রাহুল চক্রবর্তী: পদের লোভ দেখিয়ে এক নেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক (সাংগঠনিক) অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায় সোমবার যোগ দিলেন কংগ্রেসে। এদিন বিধান ভবনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের হাত থেকে কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন তিনি। গেরুয়া শিবিরের দীর্ঘদিনের নেতা তথা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রচারকের কংগ্রেসে যোগদান স্বভাবতই রাজনৈতিক মহলের পারদ চড়িয়েছে। বিদগ্ধদের মতে, এ যেন নদীর উলটো খাতে বওয়া। কিন্তু অনেক প্রদেশ নেতা এটাও বলছেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় যদি নাগপুরে সংঘের সমাবর্তনে যোগ দিতে পারেন তাহলে এ আর এমন কী ব্যাপার! কংগ্রেসে যোগ দিয়েই এদিন সভাপতি রাহুল গান্ধীর সম্পর্কে প্রশস্তি শোনা গেল অমলেন্দুবাবুর মুখে। প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর, বিজেপির মতো এখানেও তাঁকে দলের সংগঠনের বড় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সিপিএম নেতা আবদুস সাত্তারের পর গেরুয়া শিবিরের নেতা দলে যোগ দেওয়ায় স্বভাবতই হাওয়াবদল প্রদেশ কংগ্রেসে।
দীর্ঘদিন রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ সামলেছেন। বলা হয়, বঙ্গ বিজেপির সব হাঁড়ির খবর জানতেন তিনি। দলীয় সংগঠনের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। তারপর তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় পদে বসানো হয় তাঁরই সহকারী সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে। তখন থেকেই দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর চোরাগোপ্তা সংঘাতের কথা রটছিল। তারপর বিজেপির এক প্রাক্তন নেত্রীর সঙ্গে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিনের পর দিন সহবাসের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারও করা হয় অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে। গত বছর সেপ্টেম্বরে দিল্লির দেশবন্ধু নগরে সংঘেরই পঞ্চায়েত সংক্রান্ত একটি দপ্তর থেকে লালবাজারের গোয়েন্দারা তাঁকে গ্রেপ্তার করেন। রাজ্য বিজেপির ওই প্রাক্তন নেত্রী বেহালা মহিলা থানায় অমলেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং পদ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ করেন। তদন্তের দায়িত্ব নেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই গোয়েন্দারা অমলেন্দুকে গ্রেপ্তার করেন। এদিন তিনি সেই ঘটনারই উল্লেখ করে বলেন, এক নেত্রীকে শহরের অভিজাত হোটেলে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন বিজেপির দুই কেন্দ্রীয়স্তরের শীর্ষ নেতা। সেদিন ওই মহিলাকে রক্ষা করেছিলেন তিনি। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ইদানীং দলে কোণঠাসা করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ তাঁর। দলীয় নেতাদের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির প্রতিবাদ করাতেই পদ খোয়াতে হয়েছিল বলে দাবি তাঁর। সর্বভারতীয় দলেই যোগ দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। তাই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
কঠিন সময়ে দলের নেতারা পাশে দাঁড়াননি। এমনকি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধারাও কোথাও কোনও প্রতিবাদ করেননি বলে আক্ষেপ ছিল প্রবীণ সংঘ প্রচারকের। কিছুদিন ধরেই কংগ্রেসে যোগ দেবেন জল্পনা রটছিল। এদিন সেই জল্পনা সত্যি করে ‘হাত’ ধরলেন অমলেন্দুবাবু। কথায় আছে না, রাজনীতিতে সবই সম্ভব। কট্টর আরএসএস নেতার কংগ্রেসে গমন যেন সেই প্রবাদকেই ফের উসকে দিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.