্ত সেখান দিয়ে জল বেরিয়েই চলেছে। আর কেমিক্যাল দিয়ে গ্রাউটিংয়ের কাজ চালাচ্ছেন সুড়ঙ্গে থাকা ইঞ্জিনিয়াররা।
দুই সুড়ঙ্গের মাঝে কী এই ক্রস প্যাসেজ? মেট্রোকর্তারা জানাচ্ছেন, দুই সুড়ঙ্গের মাঝে এটা থাকে ১৫০ মিটার অন্তর। এক সুড়ঙ্গ থেকে অন্য সুড়ঙ্গে আসার জন্য এটা তৈরি হয়। মেট্রো চালু হলে যদি কখনও বিপত্তি ঘটে একটি সুড়ঙ্গে, তখন যাত্রীদের পাশের সুড়ঙ্গ দিয়ে বের করে আনার জন্যই এটা তৈরি হচ্ছে। ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহের মধ্যে এমন আটটি ক্রস প্যাসেজ রয়েছে। যার মধ্যে পাঁচটির কাজ হয়ে গিয়েছে। শিয়ালদহের দিক থেকে একটি হয়েছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছিল মদন দত্ত লেনের কাছে। সেখানেই বেঁধেছে বিপত্তি। জল বেরিয়ে মাটি আলগা হতেই উপরে থাকা একটা বড় অংশের বাড়িতে ফাটল তৈরি হয়েছে। আর এখানেই প্রশ্ন, যেখানে কাজ হচ্ছিল, সেখানকার বাড়িগুলোতে এবং মাটির তলায় কেন পর্যাপ্ত সুরক্ষাবিধি ছিল না।
কেএমআরসিএলের ডাইরেক্টর প্রজেক্ট এন সি কারমালি বলেন, ‘‘মাটির তলায় দুই টানেলের মাঝে অন্য জায়গায় আরও এই ক্রস প্যাসেজ তৈরি হয়েছে। কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু এই অংশে জলের গভীরতা এতটাই বেশি যে তার স্রোত সামলানো যায়নি।’’ কেএমআরসিএলের কর্তারা জানাচ্ছেন, সুরক্ষাবিধি ছিল। কিন্তু মাটির তলায় যে এত জল আছে তা তাঁরা আন্দাজ করতে পারেননি। এবং কীভাবে তা বন্ধ হবে, তাও রাত পর্যন্ত জানাতে পারছিলেন না তাঁরা। তবে বিদেশি সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে অত্যাধুনিক কেমিক্যালের মিশ্রণ ঢালা হয়। যদিও তা অনেকটাই ছিল অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো। তবে তাতেই কাজ দেয়। শুক্রবার রাত ১১টার পর থেকে জল বেরনো বন্ধ হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.