স্টাফ রিপোর্টার: আবাসনের ছাদ থেকে মরণঝাঁপ দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মীর মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল দক্ষিণ কলকাতার যোধপুরপার্ক এলাকায়। মৃতের নাম অসীম মুখোপাধ্যায় (৭৫)। তাঁর এক মেয়ে ও স্ত্রী থাকেন বেঙ্গালুরুতে। গোবিন্দপুর রোডে পাঁচতলা ওই আবাসনে একাই থাকতেন অসীমবাবু। তিনি নিজেই ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন, না কি কেউ ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে? অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মীর মৃত্যুতে এমনই নানা প্রশ্ন উঠছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে লেক থানার পুলিশ।
অন্যদিনের মতো শনিবার সকালে পরিচারিকা এসেছিলেন। প্রাতঃরাশ বানিয়ে অসীমবাবুকে দিয়ে আসেন পরিচারিকা। এরপর তিনি ঘরের অন্যান্য কাজ করছিলেন। ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে আটটা। আচমকাই বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে আবাসন। দৌড়ে বারান্দায় এসে পরিচারিকা দেখেন নিচে পড়ে রয়েছে অসীমবাবুর রক্তাক্ত দেহ। ছুটে আসেন পাড়া পড়শিরা। খবর দেওয়া হয় লেক থানায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরই প্রৌঢ়ের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় তদন্ত।
আবাসনের বারান্দা গ্রিল দিয়ে ঘেরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিচারিকা যখন কাজ করছিলেন সে সময় ছাদে চলে গিয়েছিলেন অসীমবাবু। ছাদের দরজায় তালা লাগানো ছিল না। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, সেখান থেকেই মরণঝাঁপ দেন অসীমবাবু। বেঙ্গালুরু থেকে অসীমবাবুর মেয়ে জানিয়েছেন, “বাবা গত ছ’মাস ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের ওষুধ খাচ্ছিলেন। বাইরের কারও সঙ্গে খুব একটা কথা বলতো না।”
গোটা ঘটনায় বাকরুদ্ধ দীর্ঘদিনের পুরনো পরিচারিকাও। তাঁর কথায়, “দাদা এই সময়টায় ছাদে যায় না। সাধারণত বিকেলের দিকে যায়। আজ কখন পা টিপে টিপে ছাদে উঠেছে খেয়ালও করিনি।” প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, আগে থেকেই ঝাঁপ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন ওই প্রৌঢ়। তবে তার ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি। এদিকে শহরে ক্রমশ বাড়ছে প্রবীণ আত্মহত্যার ঘটনা। এই মরণঝাঁপকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে রাজি নন মনোবিদরা। মনোবিদ ডা. সাগ্নিক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সারা দেশেই ক্রমশ বাড়ছে একাকী মানুষের সংখ্যা। অসীমবাবুর আত্মহত্যার পিছনে তাঁর একা থাকাকেই কারণ বলছেন মনোবিদরা।
ডা. সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়ের কথায়, উনি আবাসনে একাই থাকতেন। বাইরেও বেরোতেন না। এমন মানুষদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কম। মনের ভিতর অভিমান, কষ্ট, জমা হলেও কাউকে বলতে পারেন না। সেখান থেকেই এক সময় তৈরি হয় নিজেকে শেষ করে দেওয়ার প্রবণতা। পরিচারিকা জানিয়েছেন ঘরে দরজা বন্ধ করেই রাখা হতো অসীমবাবুকে। এমন সিদ্ধান্ত মানসিক অবসাদ আরও বাড়িয়ে দেয় বলেই জানিয়েছেন মনোবিদরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.