অর্ণব আইচ: শহরজুড়ে চিহ্নিত করতে হবে ‘ব্ল্যাক স্পট’। সেইমতো বসাতে হবে সিসিটিভি ক্যামেরা। ট্যাংরার একটি ঘটনার জেরে শনিবার কলকাতা পুলিশের প্রত্যেক থানার ওসিকে এই নির্দেশ দিলেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা।
লালবাজার সূত্রে খবর, এদিন কলকাতা পুলিশের কর্তা, থানার ওসি ও গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পুলিশ কমিশনার। গত মাসে ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডে অপু দাস নামে এক যুবককে মারধর করে খুন করা হয়। অভিযোগ ওঠে তারই এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, নিহত ব্যক্তি মদ্যপ। অসুস্থতাও মৃত্যুর বড় কারণ। পরে এই ঘটনায় নিহতের আত্মীয় গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা ঘটনাস্থলে না থাকায় তদন্তের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। থানার আধিকারিকের কাছ থেকে পুলিশ কমিশনার বিষয়টি জানতে পারেন।
এ ছাড়া সম্প্রতি গোবিন্দ খটিক রোডে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় এক ব্যক্তির মৃত্যুর ফুটেজ সিসিটিভিতে না ওঠার কারণে প্রথমে ব্যাহত হয়েছিল তদন্ত। ধারাবাহিক কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কমিশনার কড়াভাবে প্রত্যেক থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তাঁরা নিজেরাই নিজেদের এলাকার জায়গাগুলি চিহ্নিত করেন, যেগুলি সিসিটিভির আওতার বাইরে। এই জায়গাগুলিকেই ‘ব্ল্যাক স্পট’ বলা হয়েছে। পুলিশ কমিশনের নির্দেশ, শহরের প্রত্যেকটি জায়গা যেন সিসিটিভির আওতায় থাকে। যাতে কোনও ঘটনা ঘটলে তার ছবি পুলিশের সামনে আসে।
সম্প্রতি সিঁথি থানায় জেরার সময় মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। অভিযুক্তদের জেরা ও পুলিশের ব্যবহার নিয়ে ইতিমধ্যে পুলিশ কমিশনার থানার ওসিদের বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশের হেফাজতে থাকা ব্যক্তি ও যাদের আটক করে জেরা করা হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে যেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কঠোরভাবে মানা হয়, তার উপর গুরুত্ব দিতে বলেছেন পুলিশ কমিশনার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক ডিভিশনের ডিসিকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তাঁরা বেশি করে থানা পরিদর্শন করেন।
কিছুদিন আগে পর্ণশ্রীতে একটি ডাকাতির ঘটনার কিনারা করেছে পুলিশ। পুলিশ কমিশনার তার প্রশংসা করেন। সম্প্রতি বেলেঘাটা থানা এলাকায় দুই মাসের শিশুকে খুনের অভিযোগ উঠেছে মায়ের উপর। তদন্ত করে পুলিশ মাকে গ্রেপ্তার করেছে। এই ঘটনাটি অফিসারদের কাছ থেকে পুলিশ কমিশনার মন দিয়ে শোনেন। কেন ওই মহিলা নিজের সন্তানকে খুন করতে গেলেন, তার মোটিভ কি ছিল, সেই বিষয়েও তিনি অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ঘটনাটি নিয়ে অফিসারদের প্রশ্নও করেন। প্রত্যেকটি ধর্ষণ ও পকসো মামলায় যেন অবশ্যই ৬০ দিনের ভিতরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়, সেই বিষয়ে পুলিশ কমিশনার গুরুত্ব দিতে বলেন। যে কোন মামলায় অপরাধীরা যাতে তাড়াতাড়ি সাজা পায় সেই বিষয়ে অফিসারদের জোর দিতে বলেছেন তিনি।
এদিন বৈঠকে ট্রাফিক পুলিশের কর্তারা পুলিশ কমিশনারকে জানান যে, টালা ব্রিজ বন্ধ হওয়ার পরেও সুষ্ঠুভাবে যান চলাচল করছে উত্তর কলকাতায়। বিশেষ যানজট হচ্ছে না। এর প্রশংসা করেন পুলিশ কমিশনার। ট্রাফিকের এক কর্তা এও জানান যে, সম্প্রতি নাকা চেকিং শহরে কম হচ্ছে। বিষয়টি শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পুলিশ কমিশনার। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, এদিন থেকেই নাকা চেকিং জোরদার করতে হবে। রাত ন’টা থেকে অন্তত রাত একটা পর্যন্ত শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে করতে হবে নাকা চেকিং। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ পাওয়ার পরই শহরজুড়ে নাকা চেকিং শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.