ছবি:ফাইল
কৃষ্ণকুমার দাস: আগামী ৫ মে কলকাতা পুরসভার চলতি পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ। হাওড়া পুরসভার মেয়াদ গত বছরই সম্পূর্ণ হওয়ার পর কমিশনারই দৈনন্দিন পরিষেবা চালু রেখেছেন। কিন্তু করোনা আতঙ্কে পিছিয়ে যাচ্ছে পুরভোট। কলকাতা পুরসভার দায়িত্বও কমিশনারের হাতে চলে গেলেও পুরো বিষয়টি রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে মেয়াদ উত্তীর্ণ সমস্ত পুরসভাতেই প্রশাসক বসানো হবে।
নবান্ন সূত্রে খবর, অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় বিধায়ক ও এক্সিকিউটিভ অফিসার মিলিয়ে ডিরেক্টর বোর্ড তৈরি করে দেওয়া হবে। সেই বোর্ড ভোটগ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত পৌরসভা এলাকায় সামগ্রিক পরিষেবা চালু রাখবেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর যেহেতু স্বল্প সময়ের জন্য প্রশাসক প্রয়োজন সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র এক্সিকিউটিভ অফিসার ও মহকুমা শাসক এবং জেলাশাসকদের হাতেই পুরো দায়িত্ব রাখা হতে পারে। নবান্নের কর্তাদের মত, যেহেতু সাধারণ মানুষের পরিষেবার বিষয়টি জড়িত এবং রাজ্য সরকার এই ইস্যুতে বিন্দুমাত্র গাফিলতি বরদাস্ত করবে না। তাই পুরসভায় প্রশাসক বসানো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
কমিশনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি মেনে ১৯ এপ্রিল ভোট হচ্ছে না কলকাতা পুরসভায়। এখানে তৃণমূলের পুরবোর্ড না থাকলেও মূল নিয়ন্ত্রক অর্থাৎ পরিষেবা দেওয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা প্রশাসকের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। মেয়াদ পার হওয়ার পরেই পুর আইনকে মান্যতা দিয়েই বাংলার পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমই পুরকমিশনার খলিল আহমেদকে সামনে রেখে মহানগরের নাগরিক পরিষেবা পরিচালনা করবেন। সেক্ষেত্রে গত দেড় বছরে মেয়র হিসাবে ফিরহাদ যে সমস্ত প্রকল্প ও পরিষেবা চালু করেছেন, তা যেমন জারি থাকবে, তেমনই গতি পাবে অসম্পূর্ণ প্রকল্পগুলি সমাপ্ত করার লক্ষ্যে।
উলটোদিকে, শিলিগুড়ির মতো বিরোধী দলের ক্ষমতায় থাকা কর্পোরেশনও কমিশনারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আসবে রাজ্যের পুরমন্ত্রীর হাতে। উল্লেখ্য, প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের সময়ে কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক বসলেও তখন পুরমন্ত্রী হিসাবে পুরভবনে দেখভাল করতে আসতেন দফতরের ভারপ্রাপ্ত তৎকালীন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পরে তিনি তৃণমূল পুরবোর্ডের মেয়র হন। আর এবার যিনি তৃণমূলের মেয়র তিনিই আবার রাজ্যের বর্তমান পুরমন্ত্রী, মেয়াদ পেরোলে ঘুরপথে ফিরহাদই হবেন পুরসভার পরিষেবার পরিচালক। বস্তুত ৫ মে’র মধ্যে ভোট না হলে সুব্রত ও ফিরহাদ একই ধরনের নজির গড়তে চলেছেন।
এতদিন ধরে উত্তরবঙ্গের কেন্দ্রবিন্দুতে রাজ্য সরকারের যে সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছিল না, তাও এবার সম্পূর্ণ করাতে পারবেন ফিরহাদ। তাই মেয়াদের মধ্যে পুরভোট না হওয়ায় কিছুটা হলেও কয়েক সপ্তাহের জন্য পরোক্ষে সুবিধা পেতে পারেন শিলিগুড়ির মতো বিরোধীদের ক্ষমতায় থাকা এলাকায় থাকা শাসকদলের কর্মীরা। হাওড়া পুরসভায় প্রশাসকের কাজে যে নাগরিকরা খুব একটা পছন্দ করেন না তা মাঝে মধ্যেই পুরমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে প্রমাণ মিলছে। জঞ্জাল সাফাই ও নাগরিক পরিষেবা নিয়ে তাই ছুটে যেতে হচ্ছে ফিরহাদকে। তবে মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে নাগরিক স্বার্থে উন্নয়ন ও পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে পুর আইন মেনে প্রশাসক যে বসাতেই হবে তা স্বীকার করছেন নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়া সমস্ত পুরপ্রধান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.