ছবি: প্রতীকী।
অর্ণব আইচ: করোনা (Corona Virus) পরিস্থিতিতে যখন সারা দেশজুড়ে অক্সিজেনের বিপুল চাহিদা, তখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে অক্সিজেন সরবরাহের নামে প্রতারণার চক্র। তার আঁচ পড়েছে কলকাতায়ও। নেপথ্যে কি ফরিদাবাদ গ্যাং? রহস্যেভেদের চেষ্টায় কলকাতা পুলিশ।
সম্প্রতি পূর্ব কলকাতার সার্ভে পার্ক এলাকায় অক্সিজেন (Oxygen) কনসেনট্রেটর সরবরাহ করার নাম করে প্রতারণা ধরা পড়েছে। এই বিষয়ে সার্ভে পার্ক থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে। কিছুদিন আগেই জানা যায়, ফরিদাবাদ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে এমন একটি গ্যাংয়ের পাঁচ সদস্য, যারা অক্সিজেন কনসেনট্রেটর নিয়ে প্রতারণা চক্র চালিয়েছে। পুলিশের অভিযোগ, ফরিদাবাদ থেকেই নতুন পদ্ধতিতে এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। যদিও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর নিয়ে যারা প্রতারণা করেছে, তারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয় বলে ধারণা পুলিশের। এবার কলকাতায় যে প্রতারণার ঘটনাটি ঘটেছে, তার সঙ্গে ফরিদাবাদের গ্যাংয়ের কোনও যোগ রয়েছে কি না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, অনলাইনে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সরবরাহের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গার কয়েকশো মানুষকে প্রতারণা করে এই গ্যাংটি তুলে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। এই বিষয়ে ফরিদাবাদ পুলিশের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ আসে। ফরিদাবাদের সাইবার সেল তদন্ত করে জানতে পারে যে, এই গ্যাংয়ের মূল পাণ্ডা আলিগড়ের বাসিন্দা বিশাল, যার বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রতারণা ও জালিয়াতি ছাড়াও অন্তত ১৩টি খুন, ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার মামলা রয়েছে। বিশাল ছাড়াও এই গ্যাংয়ের বাকিরা হচ্ছে গাজিয়াবাদের নীতিশ, আলিগড়ের চন্দ্রশেখর, মুজফফরনগরের ললিত ও দিল্লির অভিনব। গত দু’মাস ধরে সক্রিয় এই গ্যাংটি। কখনও পুনে, কখনও বা মুম্বই বা দিল্লির ভুয়া ঠিকানা দিয়ে ভুয়া সংস্থার মালিক ও কর্মী বলে তারা নিজেদের পরিচয় দিত। মূলত অনলাইন বিপণির মাধ্যমে অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের ব্যবসা করেন, এমন কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করত এই গ্যাং। আবার দেশের বহু নার্সিংহোম ও হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করত তারা। দেশের বহু মানুষ করোনা পরিস্থিতিতে খোঁজ করছে অক্সিজেনের। তাঁদেরও অনেকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে আগাম টাকা পাঠালেই অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠানো হবে বলে জানাত। তাদের বিশ্বাস করে বহু মানুষ ও সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলিতে পাঠানো হত টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠাত না তারা।
সম্প্রতি পূর্ব কলকাতার সার্ভে পার্ক থানা এলাকার একটি সংস্থাও একটি প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়ে। ওই সংস্থাটির ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৭০০ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। প্রতারকদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ হয়েছিল সংস্থাটি। প্রতারকরা জানিয়েছিল যে, দিল্লি ও মুম্বইয়ে রয়েছে তাদের অফিস। তাদের মধ্যে দু’জন নিজেদের রোহিত নিচানি ও অবিনাশ বলে পরিচয় দিয়ে সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করে। নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে তাঁদের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলে তারা। প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা পাঠানোর পরও তাঁদের হাতে এসে পৌঁছয়নি ওই অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। তাই কলকাতার এই ঘটনার সঙ্গে ফরিদাবাদের গ্যাংয়ের যোগাযোগও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। সেই কারণে ওই গ্যাংয়ের সদস্যদের জেরার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.