Advertisement
Advertisement

আগুনে পুড়ে ছাই জীবনদায়ী ওষুধ, মেডিক্যালে বিপাকে রোগীরা

বহু ক্যানসার রোগী হাসপাতালে এসে মরফিন পাননি।

Fire creates medicine scarcity in Kolkata Medical College, Hospital

ছবিতে পুড়ে যাওয়া স্টোর রুম, ছবি: অরিজিৎ সাহা।

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:October 5, 2018 10:41 am
  • Updated:October 5, 2018 10:41 am  

গৌতম ব্রহ্ম: আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠার আগেই তুমুল তৎপরতায় লাগাম দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের আগুনে। কিন্তু কিছু ক্ষত তো সে রেখে যাবেই! বুধবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অগ্নিকাণ্ডের পর বৃহস্পতিবার তার যন্ত্রণা কিছুটা মালুম হল সাধারণ রোগীদের। বিশেষত ওষুধের অভাবে রোগীদের একাংশের দুর্ভোগ উঠল চরমে।

যেমন হরেন্দ্রনাথ বাছার। এদিন সকালে সুপার অফিসের সামনে বসে টানা কেঁদে চলেছেন পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত ৬৮ বছরের প্রৌঢ়। কর্কট রোগের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন, অথচ যন্ত্রণা উপশমের দাওয়াই অমিল। মরফিনের খোঁজে সকাল থেকে ছেলে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিন নম্বর গেট লাগোয়া নিউ আউটডোর বিল্ডিং থেকে সুপার অফিস, পাক খাচ্ছেন লাট্টুর মতো। সর্বত্র শুনছেন একই জবাব, আগুনের গ্রাসে সব মরফিন নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

[পুজোর আগেই সুখবর, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বাড়ল বিমার অর্থের পরিমাণ]

ক্যানাল সার্কুলার রোডের হরেন্দ্রনাথের মতো মেডিক্যালের বহু ক্যানসার রোগী এদিন হাসপাতালে এসে মরফিন পাননি। অসহ্য যন্ত্রণায় খাবি খেতে খেতে কেউ বলেছেন, ‘আর পারছি না। মরে গেলেই ভাল।’ কেউ আবার হাসপাতালের দেওয়ালে মাথা ঠুকে গুমরে কেঁদেছেন। শুধু দেখে যাওয়া ছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও কিছু করার ছিল না। কারণ, পুড়ে যাওয়া এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের ফার্মাসি থেকেই আউটডোর রোগীদের নিখরচায় মরফিন বিলি করা হত। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক রোগীকে সশরীরে হাজির থেকে তা সংগ্রহ করতে হয়। পয়সা দিয়ে বাইরে থেকে যে কিনবেন,  তারও উপায় নেই। কারণ, সরকার নির্ধারিত হাতে গোনা কয়েকটি দোকান ছাড়া এ ওষুধ বাইরে বিক্রির অনুমতি নেই। মেডিক্যালের সুপার ডা. ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন,  “ইন্ডোরের রোগীদের জন্য মরফিন মজুত আছে। কিন্তু আউটডোরের রোগীদের জন্য রাখা মরফিন তাপে-জলে নষ্ট হয়েছে। আমরা কয়েকটি এনজিওকে অনুরোধ করেছি, তারা যাতে রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মরফিন দিয়ে আসে।”

অগ্নিকাণ্ডের জেরে বুধবার সকালে আড়াইশোর বেশি ইন্ডোর রোগীকে এমসিএইচ বিল্ডিং থেকে সরানো হয়েছিল। তবে সেদিন বিকেলেই তাঁদের ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। দমকল বিভাগের অনুমতি না মেলায় দোতলা ফাঁকা রাখা হয়েছিল। প্রায় শ’ খানেক রোগীকে ক্যাজুয়ালটি ব্লকে রাখা হয়েছিল। এদিন সন্ধের পর সেই রোগীদেরও দোতলায় ফেরানো শুরু হয়। চালু করা হয় অক্সিজেনের কেন্দ্রীয় সরবরাহ ব্যবস্থা।

দগ্ধ মেডিক্যালে দাওয়াইয়ের আকালের বাজারে কার্যত প্রতি পদে ভোগান্তি হয়েছে ওষুধ প্রত্যাশীদের। তিন নম্বর গেট লাগোয়া নিউ ওপিডি বিল্ডিংয়ে গিয়ে দেখা গেল, সিঁড়ির নিচ থেকে সর্পিল লাইন উঠে গিয়েছে দোতলা পর্যন্ত। চারটে কাউন্টার নাগাড়ে ওষুধ দিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছে না। পুড়ে যাওয়া এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের কাউন্টার থেকে যাঁদের ওষুধ নেওয়ার কথা,  এদিন তাঁদেরও এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে,  আগে যেখানে আধঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ হয়ে যেত,  এদিন সেখানে দেড়-দু’ঘণ্টা, হা-পিত্যেশ করে অপেক্ষা করতে হয়েছে। হুগলি শিয়াখালা থেকে এসেছেন শ্যামসুন্দর বাগুই। হার্টে ব্লক। সকাল সাতটা কুড়ি থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে। ওষুধ পেলেন আড়াইটে নাগাদ। তা-ও ছ’টার মধ্যে চারটে ওষুধ পেয়েছেন। প্রায় একই অভিজ্ঞতা আরও এক হার্টের রোগী কৃষ্ণকান্ত ভট্টাচার্যর। জানালেন, “হার্টের সমস্যা। অল্পতে হাঁপিয়ে যাই। রক্তচাপ নেমে যায়। ডা. শান্তনু গুহকে আট মাস ধরে দেখাচ্ছি। অন্যদিন আধঘণ্টাতেই কাজ হয়ে যায়। আর আজ দু’ঘণ্টা লাগল। তা-ও ওষুধ পাব কি না বুঝতে পারছি না। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ ঘুটিয়ারি শরিফের রোহানা নস্করের। দিদা মনোহারা নস্করের সঙ্গে ঠায় লাইনে দাঁড়িয়ে বছর ১৪-র কিশোরী। শরীরে হিমোগ্লোবিন কম। অন্যদিন আধঘণ্টা দাঁড়াতে হয়। আজ দু’ঘণ্টাতেও কাউন্টারের সামনে পৌঁছতে পারেনি। ভিড়ের চাপে মা আজিতা বিবিকে আউটডোর বিল্ডিংয়ের নিচে বসিয়ে রেখেছেন। বীরভূম মুরারইয়ের আজিহুর মণ্ডল। জানালেন,  “দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে ওষুধ পেয়েছি। অন্যসময় এক মাসের ওষুধ পাই। এদিন পনেরো দিনের পেলাম।”  আউটডোর রোগীদের যে ওষুধ নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে তা মেনে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইন্দ্রনীলবাবু জানিয়েছেন, “এক মাসের ওষুধ নষ্ট হয়েছে। সমস্যা তো একটু হবেই। অন্য হাসপাতালগুলিকে ওষুধ দিতে অনুরোধ করেছি। অনলাইনে অর্ডারও করেছি। আশা করছি তিন-চারদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

[জেল পালিয়ে শ্বশুরবাড়িতে হাঙ্গামা, বন্দির কাণ্ডে হতবাক ডোমজুড়]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement