ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: নার্সিংহোমের ঘর দখল করে, নিজেকে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে যিনি টাকা নিয়েছেন। তাকে চিনতেই পারছে না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। গোটা ঘটনায় হতভম্ব রোগীর পরিবার। এই কাণ্ড ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার আনোয়ার শাহ রোডের কিউর সেন্টার নার্সিংহোমে। গোটা ঘটনায় ডিসি ডিডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন।
২০২০ সালের এপ্রিল মাসের ঘটনা। করোনায় (Corona Virus) তখন কাঁপছে গোটা বাংলা। বাবা নারায়ণ দেবনাথকে (৭৯) নিয়ে বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন অয়ন। সেখানে বেড ছিল না। কাউন্টার থেকেই এক কর্মচারী অয়নকে বলেন, বেডের প্রয়োজন হলে সৌমিক দত্তর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বাবার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। দেরি করেননি অয়ন। জনৈক সৌমিকবাবুকে ফোন করতেই মুশকিল আসান। অয়ন জানিয়েছেন, “ওই ব্যাক্তি আমায় আনোয়ার শাহ রোডে কিউর সেন্টার নার্সিংহোমে যেতে বলেন। নিজেকে নার্সিংহোমের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে কথা বলেন।” বলেন, বেডের বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। রোগী নিয়ে আসুন।
রোগীকে ভরতি করা হয় কিউর সেন্টারে। চিকিৎসা শুরু করেন ডা. সপ্তর্ষী ঘোষ। রোগীর পরিবার জানিয়েছে, প্রথমে ১৫ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসা চলাকালীন আরও ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। পাঁচদিন চিকিৎসা চলার পর মৃত্যু হয় নারায়ণ দেবনাথের। বিল দিতে গিয়ে আরও এক ঝামেলা। অয়ন বলেন, “মৃতদেহ নিতে গেলে সৌমিকবাবু আমায় জানায়, পুরো টাকা দিলে তবেই তা মৃতদেহ হাতে পাওয়া যাবে।” চিকিৎসাবাবদ আরও ৭৫ হাজার টাকা চায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চেক লিখে দেন অয়ন দেবনাথ। সেসময় তাঁকে একটি রশিদ দেন সৌমিক নামক ওই ব্যাক্তি। তাতে হাসপাতালের স্ট্যাম্পও ছিল। বিষয়টি মিটে গেছে ধরে নিয়ে অয়ন বাড়ি চলে যান।
কিছুদিন পর বিমা কোম্পানি থেকে বাবার চিকিৎসা সংক্রান্ত টাকা পাওয়ার জন্য সমস্ত কাগজপত্র জমা দেন অয়ন। বিমা কোম্পানি আরও বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠায়। এখানেই বাঁধে গোল। অয়নের কথায়, “যতবার বিস্তারিত তথ্য চেয়ে সৌমিকবাবুকে ফোন করেছি তিনি নানান অছিলায় এড়িয়ে গিয়েছেন। এরপর হাসপাতালে যোগাযোগ করেন অয়ন। সেখানেই পর্দাফাঁস। চিকিৎসা বাবদ অয়ন যে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিল তার সিংহভাগ জমাই পরেনি হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে। কারণ চিকিৎসায় অত খরচই হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন অয়নকে জানায়, আপনার বাবার চিকিৎসায় মাত্র ৭৫ হাজার ২৪২ টাকা খরচ হয়েছে। তাহলে বাকি টাকা কোথায় গেল?
অভিযোগ জমা পরে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে। খোঁজ পরে সৌমিক দত্তর। সেখানেই রহস্য আরও গভীর। কিউর সেন্টার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সৌমিক দত্ত নামে কাউকে তাঁরা চেনেন না। নার্সিংহোমের ঘরে বসেই যে রোগী ধরতে অথচ টের পেল না কর্তৃপক্ষ? নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের যুক্তি, যে ঘরে বসে সৌমিকবাবু নিজেকে ম্যানেজার বলে পরিচয় দিতেন ওটা ওপিডি রুম। অনেক রোগীর পরিবারের সদস্যরাই ওখানে বসে থাকেন। যদিও নার্সিংহোমের বয়ানকে সন্দেহের চোখে দেখছে কমিশন। কমিশন চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “নার্সিংহোমের ঘরে বসে, প্রতিষ্ঠানের স্ট্যাম্প ব্যবহার করে এহেন জালিয়াতির তদন্তের দায়িত্ব ডিসি ডিডির হাতে তুলে দিয়েছি আমরা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.