স্টাফ রিপোর্টার: সর্বনিম্ন ভাড়া ১২ টাকা। বাসে দাঁড়ানো ‘নট অ্যালাউড’। যতগুলি সিট, ততজনই যাত্রী উঠবেন এই বাসে। মানে ‘ই’ বা এগজিকিউটিভ বাসের কথা হচ্ছে। যেখানে সাধারণ সরকারি বাসে ভাড়া ৮ টাকা। সেখানে ‘ই’ বাসে উঠে যাত্রীকে গুনতে হয় ১২টাকা। কারণ গোটা যাত্রাপথে তাঁকে দাঁড়াতে হবে না। বাসও স্টপেজ দেবে না সব জায়গায়।
কিন্তু কে শুনছে কার কথা! নিয়ম না মেনেই ই বাসেও অতিরিক্ত যাত্রী তুলছেন কন্ডাক্টর। ভাড়া অতিরিক্ত দিয়ে সেই বাসেই ঝুলতে ঝুলতে যাচ্ছেন যাত্রীরা। বেশিরভাগ যাত্রীই বুঝতে না পেরে সাধারণ বাস ভেবে ‘ই’তে উঠে গুনছেন অতিরিক্ত ভাড়া। ফলে নিত্য বাধছে ঝামেলা। অথচ সেই অর্থে বিশেষ কোনও সুবিধাই পাচ্ছেন না যাত্রীরা। বিষয়টি যে কানে এসেছে তা জানিয়েছেন ডব্লুবিটিসি-র এক কর্তাও। তাই এই ‘ই’ বাসের বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও এবার নয়া পরিকল্পনা আনছেন। যে রুটের এক্সিকিউটিভ বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাকে সাধারণ বা এস বাস করে দেওয়ারও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
ই-৩২। নীলগঞ্জ ডিপো থেকে বিটি রোড হয়ে হাওড়া যায় এই রুটের বাস। নূন্যতম ভাড়া ১২ টাকা। নিয়ম সিট অনুযায়ী যাত্রী তুলতে হবে। কিন্তু সেই বাসেই কখনও কখনও দেখা যায় বাদুড়ঝোলা ভিড়। ভাড়া দিতে গিয়েই বাধে অশান্তি। যাত্রীরা সাধারণ সরকারি বাসের নিয়মেই আট টাকা ভাড়া দেন। দূরত্ব বেশি হলে ৯, ১০, ১১ টাকাও। কিন্তু কন্ডাক্টর জানিয়ে দেন, বাসের টিকিট শুরুই হয় ১২ টাকা থেকে। দূরত্ব বাড়লে ভাড়াও হয় ১৫-১৬ টাকা। বা তারও বেশি। কারণ, জিজ্ঞেস করলে কন্ডাক্টর জানান, এটা ‘এগজিকিউটিভ’ বাস। তাই ভাড়া সাধারণ বাসের তুলনায় বেশি। নামে এগজিকিউটিভ হলেও সিট মিলছে না কেন? কন্ডাক্টরের অবশ্য তাতে কোনও উত্তর নেই। তাঁর সাফাই, “যাওয়ার হলে চলুন, না হলে নেমে যান।” পরিবহণ দপ্তরের কর্তাদের কথায়, চালক ও কন্ডাক্টরদের একটা ফিক্সড মাইনে থাকলেও টিকিট বিক্রির উপর একটা কমিশন পান তাঁরা। তাই তাঁরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই যাত্রী তোলেন।
অন্যদিকে, নিত্যযাত্রী ছাড়া অন্যান্যরাও বুঝতে না পেরে এই সরকারি বাসে ওঠেন। সিট না পেলেও তাঁদের অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়। এটা ঠিক নয়। আসলে কম ভাড়া নেওয়াও তো সম্ভব নয়। কারণ এই বাসের টিকিট শুরুই ১২ টাকা থেকে। তাই মাঝেমধ্যেই ভাড়া নিয়ে কন্ডাক্টরের সঙ্গে যাত্রীর ঝামেলার খবর আসে। বর্তমানে শহরে ই-ওয়ান, ই-ফোর, ই-২৬, ই-৩২ র মতো বেশ কিছু জনপ্রিয় রুট রয়েছে। যেখানে এই এগজিকিউটিভ বাস চলাচল করে। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ই-১ এবং ই-৩২। ই-১ হাওড়া থেকে যাদবপুর যায়। আর ই-৩২ নীলগঞ্জ থেকে যায় হাওড়া। পরিবহণ দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, “আমি নিজেও বিষয়টি দেখার জন্য ই-৩২ বাসে চড়েছি। হাতেনাতে প্রমাণ পেয়েছি। কন্ডাক্টর প্রচুর যাত্রী তুলতে তুলতে আসেন। এটা বেআইনি। তবে ই-ওয়ান বা ই-ফোর বাসে এই ধরনের ঘটনার অভিযোগ পাইনি।”
দপ্তরের অন্য এক কর্তা জানান, “নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া এবং তাঁদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া কাটা বেআইনি। তাই এই ধরনের অভিযোগ যদি এগজিকিউটিভ বাসের ক্ষেত্রে আসে, তা আমরা খতিয়ে দেখব। চালক-কন্ডাক্টরকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। এবং সেই ই-বাসকে ‘এস’ বাস বা সাধারণ বাস করে দেওয়া হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.