অর্ণব আইচ: কসবার (Kasba) ভুয়ো পুরঅফিসে রয়েছে ঝাঁ চকচকে চেম্বার দেবাঞ্জনের (Debanjan Deb) দাদা কাঞ্চন দেবের। সেই চেম্বারে প্রবেশের অনুমতি ছিল না কোনও কর্মীর। দাদা অফিসে ঢুকলেই দাঁড়িয়ে পড়তে হত সবাইকে। কারণ এরকমই নির্দেশ ছিল দেবাঞ্জন দেবের।
জালিয়াতিতে সাহায্যের জন্য দাদাকে নিজের অফিসে ঝাঁ চকচকে চেম্বার তৈরি করে দিয়েছিল ভুয়ো আমলা দেবাঞ্জন দেব। ধৃতের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে ওই চেম্বারটি চোখে পড়ে লালবাজারের (Lalbazar) গোয়েন্দাদের। ওই চেম্বারের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু ভুয়ো নথি। তাতেও গোয়েন্দাদের সন্দেহ, কাঞ্চন দেব দেবাঞ্জনের জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত। গ্রেপ্তারির পর এই ব্যাপারে কাঞ্চন দেবকে জেরা শুরু করে লালবাজারের ‘সিট’। কসবার রাজডাঙায় ভুয়ো পুরকর্তা যে ভুয়ো পুরসভার অফিস খুলে বসেছিল, সেখানকার কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা। কর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন যে, গত কয়েক মাস আগেই এই পুর অফিসে নিয়ে আসা হয় কাঞ্চনকে। কর্মীদের দেবাঞ্জন দেব বলেছিল, কাঞ্চন দেব আসলে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের এক কর্তা। ভোটের আগে ৬ মাসের জন্য কাঞ্চনকে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর থেকে ডেপুটেশনে পুরসভায় ‘কন্ট্রোলিং অফিসার’ হিসাবে নিয়ে আসা হয়েছে। ওই অফিসে একটিমাত্র চেম্বার ছিল। সেটি দেবাঞ্জনের। কাঞ্চন যোগ দেওয়ার পর তার জন্য আরও একটি চেম্বার তৈরি করা হয়। তাতে বসানো হয় আলাদা বাতানুকূল যন্ত্র। ছিল কম্পিউটার। অফিসের মধ্যে প্রচণ্ড গম্ভীর হয়ে থাকত কাঞ্চন। তার সঙ্গে কারও কথা বলা বারণ ছিল। তার চেম্বারেও কোনও কর্মীর প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কখনও কাঞ্চন নিজে দেবাঞ্জনের চেম্বারে যেত।
পুলিশের অনুমান, ওই দু’টি চেম্বারেই নিত্যনতুন জালিয়াতির ছক কষা হত। ভুয়া টিকাকরণ ক্যাম্প পরিচালনা নিয়েও আলোচনা করা হত সেখানেই। তাদের এই ছক যাতে অফিসের অন্য কর্মীরা না জানতে পারেন, তার জন্যই কাঞ্চনকে বলা হত কারও সঙ্গে কথা না বলতে। দেবাঞ্জনের নির্দেশ ছিল, কাঞ্চনকে যেন অত্যন্ত সম্মান দেওয়া হয়। তাই সে অফিসে এলে প্রত্যেককে উঠে দাঁড়াতে হত। যদিও কর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা জানতেন না যে, কাঞ্চন দেবাঞ্জন দেবের খুড়তুতো দাদা। পুলিশ জেনেছে, কাঞ্চন দেবাঞ্জনের সঙ্গে বহুদিন আগে থেকে জালিয়াতিতে যুক্ত হলেও আগে সে অফিসে আসত না। মূলত হোয়াটসঅ্যাপ কল করেই কাঞ্চন দেবাঞ্জনকে পরামর্শ দিত, কীভাবে জালিয়াতি করা যায়। কয়েক মাস আগে ভুয়ো টিকা নিয়ে আলোচনা করতেই দেবাঞ্জন কাঞ্চনকে অফিসে নিয়ে আসে। ‘বেতন’ ছাড়াও জালিয়াতির টাকার একাংশ কাঞ্চন পেত বলে দাবি পুলিশের। সেই তথ্য জানতে কাঞ্চনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, দেবাঞ্জনের মতো কাঞ্চনেরও একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। চলছে সেগুলির সন্ধান। এদিকে, ‘সিট’এর হাতে ধৃত শান্তনু মান্না অফিস পরিচালনা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। দেবাঞ্জন দেবের নাম করেই সে অন্য কর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশ দিত। এই ব্যাপারে আরও তথ্য জানতে দেবাঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গে কাঞ্চন ও শান্তনুকে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.