কৃষ্ণকুমার দাস: কে বিভ্রান্ত করছে, সিইএসসি নাকি রাজ্য সরকার? চারদিন পরও বিদ্যুৎ না পেয়ে এই প্রশ্নই জোরদার হচ্ছে দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজনের মনে। ঠিক যে সময় সিইএসসি-কে উদ্ধৃত করে টুইটারে জানানো হচ্ছে যে ১৫ টি এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক, সেই সময় কিন্তু বাস্তব চিত্র অন্য কথা বলছে। রাস্তায় নেমে বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল করার দাবিতে বিক্ষোভ তখনও চলছে। তাহলে বিভ্রান্তিটা কোথায়? কেন সব স্বাভাবিক হওয়ার কথা স্বরাষ্ট্র দপ্তরে জানাল সিইএসসি? কেনই বা পরিস্থিতির খুঁটিনাটি না দেখে স্বরাষ্ট্র দপ্তর টুইট করল? বিদ্যুৎহীন অবস্থায় চারদিন থাকার পর এসব প্রশ্নই উঠে আসছে সাধারণে মানুষ মনে।
WBSEDCL reports that major parts of the following areas have been restored power : Garia,Bansdroni,Kestopur, Baguihati, Teghoria, Salt Lake, NewTown, Barasat, Tamluk, Egra, Contai, Krishnagar,Santipur,
Ranghat, Gayespur &Kalyani.(1/2)— HOME DEPARTMENT – GOVT. OF WEST BENGAL (@HomeBengal) May 24, 2020
রবিবার দুপুর ১টার আশেপাশে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তরফে টুইট করে জানানো হয় যে যাদবপুর, সেলিমপুর-সহ দক্ষিণ কলকাতার ১৫টি এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। এও জানানো হয়, সল্টলেক-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশ, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়ার অনেকাংশেই ফিরেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। অথচ বাস্তবে দেখা গেল, বাঘাযতীন-সহ একাধিক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। টানা চারদিন ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থেকে তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। তাঁরা নেমে এসেছেন রাস্তায়। দেখাচ্ছেন বিক্ষোভ।
বাঘাযতীন মোড়ে অবরোধকারীদের হঠাতে পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকলেও, তাঁরা কার্যত নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগ। সেই কারণে রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষজন বারবার অবরোধে বাধা পড়লেও পুলিশ তাঁদের ঠিকমতো দিকনির্দেশ দিচ্ছে না। তাতে রাস্তায় বেরিয়ে বারবার বাধার মুখে পড়ছেন সাধারণ পথচারীরা। বাঘাযতীন মোড়ে কর্তব্যরত, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক পুলিশ স্পষ্টতই জানাচ্ছেন যে তাঁরা নিজেরাও এই জল-বিদ্যুৎ সমস্যার মুখোমুখি। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের এই বিক্ষোভ স্বাভাবিক। তাই তাঁদেরও বস্তুত কিছু করার নেই।
সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও একটি বিষয় নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, এতগুলো দিন ধরে এমন একটা দৈনন্দিন সমস্যা, অথচ দেখা মেলেনি কোনও জনপ্রতিনিধির। না বিধায়ক, না ওয়ার্ডের কাউন্সিলর – কেউই এসে আশ্বস্ত করেননি। এমন দুঃসময়ে তাঁরা কোথায়? এই প্রশ্নেরও উত্তর পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।
তাহলে সিইএসসি কেন সব স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার তথ্য দিল রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরে? এখানেও অভিযোগের লম্বা তালিকা। অনেকেই বলছেন, পাড়ার একদিকে বিদ্যুৎ এসেছে তো আরেক দিকে নেই। প্রভাবশালীদের এলাকায় দ্রুত ফিরেছে পরিষেবা। আর সাধারণ মানুষজন ভুগছেন। এত বিক্ষোভের জেরে বিকেলের দিকে সাংবাদিক বৈঠক করে সিইএসসি-তে বণ্টনের দায়িত্বে থাকা এক কর্তা বলেন, ”আমরা খুব কম কর্মী নিয়ে কাজ করছি। তাই সব জায়গায় এখনও পরিষেবা স্বাভাবিক করতে পারিনি। তবে দ্রুত সব ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।” আর রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের যুক্তি, ধাপে ধাপে কাজ করতে হচ্ছে, তাই একটু সময় লাগছে। যুক্তি, পালটা যুক্তি যাইই থাক, আমফানের চারদিন পরও স্বরাষ্ট্র দপ্তরের টুইট আর বাস্তব চিত্রে আকাশ-পাতাল ফারাক থাকায় ক্ষোভের পারদ চড়ছেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.