সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খারিজ হয়ে গেল সিবিআইয়ের (CBI) আবেদন। দিনভর টানাপোড়েন শেষে জামিন পেলেন নারদ কাণ্ডে (Narada Case) ধৃত চার হেভিওয়েট অভিযুক্ত। বিশেষ সিবিআই আদালত ভারচুয়াল শুনানির পর ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যাকে অন্তবর্তী জামিন দিলেন বিচারক অনুপম মুখোপাধ্যায়। ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডের বিনিময়ে জামিন পেলেন তাঁরা। তবে নগরদায়রা আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর আদালতে যেতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীরা।
সোমবার আদালতে ধোপে টিকল না সিবিআইয়ের প্রভাবশালী তত্ত্ব। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি ছিল, নারদ মামলায় যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই চারজনই প্রভাবশালী। তাঁরা বাইরে থাকলে প্রয়োজনীয় নথি, প্রমাণ বা সাক্ষ্যকে প্রভাবিত করতে পারেন। ধৃত চারজনের ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজত চেয়েছিল সিবিআই। আইনজ্ঞ মহল বলছে, চার্জশিট ফাইল করা হয়েছে। আর ধৃতদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের অর্থ তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। তাহলে এদের কেন হেফাজতে রাখতে চাইছে সিবিআই, উঠছিল প্রশ্ন। কিন্তু সিবিআইয়ের সেই আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক।
এদিন শুরু থেকেই রাজ্য সরকারের আইনজীবীর দাবি ছিল, যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁদের প্রত্যেকের বয়স ৫০-৬০ বছর। ফলে কোভিড পরিস্থিতিতে তাদের জেলবন্দি রাখা উচিৎ নয়। উপরন্তু রাজ্য সরকার কোভিড মোকাবিলার যুদ্ধে নেমেছে তার অন্যতম সেনাপতি ফিরহাদ হাকিম। তাঁকে গ্রেপ্তার করলে সেই যুদ্ধ ধাক্কা খাবে। এদিন রাজ্যের আবেদনেই সিলমোহর দিল আদালত।
এদিন সরকারের তরফের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “নিয়ম বিরুদ্ধভাবে রাজ্যপালের অনুমতি নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছিল কোভিড পরিস্থিতিতে অকারণে গ্রেপ্তার করা চলবে না। অকারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আদালতে সুবিচার মিলল।”
সোমবার সকাল থেকে নারদ কাণ্ডকে নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। এদিন সাত সকালে রাজ্যের দুই মন্ত্রী এক বিধায়ক-সহ মোট চার হেভিওয়েটের বাড়িতে হাজির হন আধিকারিকরা। আটক করে তাঁদের তুলে আনা হয় নিজাম প্যালেসে। পরে বেলা ১১টা নাগাদ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়ে দেয়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজই দুপুরে তাঁদের সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়। ভারচুয়াল মাধ্যমে চলে শুনানি। প্রায় দেড় ঘণ্টা শুনানির পর আবার বেশকিছু নথি স্বচক্ষে দেখতে চান বিচারক অনুপম মুখোপাধ্যায়। নথি নিয়ে তাঁর চেম্বারে হাজির হন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। সেই নথি পরীক্ষার পর রায় দিলেন বিচারক।
বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোজা চলে যান নিজাম প্যালেসে। দীর্ঘ ছ’ঘণ্টা সেখানে ছিলেন তিনি। ভারচুয়াল শুনানি চলাকালীনও নিজাম প্যালেসে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুনানি শেষে সেখান থেকে সোজা নবান্ন রওনা দেন তিনি। অবশেষে সন্ধেয় তাঁর বিশ্বাসযোগ্য সেনাপতিদের জামিন মিলল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.