কৃষ্ণকুমার দাস: ঘূর্ণিঝড় থামার পর পাঁচদিন পরও বিদ্যুৎহীন থাকল মহানগরের বেশ কিছু অঞ্চল। রবিবারও জল ও বিদ্যুতের দাবিতে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়ে পথ অববোধ করে যাদবপুর, বাঘাযতীন, আনোয়ার শা কানেক্টর থেকে নিউআলিপুরের ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। এই নিয়ে জারি থাকল রাজ্য সরকার বনাম বিরোধীদের লড়াই। সোমবার থেকেই শহরে গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চলবে বলে জানিয়েছেন কলকাতার মুখ্যপ্রশাসক ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবে এই দুর্যোগের সময় বিরোধীদের রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকার আবেদন করেন তিনি
সিইএসসি’র দাবি, এদিন পর্যন্ত ৯২ শতাংশ গ্রাহককে বিদু্যৎ ফেরানো গিয়েছে।যুদ্ধাকালীন তৎপরতায় শহরকে পুরোনো ছন্দে ফেরানোর চেষ্টা করেছেন পুরমন্ত্রী ও CESC`র আধিকারিকেরা। তবে এতবড় ঘূর্ণিঝড় সামলাতে রাজ্য সরকার ও পুরসভা প্রস্তুত ছিল না বলে বারবার তোপ দেগেছেন বিরোধীরা। এমনকী রাজ্যপালও সেনাকে আগে ডাকার দাবি করেছেন। তবে এমন অভিযোগের জবাবে পুরমন্ত্রী বলেন, “মানুষের নিশ্চিত অসুবিধা হয়েছে, তার জন্য আমরা অত্যন্ত দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু এখন রাজনীতি নয়, দোষ দেখার সময় নয়। পরিষেবা দিয়ে মানুষকে সেবা করতে হবে, দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে হবে। যাঁরা দোষ ধরার কথা বলছেন, তাঁরা আসলে মানুষের এই দুঃসময়ে পাশে না থেকে ঘোলাজলে মাছ ধরতে চাইছেন।” ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে পড়া গাছ সরানো, জমা জল নিষ্কাশন ও পানীয় জলের জোগান স্বাভাবিক করা নিয়ে ছুটির দিনেও জরুরি বৈঠক বসে পুরসভা। সেখানে মূল রাস্তার পাশাপাশি পাড়ার গলিতে পড়ে থাকা গাছ কিভাবে সরানো যায় তা নিয়ে কথা হয়।
১১৮ ও ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা, নিউআলিপুরের অবরোধ নিয়েও কথা হয় বৈঠকে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, রাস্তায় জমে থাকা কয়েক হাজার টন গাছের পাতা ও ছোট ডালপালা সরানোর কাজ শুরু হবে সোমবার থেকে। বুধবার থেকে রাস্তায় কেটে রাখা বড় বড় গাছের গুড়ির মান নির্ধারণ করবে বনদফতর। তার পরে অকশন করে ওই গাছ বিক্রি করবে পুরসভা। সমন্বয় করে শহরকে দ্রুত গতিতে আগের অবস্থায় ফেরানো হচ্ছে বলে বৈঠক শেষে জানান পুরমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘‘সেনা, এনডিআরএফ ও দমকল যেমন শহরে কাজ করছে তেমন পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় ক্লাব ও ছেলেরা মিলে উপড়ে পড়া গাছ কেটে বিদ্যুৎ আনতে সাহায্য করেছে। সবারই সাহায্য চাইছি। ছোট-বড়, অনেক সংস্থার কাছ থেকে নানা সাহায্য নিয়ে কলকাতাকে স্বাভাবিক করা হচ্ছে।” সোমবার শহরে ওড়িশা থেকে আসা ৩৫০ জন সাইক্লোন কম্যান্ডোকে গাছ কাটা ও সরানোয় লাগাচ্ছে কলকাতা পুরসভা। দু-একদিন পর থেকে রাস্তায় পড়ে থাকা লাইটপোস্ট ও সিগন্যাল পোষ্ট পুনরুদ্ধারের কাজও শুরু হবে। তবে শুধুমাত্র নিজের ঘরে বসে বৈঠক করে নয়, এদিন রাস্তায় নেমে স্বয়ং পুরমন্ত্রী তদারকি করে খিদিরপুরের জমা জল সাফাই করান।
গ্রাহকদের ক্ষোভকে ন্যায়সঙ্গত বলে এদিন সিইএসসির ভাইস প্রেসিডেন্ট (বণ্টন) অভিজিৎ ঘোষ জানান, “রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯২ শতাংশ এলাকায় পরিষেবা স্বাভাবিক করা গেছে। বাকিটা দু-একদিনের মত সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করছি।” প্রথমে সিইএসসি’র ৭০টি টিম কাজ করছিল। কিন্তু পরে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগম থেকে টিম দিয়ে সাহায্য করা হয়। এদিন ১২০টি টিম কাজ করে শহরের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিদু্যৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে বলে দাবি করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে ৬০টি জেনারেটর ভাড়া করে পুরসভার পাম্পিং স্টেশনে দেওয়া হয়েছে। কিছু আবাসনেও জেনারেটর দিচ্ছে সিইএসসি। এভাবেই কল্লোলীনিকে আমফানের ধ্বংসলীলা থেকে বের করে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন পুরকর্মী ও বিদ্যুৎ কর্মীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.