বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: তরতাজা নবশক্তি নয়, সেই বুড়ো হাড়ই ভরসা বামপন্থীদের। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্রিগেড সমাবেশে সবেধন নীলমণি হিসেবে কানহাইয়া কুমারকে এনে তরুণ প্রজন্মকে কিছুটা কাছে টানার পরিকল্পনা করেছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। কিন্তু অসুস্থতার জন্য কানহাইয়াও গরহাজির। অগত্যা ঘুরেফিরে হৃত সমর্থন পুনরুদ্ধারে ফ্রন্টফুটে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পক্ককেশের নেতৃবৃন্দই। তাই রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিতে নিতেও দলের অনুরোধ এবং অবশ্যই দল, আদর্শের প্রতি নিজের একান্ত আবেগ, আনুগত্য থেকে ফিরে এলেন প্রকাশ্য সমাবেশে। হাজির হলেন ব্রিগেডে মাঠে।
তিন বছর পর আজকের ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে আগেই দলীয় কর্মী, সমর্থকদের উদ্দেশে মুখপত্রে বার্তা দিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বু্দ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর লেখায় আশা প্রকাশ করেছিলেন, ব্রিগেডের জমায়েতে কৃষক, খেতমজুররা যেমন আসবেন, তেমনই কলকারখানার শ্রমিকরাও আসবেন। কারণ, ধান, পাট, আলু, সবজির যথাযথ দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। আবার চটকলগুলিতে অনিয়মিত উৎপাদনের জন্য শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। ব্রিগেড সমাবেশ উপলক্ষে দলীয় মুখপত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতি ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়েও প্রতিবাদী কলম উঠে এসেছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর হাতে।
ব্রিগেড শুরুর আগেই ধাক্কা বামেদের, আসছেন না কানহাইয়া
এই পরিস্থিতিতে দলের কর্মী, সমর্থকদের মনে আশা উঁকি দিতে শুরু করেছিল। তাহলে কি গৃহবন্দিত্ব থেকে বেরিয়ে ব্রিগেড মঞ্চে দেখা যাবে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের অন্যতম শক্তিশালী প্রাজ্ঞ নেতাকে? চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্রিগেডে হাজির থাকতেও পারেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এই খবরে জল্পনা আরও বাড়ছিল। রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্তও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি সম্পর্কে। শেষ লগ্নে জানালেন, তিনি আসছেন জনগণের ব্রিগেড সমাবেশে, অল্প সময়ের জন্য হলেও।
ঠাকুরনগরে মোদির জনসভায় বিশৃঙ্খলা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে চিঠি রাজ্য বিজেপির
রাজনীতি হোক বা ব্যক্তিজীবন, নিয়মানুবর্তিতা তাঁর রক্তে। এই অসময়েও ঘড়ির কাঁটা তাঁর সময়মতো চলে। ঠিক দুপুর ১টা। পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে সেই সাদা অ্যাম্বাসাডর নিয়ে বেরোলেন প্রাক্তন মু্খ্যমন্ত্রী। সঙ্গে স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। সময়মতো পৌঁছে যান ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। গাড়ির দরজা খুলে নেমে হস্তমুদ্রায় ‘ইনকিলাব’ সংকেত দিয়ে কর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়তেই বোঝা গেল, এরই অপেক্ষায় ছিলেন কাস্তে-হাতুড়ি-তারার অগণিত সমর্থক। আজকের সময়েও তিনিই বল, ভরসা। এরপর আগ্রহ ছিল, কখন বক্তব্য রাখবেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু না, সে আশা পূরণ হওয়ার নয়। অসুস্থ শরীর নিয়ে মঞ্চে উঠতে পারেননি বুদ্ধদেববাবু। মঞ্চের কাছে গাড়িতে বসেই একপ্রকার অংশ নিলেন সমাবেশে। কিছুক্ষণ শুনলেন নেতাদের বক্তব্য। মিনিট পঁয়তাল্লিশ পর ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড ছাড়লেন। সস্ত্রীক গাড়ি ঘুরিয়ে নিলেন। বুঝিয়ে গেলেন, তিনি দলের জন্য, দলও তাঁর জন্য। আজীবন বামপন্থায় যাঁর অটল বিশ্বাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.