গৌতম ব্রহ্ম: এনআরএস হাসপাতালের COVID-19 টেস্ট রিপোর্টে পরিষ্কার লেখা দু’জনের নাম। দু’জনেই ‘পজিটিভ’। একজনের বয়স ৪৫ বছর। বাড়ি আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকায়। অন্যজন সতেরো। বাড়ি ট্যাংরায়। কোভিড পজিটিভ হওয়ায় দু’জনকেই এনআরএস থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু যাত্রা শুরুর আগেই ‘আসামি’ ছিনিয়ে নেওয়ার ভঙ্গিতেই দুই প্রসূতিকে তাঁদের বাড়ির লোক অ্যাম্বুল্যান্স থেকে জবরদস্তি নামিয়ে নেয়। গোটা ঘটনাই পুলিশের উপস্থিতিতে ঘটেছে বলে দাবি করেছেন এনআরএসের আধিকারিকরা। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশকে অনুরোধ করেও কিছু হয়নি।
প্রসূতির পরিবার পেশির আস্ফালন দেখিয়েই প্রসূতিদের অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামিয়ে নেন। পিপিই খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেন মাটিতে। প্রসূতিদের আটকানোর চেষ্টা করলে মারধর ও ভাঙচুরের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা দেখে এনআরএসের আধিকারিকরা আর সাহস করেননি। সাংসদ তথা এনআরএসের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ডা. শান্তনু সেন জানিয়েছেন, “দু’জন রোগীই ‘রেফারাল ডিসচার্জ’ হয়ে গিয়েছিলেন এনআরএস থেকে। মেডিক্যাল কলেজ যাওয়ার পথে গেটের সামনে অ্যাম্বুল্যান্স আটকে এই ঘটনা ঘটান রোগীর পরিজনরা। স্বভাবতই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ আউটপোস্টে খবর দেয়। তারা পুলিশকে মনে করিয়ে দেয়, ট্রানজিটে থাকা ওই রোগী কিন্তু পুলিশের হেফাজতে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। গায়ের জোরে রোগীকে বাড়ি নিয়ে যান পরিজনরা।”
এনআরএসের ডার্মাটোলজি ওয়ার্ডে ‘রেফারেল ডিসচার্জ’ হওয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৮ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড রয়েছে। মেডিক্যালে যেতে না চাওয়ায় ওই দুই রোগীকে সেই আইসোলশন ওয়ার্ডে পাঠানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়। তাও শোনেননি পরিজনরা। বাধ্য হয়েই রেফারেল ডিসচার্জ বাতিল করে শুধু ‘লিভ এগেনস্ট মেডিক্যাল অ্যাডভাইস’ বা ‘লামা’ বন্ডে সই করিয়ে নেওয়া হয়। কোভিড রিপোর্টে উল্লিখিত দুটি নম্বরেই ‘সংবাদ প্রতিদিন’ যোগাযোগ করে। কিন্তু প্রত্যেকেই জানিয়ে দেয়, তাদের রোগী এনআরএসে ছিল না। এর আগে এনআরএসের ফিভার ক্লিনিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা প্রায় বারোজন রোগী উধাও হয়ে গিয়েছিল। পালিয়ে যাওয়া রোগীর মধে্য চারজনের মৃতু্য হয়। তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। সেই খবর ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ প্রকাশিত হওয়ার পর মৃত ও পলাতকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছিল স্বাস্থ্যদপ্তর। এবারও কি তাই হবে? জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন এনআরএস আউটপোস্টের অতিরিক্ত ওসি প্রভাস দাস। এদিন তাঁকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “হাসপাতালে কত রোগী আসে যায়, কোন রোগীদের কথা বলছেন বুঝতে পারছি না। আপনারা আউটপোস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।”
জানা গিয়েছে, এই দুই প্রসূতির ১৪ জুলাই সোয়াব নেওয়া হয় পরীক্ষার জন্য। ১৬ জুলাই রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসে। তার পরই এনআরেসের গাইনি ওয়ার্ড থেকে রোগীদের মেডিক্যালে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। নিয়ম মেনেই সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে পিপিই পরিয়ে প্রসূতিদের তোলা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেই ঘটে বিপত্তি। প্রসূতিদের বাড়ির লোকজন বেঁকে বসেন। সাফ জানিয়ে দেন, রোগী করোনা পজিটিভ তা তাঁরা মানছেন না। তাঁরা রোগীদের বাডি নিয়ে যাবেন। মেডিক্যালে পাঠানো যাবে না। এনআরএসের এক আধিকারিক দুই রোগীর পরিবারকেই বোঝানোর চেষ্টা করেন, এটা হয় না। এটা নিয়ম বহির্ভূতই শুধু নয়, বিপজ্জনকও। কিন্তু কোনও কথাই শোনেনি রোগীর পরিবার। গোটা বিষয়টি গাইনি বিভাগের কর্তব্যরত মেডিক্যাল অফিসার নোট দিয়ে জানিয়েছেন এনআরএসের সুপার ডা. করবী বড়ালকে। সাদা রুল টানা পাতার সেই নোটে বলা হয়েছে, গাইনির আইসোলেশন ওয়ার্ডের ১৩ ও ৪০ নম্বর বেডে থাকা রোগী কোভিড পজিটিভ হয়েছে। রোগীর পরিবার ‘লিভ এগেনস্ট মেডিক্যাল অ্যাডভাইস’ দিয়ে রোগীদের বাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.