Advertisement
Advertisement
হ্যাম রেডিও

এক দশক ধরে নিখোঁজ, হ্যাম রেডিওর সৌজন্যে ঘরে ফিরলেন ভিনরাজ্যের প্রৌঢ়া

শহরের হাসপাতালে ভরতি ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলা।

Estrange woman returns to home with the help of HAM Radio
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:April 21, 2019 8:22 pm
  • Updated:April 21, 2019 8:34 pm  

শুভময় মণ্ডল: প্রায় একদশক ধরে নিখোঁজ। প্রতিবেশীরা ভেবেই নিয়েছিলেন মারা গিয়েছেন। কিন্তু বহু বছর পর শহরের হাসপাতালে খোঁজ মিলল তাঁর। ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা এক মানসিক ভারসাম্যহীন প্রৌঢ়াকে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করলেন অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা। হ্যাম রেডিও সংকেতের মাধ্যমে হদিশ মেলে ওই প্রৌঢ়ার বাড়ির। তারপর সেখানকার পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয় ওই মহিলার। কিন্তু কী করবেন ওই প্রৌঢ়া বাড়ি ফিরে। জানা গেল, তাঁর স্বামী এবং এক ছেলে দীর্ঘদিন আগেই মারা গিয়েছেন। আরও দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে তাঁর। তবে তাঁদেরও খোঁজ নেই। তাই সহায়সম্বলহীন ওই প্রৌঢ়া ঘরে ফিরতে আগ্রহী ছিলেন না। তবে ঝাড়খণ্ড পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক তাঁর চিকিৎসার নিয়ে তাঁকে ফের নতুন করে বাঁচার আশা জোগালেন। মানবিকতার নজির গড়ল পুলিশ ও হ্যাম রেডিও অপারেটররা।

ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানিয়েছেন, মাস দেড়েক আগে পুলিশ ওই মহিলাকে গুরুতর জখম অবস্থায় বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে ভরতি করে। কিন্তু মহিলার কথাবার্তা কিছুই বুঝতে পারছিলেন না ডাক্তাররা। ধীরে ধীরে ওই মহিলাকে সুস্থ করে তোলেন তাঁরা। কিন্তু নাম-পরিচয় কিছুই না জানতে পারা এবং তাঁর ভাষা বুঝতে না পারার জন্য উনি হাসপাতালেই থেকে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পড়ে বিপাকে। তখন এই মহিলার কথা জানতে পেরে হ্যাম রেডি সিগন্যালের মাধ্যমে মহিলার কথা জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জেলা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশায় ছড়িয়ে দেন অপারেটররা। তাতেই মেলে সাফল্য। জানা যায়, ওই মহিলার নাম ও বাড়ির খোঁজ। রানিয়া কিস্কু নামের মহিলার বাড়ি বোকারো জেলার আরাজু-সিংওয়াডিহ গ্রামে। বোকারো স্টিল সিটি স্টেশন থেকে অন্তত ৪০ কিমি দূরে অবস্থিত ওই গ্রামে খোঁজখবর করতে শুরু করেন হ্যাম রেডিও অপারেটররা। তাতেই জানা যায়, মহিলার স্বামী ও তিন ছেলে মেয়ে ছিল। তাঁদের মধ্যে স্বামী ও এক ছেলে মারা গিয়েছেন। প্রতিবেশীরাই জানান, অন্তত ১০-১২ বছর আগে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে গ্রাম ছাড়েন রানিয়া। কিন্তু কীভাবে তাঁরা বাংলায় পৌঁছে গেলেন তা ভাবনার বিষয়।

Advertisement

[আরও পড়ুন: এবার ভোটে প্রত্যন্ত এলাকায় কমিশনের মুশকিল আসান হ্যাম রেডিও অপারেটররা]

এরপর বোকারোর পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বলে জানান অম্বরীশবাবু। তখন পুলিশকর্তাই স্থানীয় ঝাড়িডিহ থানার দুই অফিসারকে পাঠান কলকাতায়। রবিবার তাঁরা এসে মহিলাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যান বোকারোর উদ্দেশে। রেডিও ক্লাবের সদস্যদের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে কুর্নিশযোগ্য। তবে ওই প্রৌঢ়া নিজের ভিটেয় ফিরে যেতে রাজি ছিলেন না। কেনই বা যেতে চাইবেন! সেখানে তো আর তাঁর কেউ নেই। তাঁর ছেলে-মেয়েরও কোনও খোঁজ নেই। কোথায় গেল তাঁরা, তা নিয়েও চিন্তিত রানিয়া। আদিবাসী ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করলেন, বেঁচে থাকার ন্যূনতম ইচ্ছাটুকুও নেই তাঁর। কিন্তু তাঁকে বোঝান পুলিশ আধিকারিক ও রেডিও ক্লাবের সদস্যরা। তাঁকে সুস্থ করে তোলার আশ্বাস দিয়েছেন খোদ বোকারোর পুলিশ সুপার। রেডিও তরঙ্গের সৌজন্যে ফের নিজের ভিটেমাটিতে ফিরে যেতে পারলেন ওই প্রৌঢ়া।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement