ফাইল ছবি।
অভিরূপ দাস: মুমূর্ষু রোগী এসেছিল অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য। অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে তাঁকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন খোদ কলকাতার মেয়র। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে চিকিৎসা পাননি সেই গুরুতর অসুস্থ। অনেকে মারাও গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কর্মবিরতি তুলে নিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার আর্জি জানালেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের জেরে কর্মবিরতি চলছে একাধিক হাসপাতালে। সেখানেই অভিযোগ উঠছে, চিকিৎসা পাচ্ছেন না অনেক প্রান্তিক মানুষরা। একের পর এক রোগীমৃত্যুর ঘটনায় শোকাহত ফিরহাদ হাকিম শনিবার চিকিৎসকদের কাছে আরজি জানিয়েছেন, ‘‘শহরের বহু দীনদরিদ্র মানুষ আমার কাছে রোজ আসেন। আমি পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্সের মাধ্যমে তাঁদের হাসপাতালে পাঠাই। গত তিন চারদিনে অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে চলে গিয়েছেন। কয়েকজন মারাও গিয়েছেন।’’ এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের প্রতি ফিরহাদের প্রশ্ন, ‘‘কেন ওঁদের শাস্তি দিচ্ছেন?’’
এদিন আরজিকরে নিহত তরুণী চিকিৎসককে নিজের ‘মেয়ে’ বলে সম্বোধন করেছেন ফিরহাদ। বলেছেন, ‘‘আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এই ব্যাথা আমার বুক থেকে কোনওদিন মিটবে না। তার মানে এই নয় যে আরও দশজনকে মেরে ফেলতে হবে। চিকিৎসকরা শপথ নেন মুমূর্ষুকে চিকিৎসা দেওয়ার। সেই শপথ ভুলে যাবেন না। আমরা কলকাতাবাসী আজ আপনাদের ছাড়া অসহায়। আমাদের বাড়ির কারও অসুখ করলে যদি আপনারা না থাকেন কে আমাদের বাঁচাবে?’’
সরকারী হাসপাতালে যা বেডের সংখ্যা রোগী তার তুলনায় দ্বিগুণ। দূর দূরান্ত থেকে হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা করতে আসেন বহু। একটা বেডের জন্য অনেকেই তদ্বির করেন কাউন্সিলর-মেয়রকে। ফিরহাদ এদিন জানিয়েছেন, অনেকেই সরকারী হাসপাতালে এসে চিকিৎসা না পেয়েই ফিরে যাচ্ছেন। এই ঘটনায় তিনি শঙ্কিত। চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধে নিজের উদাহারণ টেনেছেন তিনি। বলেছেন, আমিও তো কলকাতার মেয়র। অনেকে যেমন আমাকে ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করেন। ভুল ত্রুটি হলে কেউ আমায় গালাগালিও করেন। তার মানে কি? আমি তার জন্য কাজ করবো না। সেটা হয় না। সমর্থক হোক বা বিরোধী সবার জন্য আমায় কাজ করতে হবে।
রাজ্যে যে অচলাবস্থা চলছে তা কাটিয়ে উঠতে চিকিৎসকদের প্রতি ফিরহাদের অনুরোধ, ‘‘যাঁরা নিরীহ রোগী। তারা তো অন্যায় করেননি। তাদের কে শাস্তি দেবেন না।’’ পাশাপাশি কলকাতাকে সবচেয়ে নিরাপদ শহর বলে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখের। এই ঘটনায় সবাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। এটাকে ব্যতিক্রম ঘটনা হিসেবে দেখুন। এটা রবীন্দ্রনাথ- বিবেকানন্দর বাংলা। কৃষ্টি সংস্কৃতির শহর। আর জি করে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটা কলকাতার চরিত্র নয়। সোশাল মিডিয়ায় অনেকেই শহরের বদনাম করছেন। মেয়র জানিয়েছেন, সোশাল মিডিয়ায় শহর নিয়ে যা ইচ্ছে তাই লিখে ফেলা ঠিক নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংস্কৃতি, শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে এই বাংলায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.