কৃষ্ণকুমার দাস: লোকসভা ভোটে নিজের ওয়ার্ড থেকে জেতাতেই হবে দলের প্রার্থীকে। নাহলে, আগামী বছর কলকাতা পুরসভার ভোটে ফের দলের টিকিট পাওয়া অনিশ্চিত তৃণমূল কাউন্সিলরদের। প্রবল বিজেপির চাপের মুখে চ্যালেঞ্জের এই ভোটের মুখে দলের তরফে এমনই কড়া বার্তা দিচ্ছে তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব। শুধু জেতানো নয়, ২০১৫ সালের পুরভোটে নিজে যে মার্জিনে জিতেছিলেন তাঁর চেয়ে অন্তত এক ভোটের বেশি ব্যবধানে এবছর লোকসভা নির্বাচনে জিতিয়ে আনতেই হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থীকে। আগামী রবিবার কলকাতার দুই আসনের দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে ‘পরিচয়-পর্ব’ বৈঠকে তৃণমূলের তরফে কাউন্সিলরদের এমনই ‘কড়া-স্পষ্ট’ বার্তা দেবেন দলের রাজ্য পুরদলের সভাপতি ও মন্ত্রী-মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের অন্য সমস্ত পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের জন্যও একই কড়া বার্তা বলে মন্তব্য করেছেন পুরমন্ত্রী তথা পুরদলের সভাপতি ফিরহাদ। তাঁর কথায়, “ভোটের পর ফল খারাপ হলে কাউন্সিলরদের কোনও অজুহাত শোনা হবে না। চ্যালেঞ্জ নিয়েই সব পুরসভার সমস্ত ওয়ার্ড থেকে দলের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতেই হবে দলের পুরপ্রতিনিধিদের। জিতলে যেমন কৃতিত্ব তেমনই প্রার্থী হারলেও দায়িত্ব ওই কাউন্সিলরদেরই। খারাপ ফল হলে ভুগতেই হবে।”
কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে পুরভোটে ১১২ জন কাউন্সিলর তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হন। এর মধ্যে কংগ্রেস, বিজেপি এবং বামফ্রন্ট থেকেও ১১ জন কাউন্সিলর গত চার বছরে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এখন জোড়াফুল শিবিরে পুরপ্রতিনিধির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২৩। এছাড়া বামেদের ১৪, কংগ্রেসের ২ এবং বিজেপির ৫ কাউন্সিলর মিলিয়ে ২১ জন বিরোধী শিবিরে রয়েছেন। তবে দলের তরফে বিরোধী কাউন্সিলরদের ওয়ার্ড থেকেও জোড়াফুল প্রতীকে আসন্ন ভোটে ‘লিড’ পেতে হবে বলেও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দফায় দফায় জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ, গত বিধানসভা ভোটে কলকাতার বেশ কিছু তৃণমূল কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে ছিল। সেই সমস্ত ওয়ার্ডও যে এবার বিজেপি টার্গেট করেছে তা নিয়েই চিন্তিত তৃণমূল শিবির।
তৃণমূল পুরদলের তরফে সমস্ত কাউন্সিলরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রবিবার সকাল ১১টায় নজরুল মঞ্চে দক্ষিণ কলকাতা ও সন্ধ্যা ছ’টায় হরিয়ানা ভবনে উত্তর কলকাতার সমস্ত কাউন্সিলর, বিধায়ক ও শাখা সংগঠনের নেতা-নেত্রীদের ডাকা হয়েছে। দু’টি বৈঠকেই দলের তরফে স্পষ্ট বার্তা পৌছে দিতে থাকবেন তৃণমূল পুরদলের সভাপতি ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মন্ত্রী-মেয়র ফিরহাদ এদিন জানিয়েছেন, “প্রতিটি বুথে জিততেই হবে তৃণমূলকে। বিধায়ক-কাউন্সিলর থেকে শুরু করে শাখা সংগঠনের সমস্তস্তরের নেতাদের দায়িত্ব নিতে হবে।” উন্নয়নের ক্ষেত্রে যখন সমস্ত কাউন্সিলরের যত প্রস্তাব ও প্রকল্প জমা পড়েছে পুরসভায় তার সমস্তটাই সম্পূর্ণ করা হয়েছে, তখন কেন ভোটের মার্জিন বাড়বে না? উন্নয়নে ও আর্থিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে যদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল পুরবোর্ড কোথাও কোনও কার্পণ্য না করে তবে ভোটারদের পোলিং সেন্টারে এনে দলের পক্ষে ভোট করাতে কেন সমস্যা হবে? ফিরহাদের মন্তব্য, “ওয়ার্ডের উন্নয়নের দায়িত্ব যেমন কাউন্সিলরের তেমনই সংসদীয় ভোটের প্রার্থীকে আগের চেয়েও বেশি মার্জিনে জিতিয়ে আনার কর্তব্যও ওই পুরপ্রতিনিধিরই।” এটা কাউন্সিলরের সঙ্গে পুরদলের কার্যত ‘দেওয়া-নেওয়া’র সম্পর্ক বলেও মন্তব্য মেয়রের।
তৃণমূল পুরদলের কাছে নানা সময়ে অভিযোগ এসেছে, অনেক কাউন্সিলর সংসদীয় নির্বাচনকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চান না। নিজের ভোট নয় বলে অনেকে ‘গা-ঘামিয়ে ভোট’ করেন না। প্রচারে ১০০ শতাংশ গুরুত্ব দেন না। অথচ নিজের নির্বাচনে জিততে এরাই ‘জানবাজি’ রেখে মাঠে নামেন। সংসদীয় ভোটকে ‘বিধায়কের দায়িত্ব’ বলে পাশ কাটিয়ে যান। কিছু ওয়ার্ডে আবার বিধায়কের সঙ্গে কাউন্সিলরের সম্পর্ক ‘মধুর’ নয়। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, বিধায়ক-কাউন্সিলরদের সংসদীয় ভোটে এমন ভূমিকা ও সম্পর্কের প্রভাব গিয়ে পড়ে ভোটের বাক্সে। বস্তুত এই কারণে এবার বিধায়কদের পাশাপাশি কাউন্সিলরদের মাঠে নামাতে আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছেন পুরমন্ত্রী-মেয়র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.