কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: হিংস্র কুকুরকে মানুষ ভয় পায়। তাই মানসিক চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের ঘরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কুকুরদের। দমদমের শ্যামনগরে রোগীদের ভয় দেখাতে রাস্তার কুকুর লেলিয়ে রাখা হচ্ছে। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর আলোড়ন পড়ে গিয়েছে বিধাননগরে। এই চিত্র প্রকাশ্যে আসার কারণটিও অভিনব। নিখোঁজ স্বামীর খোঁজ করতে গিয়ে রিহ্যাব সেন্টারটির খোঁজ পান স্ত্রী। তাঁর দাবি, তাঁকে অন্ধকারে রেখে শাশুড়ি স্বামীকে ভরতি করে দিয়েছেন। স্বামীর মানসিক অসুস্থতার কোনও লক্ষণ তিনি টের পাননি।
বৃহস্পতিবার লেকটাউন থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন ওই গৃহবধূ। আর এই জটিল রহস্য উদঘাটন করতে নাভিশ্বাস উঠেছে পুলিশের। যদিও সরকারিভাবে লেকটাউন থানা কোনও অভিযোগ এখনও লিপিবদ্ধ করেনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে গৃহবধূকে তদন্ত শুরু করার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। ঘটনার নেপথ্যে কী রহস্য রয়েছে?
বিষয়টির সূত্রপাত গত বছরের ২৯ নভেম্বর। গৃহবধূ পাপিনা সাহা জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী সুপ্রতিম সাহা সেদিন লেক মার্কেট এলাকায় তাঁর বাপের বাড়িতে অন্যান্য দিনের মতো দুপুরে খাওয়াদাওয়া করতে আসেন। তারপর বিকেলে জিম খুলতে হবে বলে বেরিয়ে লেকটাউনের উদ্দেশে রওনা দেন। লেকটাউনের ব্লক এ-এর পি-১০৬ নম্বর বাড়িতে শ্বশুর বাড়ির একতলায় একটি জিম চালান তিনি। সেদিন তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে ফোনে স্বামী সুপ্রতিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে শাশুড়ি জ্যোৎস্নারানি দেবীর সঙ্গে কথা বলেন। রহস্য করে শাশুড়ি তাঁকে বলেন, “সময় হলে সব জানতে পারবে।” এরপর টানা কয়েকদিন স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে সুপ্রতিমের খোঁজে শ্বশুরবাড়িতে আসেন তিনি। স্বামী সেখানে ছিলেন না। বিস্তর জোরাজুরির পর শাশুড়ি তাঁকে জানান যে, মানসিক অসুস্থতার কারণে সুপ্রতিমকে শ্যামনগরের একটি রিহ্যাব সেন্টারে ভরতি করানো হয়েছে।
[ মাকে মার বাবার, রুখে দাঁড়িয়ে প্রহৃত মেয়েও ]
এরপর শ্যামনগরে যশোর রোড সংলগ্ন একটি হাসপাতালে পাপিনাকে নিয়ে যান শাশুড়ি। সেখানেও স্ত্রীকে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তারপর একটি সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হয় পাপিনাকে। তিনি জানিয়েছেন, “অপরিসর ঘরে তিনটি খাটিয়ার একটিতে সুপ্রতিমকে শোয়ানো রয়েছে। আর ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে হিংস্র চেহারার একটি কুকুর।” পাপিনার দাবি, রিহ্যাবের এক কর্মচারী তাঁকে জানিয়েছেন, এখানে অনেক ধরনের রোগী আসেন। তাঁদের পাহারার প্রয়োজন হয়। কুকুরদের মানুষ ভয় পায় বলে এগুলিকে রাখা রয়েছে। এরপর স্বামীকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে রিহ্যাব সেন্টার বাধা দেয়। পাপিনাদেবীর দাবি, রোগীদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই এবং এই বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে তাঁকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয় রিহ্যাব কর্তৃপক্ষ। এরপর তিনি আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। লেকটাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
পাপিনাদেবীর বক্তব্য, স্বামীর মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখতে পাননি তিনি। খামোকা একটি মানুষকে অসুস্থ বলার পিছনে গভীর কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে জানিয়েছেন এই গৃহবধূ। পাপিনাদেবীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা জানিয়েছেন, “এই ঘটনার তদন্তের দাবি নিয়ে আদালত পর্যন্ত যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। রিহ্যাব সেন্টারটি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কিনা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নির্দিষ্ট লাইসেন্স তাদের রয়েছে কিনা জানার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানাবেন।”
[ ভ্রূণ অসুস্থ! ২৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বার গর্ভপাতের আরজি কোর্টে ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.