ফাইল ছবি
কৃষ্ণকুমার দাস: বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পাশে প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আসনে বসবেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। ট্রেজারি বেঞ্চের বাঁদিকে প্রথম আসনে মুখ্যমন্ত্রী এবং ডানদিকের প্রান্তিক সিটে বসবেন পরিষদীয় ও কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মাঝে অরূপ বিশ্বাস ছাড়াও চতুর্থ মন্ত্রী মলয় ঘটক বা ব্রাত্য বসু বসার সম্ভাবনা রয়েছে।
কক্ষের ওই সারিতে ছয়টি আসন থাকলেও প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক ডানদিকে একটি আসন সবসময়ই ফাঁকা রাখা ছিল, এবারও তাই থাকছে। তার পরই ফিরহাদ বসবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে পার্থর শূন্য আসনটিতে শোভনদেবকে বসতে প্রস্তাব দেন স্পিকার। কারণ, পরিষদীয় কাজকর্মের প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ও দলীয় সিদ্ধান্ত কার্যকরে প্রতিনিয়ত পরিষদীয় মন্ত্রীকে নেত্রীর সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন। কিন্তু বারে বারে ওঠা ও বাইরে যাতায়াতের জন্য ডানদিকের প্রান্তিক আসনের সুবিধা নিতেই স্পিকারের প্রস্তাব গ্রহণ করেননি কৃষিমন্ত্রী। মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ায় পার্থর (Partha Chatterjee) আসন পুরমন্ত্রীকে দিলেও মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের ঠিক পাশে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘরটি অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘তালাবন্ধ’ই থাকছে। বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, যেহেতু ইডির মামলায় পার্থ এখন জেলে তাই তদন্তের স্বার্থে যদি ওই ঘরে কখনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা তল্লাশি চালাতে চান, তাই আইনি জটিলতা এড়াতে অবলম্বন করে ‘সিল’ করে রাখা হল। অধিবেশন শুরুর আগে কোভিড (COVID-19) নিয়ে বাড়তি সতর্কতা হিসাবে ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। স্পিকার জানিয়েছেন, ‘‘বিধায়ক ও বিধানসভার কর্মীদের জন্য এই টিকাকরণ।’’
রাজ্যে পরিবর্তনের পর এই প্রথম পার্থহীন অধিবেশন শুরু হবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনটি নতুন বিল যেমন আনা হবে তেমনই শিক্ষক নিয়োগ বিতর্ক ইস্যুতে তপ্ত হবে চলতি অধিবেশন। পার্থর ঘর ‘বন্ধ’ থাকলেও এবার অধিবেশনের আগেই অন্তত ১২ জন মন্ত্রীর বিধানসভায় ঠিকানা নতুন করে চিহ্নিত হচ্ছে। কয়েকজন পুরনো মন্ত্রীর ঠিকানা যেমন বদল হচ্ছে তেমনই নতুন মন্ত্রীদের ঘর বরাদ্দ করেছেন স্পিকার। বিধানসভা চলাকালীন ঘরের ‘ঠিকানা’ মন্ত্রী ও বিধায়কদের পাশাপাশি সরকারি অফিসারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, প্রয়াত পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ফাঁকা ঘরটি পাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কৃষির সঙ্গে পরিষদীয় দপ্তরের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে স্পিকার সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ঘরটি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ‘মানসিক দ্বিধা ও কষ্টের’ কারণে দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা ও বন্ধু সুব্রতর পুরনো ঘরে খড়দহের বিধায়ক বসতে চাননি। শুধু তাই নয়, প্রথম ও দ্বিতীয় মা-মাটি-মানুষ সরকারের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর (Amit Mitra) ঘরটি তৃতীয়বার তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও এতদিন ফাঁকা ছিল, সেই ঘরে এখন বসবেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। দোতলায় চন্দ্রিমা এতদিন যে ঘরে বসতেন সেটি বরাদ্দ হয়েছে পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র (Babul Supriyo) জন্য।
একতলায় ব্রাত্য বসু চলে আসায় তাঁর দোতলার ঘরটি পাচ্ছেন সেচ ও জলসম্পদমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। দোতলায় লিফট দিয়ে উঠেই যে ঘরে প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বসতেন সেটি পাচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা। আর শশীর পুরনো ঘর পাচ্ছেন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। প্রাক্তন মন্ত্রী ডাঃ রত্না দে-নাগের বিধানসভার দোতলার পুরনো অফিসটি পাচ্ছেন নয়া মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী। মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়া হুমায়ুন কবীর এবং দপ্তর বদল হওয়া অখিল গিরির দু’টি ঘর একত্রিত করে নয়া পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের জন্য দোতলায় বড় অফিস হচ্ছে। উপমুখ্যসচেতক হিসাবে পার্থ ভৌমিক দোতলার যে ঘরটি ব্যবহার করতেন সেখানে বসবেন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বস্ত্রশিল্প দফতরের নয়া রাষ্ট্রমন্ত্রী তাজমুল হোসেন। মেয়েকে শিক্ষকের চাকরির সুপারিশ করে মামলায় ফেঁসে মন্ত্রিত্ব খোয়ানো পরেশ অধিকারীর ঘর পাচ্ছেন নয়া স্কুল শিক্ষা দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সত্যজিৎ বর্মন। অবশ্য দপ্তর বদল হওয়ায় দোতলা থেকে একতলায় একদা বাম পরিষদীয় দলের ঘরের পাশে নয়া অফিস পাচ্ছেন কারামন্ত্রী অখিল গিরি। গত বিধানসভা ভোটে বামেরা বিলুপ্ত হওয়ায় ২০১৬-২০২১ বাম পরিষদীয় দল যে ঘরটি ব্যবহার করত সেটা স্ট্যান্ডিং কমিটির নতুন মিটিং রুম হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.