রাহুল চক্রবর্তী: পথ দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই ‘ব্রেন ড্রেথ’ হয়েছে। চারটি কিডনি ডোনেট করা হবে। সত্বর যোগাযোগ করুন। দেওয়া হল ডাক্তার সন্দীপকুমার গর্গ ও পরিবারিক ব্যক্তি সুবীর চক্রবর্তীর ফোন নম্বর।
দিনভর হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরল এই মেসেজ। শহর-শহরতলির মানুষ জনস্বার্থে এই মেসেজ ছড়িয়ে দিলেন পরিচিত ব্যক্তি, বিভিন্ন গ্রুপে। কিডনির খোঁজে সারাদিন হন্যে হয়ে ঘুরল অসুস্থ রোগীর লোকজন। কোথায় পাওয়া যাবে এই কিডনি? হাসপাতালে হাসপাতালে খোঁজ শুরু করলেন রোগীর পরিবারের আত্মীয়-পরিজন। সুযোগ বুঝে একসঙ্গে চারটি কিডনি পেতে থাবা বসানোর চেষ্টা করল পাচারকারীরাও। এমনকী, ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়া রোগীর পরিবারের মানবিক আবেদন দেখে এগিয়ে এলেন অনেকেই। সাহায্যের জন্য সবরকমভাবে চেষ্টা করলেন। কিন্তু দিনের শেষে নিরাশ সকলেই। যোগাযোগের জন্য দেওয়া দুটি নম্বরের মালিকরা ফোন তুললেন না।
[ পড়শির কুনজর হটাতে ফসলভরা খেতের পাশে সানির খোলামেলা ছবি ]
কী ঘটেছিল?
সোমবার, মঙ্গলবার শহর-শহরতলির মানুষের মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। ওই মেসেজটা ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় লেখা ছিল। যাতে লেখা ছিল, ‘চারটি কিডনি পাওয়া যাবে। মিস্টার সুধীর ও তাঁর স্ত্রী পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। চিকিৎসক দু’জনেরই ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করেছেন। সুধীরবাবুর বি-পজেটিভ ও তাঁর স্ত্রীর ও-পজেটিভ রক্তের গ্রুপ। মানবিকতার জন্য তাঁদের পরিবার স্বামী-স্ত্রীর চারটি কিডনিই ডোনেট করতে চান। কেউ হয়তো উপকৃত হবেন, তাই যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর দেওয়া হল।’ যে দু’টি নম্বর দেওয়া হয়েছিল, তার একটি নম্বর ছিল সুবীর চক্রবর্তী নামে জনৈক ব্যক্তির। আর একটি নম্বর ছিল সন্দীপকুমার গর্গ নামে একজনের। দু’জনের মোবাইলেই দিনভর ফোন করতে থাকেন সাধারণ মানুষজন। সকলেরই খোঁজ চলে কিডনির জন্য। কিন্তু অভিযোগ এমনটাই, কেউই ওই দু’টি নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করতে পারেননি। খবরের স্বার্থে সুবীর চক্রবর্তীর মোবাইলে বার তিরিশেক ফোন করেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। নম্বরটি চালু থাকলেও তিনি ফোন তোলেননি।
[ মদের আসরে হাত-পা বেঁধে বান্ধবীকে যৌন নির্যাতন, চাঞ্চল্য সোনারপুরে ]
ইন্টারনেটে ঘেঁটে দেখা যায় সন্দীপকুমার গর্গ একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। উত্তরপ্রদেশের মীরাট শহরে গত ১৮ বছর ধরে তিনি চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। নেফ্রোলজিতে স্পেশালিস্ট। কিন্তু তাঁর নাম, ফোন নম্বর কীভাবে একটি মেসেজে দেওয়া হল? চারটি কিডনি ডোনেটের বিষয়টি সম্পর্কে তিনিই বা কী জানেন? এসবের উত্তরের জন্য ডাক্তার সন্দীপ গর্গের মোবাইলে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি। কখনও আবার ফোন কেটে দেন। মুহূর্তেই তাঁর মোবাইল থেকে মেসেজ আসে, “কিডনি পাওয়া যাবে বলে যে পোস্টটি বেরিয়েছিল, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কিছু ধান্দাবাজ লোক একটি মেসেজ লিখে তা লোকজনদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে। দয়া করে এটাকে এড়িয়ে চলুন।” কিডনির জন্য এমন মেসেজ কে ছড়িয়ে দিয়ে থাকতে পারে, তা ডাক্তার গর্গের কাছ থেকে বিশদে জানা যায়নি। কারণ তিনি ফোন তোলেননি বা এসএমএসেরও উত্তর দেননি।
[ প্যারিসে বাঙালি বিজ্ঞানীর রহস্যমৃত্যু, দেহ ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ পরিবার ]
তবে এই ধরনের মেসেজ জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে, তা বলাই বাহুল্য। মাঝেমধ্যেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে দেখা যায়, একটি শিশু পাওয়া গিয়েছে, যোগাযোগ করুন। কিন্তু পুরোটাই ফেক বা মিথ্যা হয়, পরে তা জানা যায়। এক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে বলে মনে করছেন শহরের বিশিষ্ট কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। রাজ্যে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ডাক্তার অদিতিকিশোর সরকার বলেন, “বিজ্ঞাপন বা মেসেজ দিয়ে কিডনি পাওয়া যাবে, এমনটা কখনওই হতে পারে না। কিডনি বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। ওই মেসেজটি সম্পূর্ণ ফেক।” ডাক্তার সরকার সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দিয়েছেন, ওই ধরনের এসএমএস পেলে কোনও অবস্থায় প্রভাবিত হবেন না। গুজব বলেই উড়িয়ে দেবেন। বিভ্রান্ত হবেন না। তবে একজন ডাক্তারের নাম ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে নিছক মজা করা বা কোনও কারণ থাকতে পারে অনেকেই মনে করছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.