অর্ণব আইচ: পাসপোর্ট জালিয়াতিতে সর্ষের মধ্যেই লুকিয়ে ভূত! উপর মহল থেকে নিচের তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে দুর্নীতির জাল। ফেল কড়ি মাখ তেল, কায়দায় চলে অবৈধ নথি তৈরির ‘চেইন’ ব্যবসা। একটি জাল পাসপোর্ট বানালে কে পায় কত টাকা? তদন্তে উঠে এল সেই বখরার হিসেব।
জানা গিয়েছে, ভুয়ো নথি দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করতে একজন অনুপ্রবেশকারীর খরচ হয় আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা। চক্রের মাথা মনোজ গুপ্তা ও সমরেশ বিশ্বাস সেই টাকা থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ করত চক্রের অন্য সদস্যদের জন্য। বাকি দুলক্ষ টাকা শতাংশ হিসেবে ভাগ করে নিত নিজেদের মধ্যে। পাসপোর্ট সেবাকেন্দ্রের অস্থায়ী কর্মী তারকনাথ সেনের জন্য পাসপোর্ট পিছু বরাদ্দ ছিল ৫-৬ হাজার টাকা। এক-একটি পাসপোর্ট সমরেশের হাতে তুলে দেওয়ার বিনিময়ে ডাক বিভাগের অস্থায়ী কর্মী দীপক মণ্ডল পেত ৩ হাজার টাকা। মোক্তার আলম যে বাংলাদেশি নাগরিকদের সমরেশ ও মনোজ গুপ্তার কাছে হাজির করত, সে পেত আড়াই থেকে চার হাজার টাকা।
এদিকে মনোজ গুপ্তার ট্রাভেল এজেন্সির সংস্থায় চাকরি করত দীপঙ্কর দাস। তার বেতন ছিল ২৫ হাজার টাকা। সেই টাকার মধ্যেই ছিল ভুয়ো নথি তৈরির বখরাও। এছাড়াও বনগাঁ, বসিরহাটে আরও বেশ কয়েকজন আছে যারা সমরেশ ও মনোজের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তারা মূলত আধার কার্ড জাল করা বা আধার অফিস থেকে আধার তৈরির কাজ করে দিত। তাদের বরাদ্দ ছিল সাত থেকে দশ হাজার টাকা। তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, সাব এজেন্টদের জন্য হাজার থেকে দুহাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। আবার প্রাক্তন পুলিশ কর্মী আব্দুল হাই, যে ভেরিফিকেশনের ঝঞ্ঝাট সামলে দিত, সে পেত পাসপোর্ট পিছু ২৫ হাজার টাকা। এজেন্ট হিসেবে কাজ ধীরেন ঘোষ, যার দায়িত্ব ছিল ভিসার ব্যবস্থা করা তাকে দেওয়া হত সাত থেকে দশ হাজার টাকা। যার মধ্যে থেকে সে ভিসা অফিসের বেয়ারাদের কিছু টাকা দিত। এভাবেই উপর থেকে নিচে টাকা ছড়িয়ে একের পর এক জাল পাসপোর্ট বানিয়ে চলেছে মনোজ-সমরেশরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.