কৃষ্ণকুমার দাস: ৭০ টি সরু রঙিন নৌকা তৈরি সম্পূর্ণ৷ প্রত্যেকটি নৌকা হবে আলাদা রঙের৷ এর মধ্যে ৪০টি বড়, ৩০টি ছোট নৌকা৷ তৈরি মূল রাস্তার সঙ্গে নৌকার সংযোগকারী কাঠের বর্ণময় সাঁকো৷ বিস্তৃত ঝিলের জল নিয়মিত স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি বিশুদ্ধ রাখার জন্য যন্ত্রপাতিও এসে গিয়েছে৷ কোন নৌকায় কী কী পণ্য রাখা হবে তার তালিকা ও সূচিক্রমও কার্যত চূড়ান্ত৷ নতুন বছরের শুরুতেই দেশের প্রথম ভাসমান বর্ণময় মার্কেট উদ্বোধনের প্রস্তুতি জোর কদমে চলছে ইএম বাইপাস লাগোয়া পাটুলিতে৷
কলকাতা থেকে ব্যাংককে বেড়াতে গিয়ে হামেশাই এমন ভাসমান রঙিন আলোয় মোড়া নানা মার্কেট থেকে কেনাকাটা করেন পর্যটকরা৷ কিন্তু সেই অভিনব মার্কেট পাটুলিতে বাইপাসের লাগোয়া দীর্ঘ ঝিলে আর তিন-চার মাস পরেই চালু হয়ে যাবে৷ রাজ্য সরকারের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীন কেএমডিএ দেশের প্রথম ভাসমান বাজারটি তৈরি করছে৷ খরচ পড়ছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা৷ পুরমন্ত্রী তথা কেএমডিএ-এর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “কলকাতার এই ‘ফ্লোটিং মার্কেট’টি ব্যাংকক, ইন্দোনেশিয়া বা ভিয়েতনামের ভাসমান বাজারের মতো হবে না৷ পাটুলিতে দেশের প্রথম ভাসমান বাজারে নৌকাগুলিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও সাংসারিক প্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্য নিয়ে বিক্রেতারা থাকবেন৷ উপরে ঝুলন্ত সাঁকোয় দাঁড়িয়ে ক্রেতারা কেনাকাটা করবেন৷ সম্পূর্ণ ঝুঁকিহীন এবং নিরাপদ করতেই শালগাছের খুঁটি দিয়ে রঙিন সাঁকো তৈরি করা হচ্ছে৷” ব্যাঙ্কক সফরে গিয়ে পুরমন্ত্রী স্বয়ং ভাসমান বাজার দেখে আসার পরই কেএমডিএ অব্যবহূত ঝিলের জল ব্যবহার করে এই প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্ত নেন৷ মন্ত্রীর নির্দেশে প্রকল্পের নকশা তৈরির আগে কেএমডিএ-এর ইঞ্জিনিয়ার এবং বিশেষজ্ঞরাও ব্যাংককেও গিয়েছিলেন৷ তাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের মতো এই ঝিলের জলেও বিশেষ প্রজাতির মাছ ছাড়া হবে৷ কারণ, মার্কেটে কেনাকাটার সময় নৌকা থেকে নানা পণ্য জলে পড়লে ওই মাছ সেই সামগ্রী দ্রুত খেয়ে ফেলবে৷ মাছ থাকায় একদিকে জল যেমন পরিষ্কার থাকবে তেমনই ঝিলের বাস্তুতন্ত্রেও ভারসাম্য থাকবে৷ প্রকল্প নির্মাণের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ-র মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মান্না জানিয়েছেন, “মার্কেট পরিস্কার রাখার পাশাপাশি ঝিলের জল পরিচ্ছন্ন ও নির্মল রাখার জন্য বিশেষ প্রযুক্তির মেশিন বসানো হচ্ছে৷ জলের অক্সিজেনের মাত্রা যাতে মাছ ও অন্য জলীয় প্রাণীকুলের জন্য সঠিক মাত্রায় থাকে সেটাও ওই মেশিন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত করা হবে৷”
দেশের প্রথম ভাসমান মার্কেট তৈরির আগে পাটুলি উপনগরীর বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মুখোমুখি আলোচনায় বসেছিলেন স্বয়ং কেএমডিএর চেয়ারম্যান৷ বর্ণময় প্রকল্পের অভিনবত্ব শোনার পর থেকেই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন মহানগরবাসী৷ স্থানীয় কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “ইতিমধ্যে দুই ঝিলের মাঝের বাঁধ সরিয়ে দিয়ে চারপাশে কংক্রিটের আস্তরণে মুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ বর্তমানে যেখানে মাছরাঙা রেস্টুরেন্ট সেখানে মূল প্রবেশদ্বার থাকছে৷ এছাড়াও অন্যদিক দিয়েও ঢোকা যাবে৷” পাটুলির ইএম বাইপাস চওড়া করতে গিয়ে যে সমস্ত জবরদখলকারী হকারদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁদেরই মূলত ওই ভাসমান বাজারের নৌকায় জায়গা দেওয়া হবে৷ বস্তুত এমন নজিরবিহীন প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় একদিকে যেমন হকারদের পুনর্বাসনে রাজ্য সরকারের বাড়তি কোনও জমি নষ্ট হল না৷ অন্যদিকে তেমনই শহরের সৌন্দর্যায়নে বিশেষ প্রকল্প জুড়ে যাওয়ায় পর্যটনক্ষেত্রও প্রসারিত হল৷ আগামী বছর জানুয়ারিতেই এই অভিনব ভাসমান বাজারটি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত দিয়ে শুভ উদ্বোধন করার ইচ্ছা রয়েছে কেএমডিএ-এর চেয়ারম্যানের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.