শুভময় মণ্ডল: পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইন্ধনে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে কর্মক্ষেত্রে। বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে মিলি আল আমিন কলেজের টিচার-ইন-চার্জের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্তও জানিয়ে দিলেন বৈশাখীদেবী । সাংবাদিক বৈঠকে শোভনকে পাশে বসিয়ে বৈশাখী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আরজি জানালেন, “দয়া করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে রাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িকতার রং লাগতে দেবেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ‘দিদিকে বলো’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু করেছেন। আজ আমি সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে সেই দিদিকেই বলতে চাই, যেভাবে আমি অন্যায়ের শিকার হয়েছি তার বিহিত করুন।”
একসময় তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বৈশাখী। দলের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দূরত্ব তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনিও রাজ্যের শাসকদলের বিরাগভাজন হন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি মিলি আল আমিন কলেজের টিচার-ইন-চার্জ পদে কাজ করছিলেন। বৈশাখীর দাবি, মিথ্যা অভিযোগ তুলে হেনস্তা করছেন ওই কলেজেরই প্রাক্তন টিচার-ইন-চার্জ সাবিনা নিশাত ওমার। ওই শিক্ষিকা নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ এনেছেন। বৈশাখীর দাবি, ওমারের আনা সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইন্ধনে তাঁকে হেনস্তা এবং অপদস্থ করা হচ্ছে। একথা বলার সময়ই কান্নায় ভেঙে পড়েন মিলি আল আমিন কলেজের অধ্যাপিকা। রীতিমতো ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন তিনি।
বৈশাখী বলেন, “যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আমি এত শ্রদ্ধা করতাম, তাঁর ইন্ধনেই এমনটা হচ্ছে। আমি হতবাক। পার্থদা ২৩ জুলাই শোভনদার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন। সেদিনই আমি পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করি। উনি আমাকে আশ্বস্ত করেন। বলেন, আমি থাকতে কোনও অপমান হবে না, কেন তুমি পদত্যাগ করতে চাইছ? অথচ তাঁর নির্দেশেই এসব হচ্ছে! আমি হিন্দু হয়েও এতদিন এই কলেজে রয়েছি, কোনওদিন সাম্প্রদয়িকতার অভিযোগ ওঠেনি। এখন হঠাৎ কেন উঠবে? কালই আমি ভিসির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “সিপিএম জমানায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, আমি তৃণমূল করি। রাজ্যে পরিবর্তনের পর বলা হত, আমি সিপিএম।এখন বলা হচ্ছে আমি আরএসএস-বিজেপি ঘেঁষা। বারবার এইভাবে আমি লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছি।” এদিন তাঁর এই পদত্যাগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ান কলেজের অন্যান্য অধ্যাপক ও শিক্ষাকর্মীরা। তাঁরা একযোগে সংবাদমাধ্যমের সামনে বৈশাখীদেবীকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেন। এবং বলেন, তাঁরা সবাই এই লড়াইয়ে বৈশাখীদেবীর পাশে রয়েছেন।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শোভনবাবুও। তিনি বলেন, “পুরো সিদ্ধান্তটাই বৈশাখীর নিজের। আমার চাপিয়ে দেওয়া নয়। আমি বন্ধু হিসেবে এই সিদ্ধান্তের পাশে থাকব। তবে, এটা কোনও ছোটখাট ব্যাপার নয়। এর পিছনে গভীর রাজনীতি রয়েছে। সরকার এবং শিক্ষা দপ্তরের পুরো ব্যপারটি খতিয়ে দেখা উচিত, এবং তদন্তের ব্যবস্থা করা উচিত।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.