ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ডেঙ্গুর (Dengue) নতুন স্ট্রেন নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র সরকার কোনও প্রোটোকল বলে দেয়নি। তাই সচেতনতাই ভরসা। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে শাসক-বিরোধী সবপক্ষর কাছে তাই সচেতনতার প্রচারের আবেদন জানালেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)।
‘ডেঙ্গু ৩’ বা ‘ডেন ৩’-এবার ডেঙ্গুর এই নতুন স্ট্রেন উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তার মোকাবিলায় রাজ্য বা পুরসভাগুলির এই মুহূর্তে প্রধান ভরসা সচেতনতা। ন্যূনতম চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতার সেই কাজ চালাচ্ছে পুরসভাগুলি। বিধানসভায় এদিন শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ-সহ বিরোধী দলের বিধায়কদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এই বাস্তব পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন ফিরহাদ। কেন্দ্রের প্রোটোকলের কথা তুলে তখনই বলেন, ‘‘এ সংক্রান্ত প্রোটোকল এখনও আমাদের জানা নেই। পরিস্থিতি উদ্বেগের। বেশ কয়েকজন মারা গিয়েছেন। এবার অতিবৃষ্টি নেই। কিন্তু আবহাওয়া পরিস্থিতিও ঠিক না। মোট আক্রান্তের মধ্যে শহরে ৩০ শতাংশ, গ্রামাঞ্চলে ৭০ শতাংশ। কিন্তু সরকার যতই চেষ্টা করুক, মানুষ না সচেতন না হলে হবে না।’’ সব পক্ষের বিধায়কদের কাছে ফিরহাদের আবেদন, ‘‘সমস্ত বিধায়ককে বলব মানুষের কাছে যান। তাঁদের বোঝান। সচেতনতা ছাড়া উপায় নেই।’’ পরে আরও বলেন, ‘‘ডেঙ্গুর নতুন স্ট্রেন নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র সরকার কোনও প্রোটোকল আমাদের বলে দেয়নি। তাই সচেতনতাই ভরসা।’’
ডেঙ্গুর এই নতুন স্ট্রেন প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের গত বছরের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন ফিরহাদ। বলেন, ‘‘সিঙ্গাপুরে আগের বছর এই স্ট্রেনের প্রকোপ প্রথম দেখা গিয়েছিল। এবার সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭ হাজার। আমাদের এখানে এবার এটা প্রথম। বারবার বলছি দিনের আলোয় এর আক্রমণ হয়। টবে, পড়ে থাকা গাড়ির কোনও অংশে, পরিষ্কার যে কোনও জলে ডেঙ্গুর মশা হতে পারে। পুরসভাগুলো নিজেদের মতো চেষ্টা করছে। মানুষের কাছে আবেদন, নিজেদের বাড়ির পরিস্থিতি দেখুন।’’
শিলিগুড়ির বিধায়ক তাঁর এলাকার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে জানান, শিলিগুড়িতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৭০০। জ্বর শিশুদের জন্য বিপদ। তাদের দ্রুত দুর্বল করে দিচ্ছে। প্লেটলেট কমছে না। শরীরের অন্যান্য অংশের ক্ষতি অনেক বেশি। স্বাস্থ্য দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর কাছে শিলিগুড়িতে অবিলম্বে চিকিৎসকদের টিম পাঠানোর আবেদন করেন শংকর। তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে চন্দ্রিমাদেবী জানান, চিকিৎসক দল অবিলম্বে শিলিগুড়ির পাশাপাশি গোটা উত্তরবঙ্গ ঘুরে দেখবে। তার সঙ্গেই মনে করিয়ে দেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ তিন বছর পরপর বাড়ে। ২০১৯-এর পর আবার এ বছর তাই তার প্রকোপ বেড়েছে। তবে সে বছরের তুলনায় এবার প্রভাব অনেক কম বলে দাবি মন্ত্রীর।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য ভবন থেকে ইতিমধ্যেই কিছু নিয়মবিধি জারি হয়েছে। যেমন, জ্বরের ওষুধ বিক্রির সময় ক্রেতার ফোন নম্বর নিয়ে নেবে ওষুধের দোকানগুলি। জেলা বা ব্লক অফিসে তা পাঠানো হবে। রোগীকে ফোন করে জ্বর সংক্রান্ত খোঁজখবর নেওয়া হবে। ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া পরীক্ষা হয়েছে কি না হলে তার রিপোর্ট কি সব খবর নেওয়া হবে। এদিনই জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় এই নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যভবন। সঙ্গে বলা হয়েছে, কোনও এলাকায় ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেই সেই এলাকাকে চিহ্নিত করে সেখানে অস্থায়ী ফিভার ক্লিনিক চালু করে ২৪ ঘন্টা রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। জমা জল, ঝোপ-জঙ্গল থাকলেই ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগকে তার খবর পাঠাতে হবে। ১ হাজার ৯৭ জন অতিরিক্ত চিকিৎসককে এই কাজে লাগানো হয়েছে। সোমবার থেকে ডেঙ্গু নিয়ে এসওপি জারি করবে স্বাস্থ্য ভবন। পুজোর মধ্যে কোনও বড় সমস্যা সামনে এলে মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে সেগুলো বলা থাকবে ওই এসওপিতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.